বিজরী বরকতুল্লাহ, ছোটপর্দার সুপরিচিত অভিনেত্রী। অভিনয় করছেন দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে। অভিনয়ের পাশাপাশি বিজরী একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী। সাম্প্রতিক সময়ে উপস্থাপনায় তাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।
বিজরী বরকতুল্লাহ জন্ম শিল্প-সংস্কৃতি ঘনিষ্ঠ একটি পরিবারে। বাবা মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ নাট্য ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। মা জিনাত বরকতুল্লাহ দেশের একজন নামি নৃত্যশিল্পী। খুব ছোটবেলায় মায়ের কাছে তার নাচের হাতেখড়ি। আড়াই বছর বয়সে বিটিভি তে নাশিদ কামালের উপস্থাপনায় ‘মাকে নিয়ে’ নামে ছোটদের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে মিডিয়াতে বিজরীর অভিষেক হয়েছিল। এতোটুকু বয়স থেকেই বিভিন্ন স্টেজ শোতে নৃত্য পরিবেশন করে তিনি হয়ে উঠেন লিটল স্টার।
নৃত্য চর্চার প্রতি বিজরী বরকতুল্লাহ সবসময় গুরুত্ব দিলেও বাবার অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে আসেন। ১৯৮৮ সালে বিটিভির ‘সুখের ছাড়পত্র‘ নামের একটি নাটকে শখের বশে অভিনয় করেন। তারপর থেকেই অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান বিজরী। একসময় অভিনয়ই হয়ে উঠে তার নেশা ও পেশা।
পারিবারিক প্ল্যাটফর্ম থাকার কারণে জন্মের পর থেকেই মিডিয়া নিয়মিত হাঁটাচলা থাকলেও বাবা মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রযোজিত হুমায়ুন আহমেদ রচিত বিটিভির তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ ছিল বিজরীর ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এতে ইরা নামের ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সেই ছোট্ট চরিত্রটি তাকে এনে দেয় বিশাল পরিচিতি। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের কাছে অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহর আলাদা ইমেজ গড়ে ওঠে। মিষ্টি সেই মেয়েটিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক একক নাটক, ধারাবাহিক নাটক, খন্ড নাটকে অভিনয় করে তিনি দর্শক নন্দিত হয়েছেন। পাশাপাশি অনেক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছেন তিনি। কিন্তু অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠার কারণে নাচ থেকে বেশ খানিকটা দূরে সরে যান।
টিভিমিডিয়ার পেশাদার সব অভিনেতা-অভিনেত্রীই কমবেশি সিরিয়াল-মেগাসিরিয়ালে অভিনয় করছেন। কিন্তু বিজরী বরকতুল্লাহকে ইদানিং ধারাবাহিক নাটকে কম দেখা যায় । একক নাটকে অবশ্য নিয়মিতই তাকে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজরী বললেন, আসলে সিরিয়াল-মেগাসিরিয়ালে কাজ করলে লম্বা একটা বাধ্যবাধকতার মধ্যে থাকতে হয়। যতোই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ঝামেলা থাকুক, শিডিউল অনুযায়ী সিরিয়ালের শুটিংয়ে সময় দিতে হয়। আমার একমাত্র মেয়ে উর্বানা বড় হয়ে উঠছে। এ সময় আমি তার পাশে থাকতে চাই। সংসারে যথেষ্ট সময় দিতে চাই। এজন্যই ধারাবাহিক নাটকে আমাকে কম দেখা যায়। তাছাড়া ধারাবাহিকের চেয়ে একপর্বের নাটকে কাজ করতেই আমার বেশি ভালো লাগে।
বিজরী বরকতুল্লাহ জানালেন, বেশ কয়েকটি একক নাটকে তিনি সাম্প্রতিক সময় অভিনয় করছেন। কিছুদিন আগে শ্রীলংকায় চিত্রায়িত দুটি নাটকের শুটিংয়ে তিনি অংশ নিয়েছেন। নাটক দুটি হলো সকাল আহমেদ পরিচালিত ‘লঙ্কা কান্ড’ ও জামিল আহমেদ পরিচালিত ‘ঘাসফুল’। মাত্র শেষ করলেন তানিয়া আহমেদে পরিচালিত নাটক ‘এ টিম’। ২১শে ফেব্রুয়ারির জন্য গৌতম কৌড়ি পরিচালিত একটি একক নাটকের শুটিংয়ে অংশ নিবেন শিগগিরই। মোর্শেদের পরিচালনায় ২৬ শে মার্চের বিশেষ একটি নাটকে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে বর্তমানে অম্লান বিশ্বাসের ‘চোরকাটা’-এর শুটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন বিজরী বরকতুল্লাহ। সামনেই আবদুল্লাহ রানা পরিচালিত একটি ধারাবাহিকে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিকটি দেশ টিভির জন্য নির্মিত হবে।
স্বামী ব্যস্ত সুরকার শওকত আলী ইমন আর একমাত্র মেয়ে উর্বানাকে নিয়ে বিজরী বরকতুল্লাহর ছোট্ট পাখির সংসার। লেভেল সেভেনে পড়ুয়া মেয়ে উর্বানা বাবার মতোই গানে আসক্ত।ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশের বাইরের কিছু মেধাবী এবং খ্যাতিসম্পন্ন ভোকালিস্টদের কাছে উর্বানা গান শেখে। মেয়ে কোন প্রফেশনে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে এই বিষয়টিতে তিনি মেয়েকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। ক্যারিয়ার সঙ্গে সংসারের দারুণ সমন্বয় করে চলেছেন। সবমিলিয়ে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ বলে মনে করেন বিজরী বরকতুল্লাহ।