অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া

ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ডের মালিক হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪২৮ রানের পাহাড় সমান স্কোর করে দুর্দান্ত জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে প্রোটিয়ারা। টানা দ্বিতীয় জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা।  তবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ নিতে চায় অস্ট্রেলিয়া। লখনৌতে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।

বিশ্বকাপের আগ মুর্হূতে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে  পিছিয়ে পড়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ ব্যবধানে  পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে  দক্ষিণ আফ্রিকা। ঐ সিরিজের আত্মবিশ্বাস বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই কাজে লাগায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

নয়া দিল্লিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন কুইন্টন ডি কক-রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও আইডেন মার্করাম। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম একই ইনিংসে তিন ব্যাটারের সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড হয়। ডি ককের ১০০, ডুসেনের ১০৮ ও মার্করামের ১০৬ রানের সুবাদে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৪২৮ রান করে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে  দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর শ্রীলংকাকে ৩২৬ রানে অলআউট করে দিয়ে ১০২ রানে ম্যাচ জিতে নেয় প্রোটিয়ারা।

অসাধারন পারফরমেন্সে বিশ্বকাপ শুরুর পর ফুরফুরে মেজাজে থাকা  দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিপক্ষ। দলের ওপেনার ডি কক বলেন, ‘শ্রীলংকার বিপক্ষে অসাধারন ব্যাটিং পারফরমেন্স ছিলো আমাদের। বোলিংও ভালো করেছি আমরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ব্যাটিং-বোলিংয়ে জ্বলে উঠতে হবে আমাদের। অস্ট্রেলিয়াকেও এক বিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে  অসিদের ধরাশায়ী করতে প্রস্তুত আমরা।’

অন্যদিকে, নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাজে ব্যাটিংয়ের খেসারত দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে ম্যাচ হাতে তারা। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৯৯ রান করে অসিরা। মাঝারি মানের পুঁজি নিয়ে জবাব দিতে নেমে দারুণ শুরু করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। ২ রানে ভারতের ৩ উইকেট তুলে নেয় তারা। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে ২১৫ বলে ১৬৫ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ করেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল।

প্রথম ম্যাচে হারের পেছনে ব্যাটিংকে দায়ী করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ব্যাটাররা দায়িত্ব নিয়ে খেলবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি। কামিন্স বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে ভারতের স্পিনাররা ভালো বোলিং করেছে। আমাদের ব্যাটাররা ভালো খেলতে পারেনি। আগে বা পরে যখনই ব্যাটিং করা হোক না কেন, উইকেটে দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে হবে এবং বড় ইনিংস খেলতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচটি চ্যালেঞ্জিং হবে। এই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা প্রস্তুত এবং দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে  আসরে ঘুড়ে দাঁড়াতে  চাই আমরা।’

বিশ্বকাপের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়া মানেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের জন্ম দেয়া। বিশ্বকাপে ইতিহাসে এই দু’দলের বেশ কিছু উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ রেকর্ড বইয়ে সেরা দশ ম্যাচের মধ্যে অনায়াসে জায়গা করে নিবে।

ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে লিডসে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। আগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত ছিলো প্রোটিয়াদের। সুপার সিক্সের ম্যাচ জিতলেই সেমিতে খেলবে অস্ট্রেলিয়া। ঐ ম্যাচে প্রথম ব্যাট করে ৭ উইকেটে ২৭১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়া করতে নেমে ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১১০ বলে অপরাজিত ১২০ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তৎকালীন  অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। অবশ্য এই ওয়াহ যখন ৫৬ রানে ছিলেন তখন তার সহজ ক্যাচ ফেলেন হার্সেল গিবস। ঐ ক্যাচ মিসের পর, ধারাভাষ্যকাররা বলেছিলেন- ক্যাচ মিসের সাথে বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলেন গিবস। ঠিকই তাই হয়েছে।

ঐ ম্যাচের পর সেমিফাইনালে আবারো  প্রতিপক্ষ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টান-টান উত্তেজনার সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর অস্ট্রেলিয়ার দারুন বোলিংয়ের সামনে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ১৯৮ রানে নবম উইকেট পতন হয় প্রোটিয়াদের। শেষ ব্যাটার অ্যালান ডোনাল্ডকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের আশা ধরে রাখেন ল্যান্স ক্লুজনার। শেষ ওভারে ৯ রানের প্রয়োজনে প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন ক্লুজনার। স্কোর অস্ট্রেলিয়ার সমান ২১৩ করে  দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ বলে অহেতুক রান নিতে গিয়ে ডোনাল্ডকে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন ক্লুজনার। ম্যাচ টাই হলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়া। আরও একবার সেমি থেকে বিদায় নেয় চোকার্স খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত  আসরের শিরোপা জিতেছিলো অসিরা।

২০০৭  বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বিশ্বকাপে লিগ পর্বের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০ রানের জয় পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১০৮ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ার জয় ৫০টিতে ও দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫৪টিতে। ৩টি ম্যাচ টাই ও ১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

অস্ট্রেলিয়া দল: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), সিন অ্যাবট, মার্নাস লাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারি, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ডেভিড ওয়ার্নার ও এডাম জাম্পা।

দক্ষিণ আফ্রিকা দল: তেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), জেরার্ল্ড কোয়েৎজি, কুইন্টন ডি কক, রেজা হেনড্রিকস, মার্কো জানসেন, এনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, কাগিসো রাবাদা, তাবরিজ শামসি, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন ও লিজার্ড উইলিয়ামস।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − six =