অবশেষে মধুর জয় এলো মরুভূমিতে একপশলা বারিধারা হয়ে

সালেক সুফী

ক্রমাগত অনাকাঙ্ক্ষিত পরাজয়ের জালে জড়ানো বাংলাদেশ কাল তৃপ্তির জয় পেলো শ্রীলংকার বিরুদ্ধে খাঁখাঁ মরুভূমির স্বস্তির বারিধারার মতো। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দলের জন্য কাল নতুন দিল্লীর অরুন জেটলি স্টেডিয়ামের খেলাটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার যোগ্যতা অর্জনের অন্যতম শেষ সুযোগ। কাঙ্ক্ষিতভাবেই নিজেদের সেরাটি নিবেদন করেই ৩ উইকেট ব্যাবধানে স্বস্তির জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টাইমড আউট তিক্ততা ছড়ালেও সেখানে ক্রিকেট আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ জয় সুযোগ সৃষ্টি করেছে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফিতে টিকে থাকার। পয়েন্টস তালিকায় ৭ নম্বর অবস্থানে উন্নীত বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ ১১ নভেম্বর পুনেতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। নেট রান রেটের সূক্ষ্ম ব্যাবধানে আট নম্বরে অবস্থান করা শ্রীলংকার শেষ খেলা নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের জয়ে ৯ নম্বরে নেমে যাওয়া নেদারল্যাডস শেষ ম্যাচ খেলবে ভারতের বিরুদ্ধে।

একটি অতি প্রয়োজনীয় জয় বাংলাদেশের জন্য প্রত্যাশিত ছিল। আর সেই জয়ে আপন ছন্দে জীবনানন্দে জ্বলে ওঠা বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বিশ্বক্রিকেটের সেরা চৌকষ খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। এমন একটি ক্রিকেট লড়াই কিছুটা তিক্ততার সৃষ্টি করেছে শ্রীলংকার অন্যতম শেষ ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ব্যাটিং করতে আসার নির্দিষ্ট সময় সীমার থেকে দেরি করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মোট টাইমড আউট হওয়ায়।

আইসিসি ক্রিকেট আইনে ৪১.১.১ অনুযায়ী একজন ব্যাটসম্যান তার পূর্ববর্তী ব্যাটসম্যান আউট হবার দুই মিনিটের মধ্যে উইকেটে এসে প্রথম বল খেলার কথা। হেলমেটে সমস্যা থাকার জন্য ম্যাথিউস আম্পায়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতেন অথবা প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে অনুরোধ করতে পারতেন। ক্রিকেটের বিধি ভঙ্গ করে সাকিব আউট আবেদন করতে ভুল করেনি। অনেকে এটিকে দৃষ্টিকটু মনে করলেও পেশাদারী ক্রিকেটে জয়ের জন্য খেলা ম্যাচে বিধির ব্যত্যয় ঘটেনি।

কাল অবশ্যই জয় প্রয়োজন ম্যাচে টস জয় করে বোলিং করার ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাকিব হয়তো সন্ধ্যার পর শিশির পড়ার ভয়ে। শ্রীলংকার ইনিংস ৩০০ পেরিয়ে গেলে তাড়া করার ঝুঁকি ছিল। তবে জয়ের জন্য কৃতকল্প বাংলাদেশ কাল দল হিসেবে বোলিং ফিল্ডিং করেছে নিজেদের সেরাটি নিবেদন করে।

টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে বিশ্বকাপে অভিসিক্ত তানজিদ হাসান সাকিব (৩/৮০) কিছুটা খরুচে হলেও ভালো বোলিং করেছে। সঙ্গে সাকিব (২/৫১) এবং শরিফুল (২/৫৭) আটোসাটো বোলিং করে শ্রীলংকা দলকে (২৮২/৭) ধরাছোয়ার মধ্যে বেঁধে রাখে। শ্রীলংকা ইনিংসে ১০৮ রানের সাহসী ইনিংস খেলে বিরাট ভূমিকা রাখে চারিথ আসালংকা।

বাংলাদেশ পেরেছিলো কাল পিথুন নিশাঙ্কা (৪১) , সাদীরা সামারাবিক্রামা (৪১) এবং ধনঞ্জয়া ডি সিলভার (৩৪) উইকেট সময় মত তুলে নিতে। ওদের একজন উইকেটে টিকে থাকলে লংকান ইনিংস ৩০০ পেরিয়ে যেত। সেই ক্ষেত্রে চাপের ম্যাচটির ভাগ্য অন্যরকম হতেও পারত।

বাংলাদেশ ব্যাটিং সূচনা কিন্তু ভালো হয়নি। তানজিদ তামিম এবং লিটন আবারো ভালো সূচনা এনে দিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কাল নিজেদের ছন্দ ফিরে পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত (১০১ বলে ৯০) এবং অধিনায়ক সাকিব (৬৫ বলে ৮২) তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৬৯ জুড়ে দিয়ে ম্যাচের গতি বাংলাদেশমুখী করে। কাল ম্যাচে তেতে থাকা আঞ্জেলো ম্যাথিউস পর পর সাকিব, শান্তর উইকেট তুলে নিলেও মাহমুদুল্লাহ (২২) এবং মেহেদী মিরাজের (১৫) সংক্ষিপ্ত দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিং ৫৩ বল হাতে রেখেই স্বস্তির ৩ উইকেট ব্যাবধানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫ টিকে থাকার লড়াইয়ে বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকাকে নিজেদের শেষ ম্যাচে যথাক্রমে তুখোড় প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোমর কষে লড়তে হবে। কাল জয়টি কাঙ্ক্ষিত ছিল। বহুদিন পর বাংলাদেশ বাংলাদেশের মত লড়াকু ক্রিকেট উপহার দিয়ে টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরা স্কোর ২৮২/৭ করেছে। টপ অর্ডার এভাবে ব্যাটিং করলে বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টে বিব্রত হতে হত না। জয় তৃষ্ণায় থাকা বাংলাদেশের জন্য ছিল তীব্র দাবদাহে স্বস্তির বারিধারা।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − ten =