অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন জমা: শেখ হাসিনার আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে

অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। খবর বাসস

রাজধানীর তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে জানান, শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।

তিনি বলেন, শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে অর্থনীতির প্রতিটি খাত ধরে ধরে আলাদা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে উন্নয়নের গল্প সাজাতে কিভাবে পরিসংখ্যানকে ম্যান্যুপুলেট করা হয়েছে। উন্নয়নের গল্প শোনানো হলেও ভেতরে ভেতরে চলেছে লুটতরাজের এক মহাযজ্ঞ।

প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য একটা ঐতিহাসিক দলিল। আর্থিকখাতে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল একটা আতঙ্কের বিষয়। আমাদের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলেননি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। সেই ধারাবাহিতায় আজ রোববার ওই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে কমিটির প্রধান ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা শ্বেতপত্রকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে অভিহিত করেছেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এটি (শ্বেতপত্র প্রতিবেদন) একটি ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে দুরবস্থা চলে আসছে, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা উন্মোচিত হয়েছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে দেশে কৃত্রিম উন্নয়নের যে বয়ান প্রচলিত ছিল, তাকেও ধূলিসাৎ করেছে।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান জানান, প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন যে এই শ্বেতপত্রকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার এবং এ নিয়ে পড়াশোনা করা উচিত। প্রয়োজনে এটিকে আগামী দিনে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

চূড়ান্ত শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে অর্থনীতি নিয়ে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আগামী বাজেট পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক স্থিতায়ন কর্মসূচি দরকার। ফলে এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। এর সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও যুক্ত করতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে আলাদাভাবে সংস্কারের যে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলছে, এগুলোকে সময়–নির্দিষ্ট ও সমন্বিতভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। বিশেষ করে আগামী বাজেট পর্যন্ত সরকার যে কী করতে যাচ্ছে, তা তুলে ধরা উচিত। তাহলে বাজার এবং আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত দেশের মানুষের ও বিদেশিদের মধ্যে একধরনের আস্থা আসবে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 + 4 =