অনেক বিতর্ক আর সমালোচনার অচলায়তন পেরিয়ে ফেভারিট ভারত দাপটের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে নিয়েছে। আজ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নিউজল্যান্ডকে সহজেই ৪ উইকেটে পরাজিত করে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। বড় আসরের বড় ম্যাচে ৮৩ বলে ৭৬ রান করা অধিনায়ক রোহিত শর্মা আবারো ম্যাচ সেরার পুরুস্কার সহ আরো একটি আইসিসি আয়োজিত বৈষয়িক টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের গৌরব তিলক অর্জন করলো। টস জয়ী নিউজিলান্ড ঘূর্ণি উইকেটে মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক ২৫১/৭ রান করেছিল। ২৫২ রানের সেই টার্গেট পেরুতে ভারতকে ৪৯ ওভার খেলতে হয়। তবে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান করা ভারতের জয়কে অনায়াস লব্ধ বলা যেতে পারে। প্রশ্ন থাকবেই একমাঠে, একই শহরে খেলে ভারতের সুবিধা পাওয়ার প্রসঙ্গ। কিন্তু টুর্নামেন্টে গ্রূপ পর্যায়ে ৩ টি, সেমী ফাইনাল এবং ফাইনালে ২টি ৫ ম্যাচে ধারাবাহিক সহজ জয় অর্জনের পর ভেন্যু এবং পরিবেশ নিয়ে বিতর্ক তোলা অপ্রাসঙ্গিক মনে করার যুক্তিও অস্বীকার করা সঙ্গত হবে না।
কাল কিন্তু এই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় বারের মত নিউজিল্যান্ড ভারতের মোকাবিলা করলো। আর স্পিন সহায়ক উইকেটে দুবারই ভারতের উঁচু মানের চতুর্মুখী স্পিন আক্রমণ বিশেষত রহস্য স্পিনার ভারুন চক্রবর্তী আর লেগ স্পিনার কুলদীপ যাদবের রহস্য ভেদ করতে বার্থ হয়েই আত্মসমর্পণ করলো ব্লাকক্যাপ্সরা। দুবাই এই উইকেটে অপ্রতিরুদ্ধ ভারত যোগ্য দল হিসাবে শিরোপা জয় করেছে।
কাল কিন্তু টস জয় করে নিউজিল্যান্ড সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ৭.২ ওভারে ৫৭ রান তুলে নিয়ে চমৎকার শুরু করেছিল রাচীন রাভিন্দ্রা আর উইল ইয়ং জুটি। কিন্তু ভারুন এবং যাদব আক্রমণে আসার পর পাল্টে গেলো পাশার দান। ব্ল্যাক ক্যাপস মিডল অর্ডার ভারতের উঁচুমানের চার স্পিনারকে সামাল দিয়ে রানের গতি বজায় রাখতে বার্থ হলো। ১০-৪৫ এই মিডল ওভার গুলোতে মাত্র ১৪২ রান যোগ করতেই ৪ জন ইনফর্ম ব্যাটসম্যানের উইকেট খোয়ানোর পর শেষ চার ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েল (৫৩*) বীরত্বে ব্ল্যাক ক্যাপ্স স্কোর দাঁড়ায় ২৫১/৬। যেহেতু ফাইনাল তদুপুরি স্পিনিং উইকেটে এই রান ভারত দলের জন্য মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক ছিল। টপ অর্ডারে ড্যারিল মিচেল (৬৩) আর টুর্নামেন্ট সেরা রাচীন রবীন্দ্র (৩৭) ছাড়া কারো ব্যাট কাল হাসে নি। টপ অর্ডারে কেন উইললাইমসন স্বভাব সুলভ মূর্তিতে জ্বলে উঠলে কাল ২৭০-২৮০ রান হতে পারতো। কিন্তু যা হয় নি তা নিয়ে হা হুতাশ করে কি লাভ?
রোহিত শর্মা (৭৬) এবং শুভমান গিল (৩১) প্রথম উইকেট জুটিতে ১৮.৪ ওভারে ১০৫ রান তুলে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিলো। বিশেষত পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে নিজের ছায়ায় থাকা কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান ফাইনালের মত বড়ো ম্যাচে নিজের মূর্তিতে সক্রিয় হয়ে আবারো প্রমান রাখলো ফর্ম ইজ টেম্পোরারি ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। কাল ব্যাট হাতে বার্থ হয়েছে বিরাট কোহলি। কিন্তু শ্রেষ আয়ার (৪৮), আক্সার প্যাটেল (২৯), কে এল রাহুল (৩৪) সবাই দলের জয়ে ভূমিকা রাখায় ৪৯ ওভার খেলে ভারত জয়ের লক্ষ পেরিয়ে ২৫৪/৬ করে আরো একটি শিরোপা জয় করে। রোহিত শর্মা ম্যাচের সেরা এবং পুরো টুর্নামেন্ট অনবদ্দ ব্যাটিং করা রাচীন রাভিন্দ্রা টুর্নামেন্ট সেরা বিবেচিত হয়।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া সব কিছু জয় হয়ে গেলো রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির। দেখতে হবে কিম্বদন্তীদের কি বিদায় মুহূর্ত এসে গেলো? নির্দ্বিধায় বলতেই হবে এই টুর্নামেন্টে ভারত ছিল অপ্রতিদ্বন্দী দল। টুর্নামেন্ট জয়ের সকল রসদ ওদের সঞ্চয়ে ছিল। হয়ত ভারত পাকিস্তানে না যাওয়ার একগুঁয়েমি না করলেও পারতো। ঘটনাটি ভারতের জয়ের চাঁদে কলঙ্ক হয়ে থাকবে। তবুও শিরোপা জয়ী ভারতকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড (দু বার) এবং অস্ট্রেলিয়া কেউ ওদের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না।