অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ: স্বপ্ন ভাঙল বাংলাদেশের

‘অলিখিত কোয়ার্টার ফাইনাল’ বলে কথা। বেনোনির উইলোমুর পার্কে আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটির বাঁক বদলেছে ক্ষণে ক্ষণে। সময়ের তালে তালে ম্যাচের মোমেন্টাম কখনো বাংলাদেশের দিকে, কখনোবা পাকিস্তানের দিকে হেলে পড়ছিল। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে পাকিস্তান।  টস জিতে আজ ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। বোলিংয়েই অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ৪০.৪ ওভারে পাকিস্তান অলআউট হয়ে যায় ১৫৫ রানে। ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে জানা গেছে, সেমিতে যেতে হলে বাংলাদেশকে ৩৮.১ ওভারে করতে হবে ১৫৬ রান।তাতেই পাকিস্তানের নেট রানরেট টপকে যেতে পারত বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত তা আর  সম্ভব হয়নি। ৩৬তম ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ জিসানকে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার মারুফ মৃধা। মৃধা বোল্ড হতেই একরাশ হতাশা ঘিরে ধরে বাংলাদেশকে। ঠিক বিপরীত চিত্র পাকিস্তান দলে। ৫ রানে জিতে সেমিতে ওঠার আনন্দে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে  পাকিস্তান।

৩৮.১ ওভারে ১৫৬ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের দুই ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি ও জিসান আলম দারুণ শুরু করেন। প্রথম ১৫ বলেই বাংলাদেশ করে   ২৬ রান। বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে। উবাইদ শাহর বলে খোঁচা দিতে যান জিসান। উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরেন পাকিস্তান উইকেটরক্ষক সাদ বাইগ। ১২ বলে ৪ চারে ১৯ রান করেন জিসান।  এক ওভার বিরতিতে এসে আবার উইকেট নিয়েছেন উবাইদ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে পাকিস্তানি পেসারের শিকার এবার শিবলি। শিবলি করেন ১১ বলে ৪ রান।  উবাইদের জোড়া ধাক্কায় বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫ ওভারে ২ উইকেটে ৩৬ রান।

উবাইদের জোড়া ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দশম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটার চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফেরান আলি রেজা। ৩০ বলে ৪ চারে ২০ রান করেন রিজওয়ান। প্রথম  ৩ উইকেটের প্রত্যেকটি আউটের ধরনই একই রকম। খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে  ক্যাচ।

১০.১ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৭ রানে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এরপর এগোতে থাকে সাবলীলভাবে। স্ট্রাইক রোটেটের পাশাপাশি আহরার আমিন ও আরিফুল ইসলাম বাউন্ডারিও মারতে থাকেন। চতুর্থ উইকেটে ৩৩ বলে ২৯ রানের জুটি গড়েন আরিফুল ও আহরার। ১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে আহরারকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন উবাইদ। এরপরই পাকিস্তান যেন বেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ক্যারিশমা দেখিয়ে দ্রুত তুলে নেয় আরও ২ উইকেট। মুহূর্তেই বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায়  ১৯.২ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৩ রান।

৬ উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক রাব্বি। সপ্তম উইকেটে শিহাব জেমস ও রাব্বির জুটিতে ৬১ বলে ৪০ রানের জুটিতে দিশা খুঁজে পায় বাংলাদেশ। জুটি গড়ার পথে ২৯ তম ওভারের প্রথম বলে ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন উবাইদ। তখন মনে হচ্ছিল, এই ক্যাচ মিসেই হয়তো বাংলাদেশ জিতে যাবে। তবে ক্যাচ মিসের আক্ষেপ উবাইদ ঘুচিয়েছেন শিহাবকে ফিরিয়ে। শিহাবের পর রাব্বি আউট হয়েছেন আলি রেজার বলে। শিহাব, রাব্বি দুজনই পাকিস্তান উইকেটরক্ষক সাদ বাইগের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়েছেন। এরপর ইকবাল হোসেন ইমন রানআউট হলে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৩১.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৭ রান। যেখানে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ থেকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে দুর্দান্ত থ্রো করেন পাকিস্তানের আজান আওয়াইস।

সেমিতে যেতে বাংলাদেশের সমীকরণ দাঁড়ায় ৩৯ বলে ২৯ রানের। বর্ষণ ও মারুফ মৃধা শেষ উইকেট জুটিতেও আশা জাগিয়েছিলেন। জয়ের প্রায় কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কাছাকাছি গিয়েই হারের বেদনায় পুড়তে হলো বাংলাদেশকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one + seven =