অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান টি০৭ ক্রিকেট: বৃষ্টিভেজা উলন গাবায় মজার ক্রিকেট

সালেক সুফী

নাতনি ফাতিমা আর নাতি জুহায়ের সহ কাল আমরা তিন পুরুষ ছিলাম ব্রিসবেনের ঐতিহবাহী উলন গাবা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। উদ্দেশো অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচ উপভোগ। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ওডিআই সিরিজ ২-১ জিতে নেওয়ায় সিরিজটি ঘিরে প্রবাসী পাকিস্তানিদের মতো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট প্রেমিকদের উদ্দীপনা ছিল। শুনলাম একজন পাকিস্তানী ক্রিকেট আমুদে একই ৮০০০ টিকেট কিনেছে। যাহোক শুভ্র পাকিস্তান জোনে টিকেট কিনেছিল। বেশ কয়েক বছর পর নাতি নাতনি ক্রিকেট দেখতে উলন গাবা যাবে তাই ওদের উৎসাহের কমতি ছিল না। কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে দিন গুনছিল। এবারের স্কুল মৌসম শেষ হয়ে আসছে তাই দুপুর ১২টায় স্কুল ছুটি হয়ে যায়। বাসায় এসে প্রস্তুতি নেয় দাদীর যত্নে।

আমার আবার এই দিন স্থানীয় মেয়র জন রাভানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকার ছিল। সক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে লোগান সিটি এলাকা তথা কুইন্সল্যান্ডের সবুজায়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মত বিনিময় হয়েছে। আশা করি সৌর বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ চালিত যানবাহন,  বৃক্ষ রোপণ ইত্যাদি কাজে অবদান রাখার সুযোগ হবে।

সন্ধ্যা ৬টায় খেলা শুরু হবার কথা ব্রিসবেনে এখন গুমোট আবহাওয়া। দিনের অধিকাংশ সময় অতিষ্টকর গরম। বিকেলে সন্ধ্যায় কয়েক পশলা বৃষ্টি। লোগান সিটি থেকে আমরা গাড়ি নিয়ে স্প্রিংউড বাস স্ট্যান্ড যেয়ে সেখান থেকে সিটি বাসের জন্য একঘণ্টা অপেক্ষা করলাম। সেখান থেকে এইট মাইলস প্লেন বাস স্ট্যান্ড।শাটেল বাসে ছাড়ে উলন গাবা। ৫:৩০ গাবা পৌঁছে দেখি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। আমাদের নির্ধারিত স্থান ৯ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করে দেখি পাকিস্তান সমর্থন জোনে ইতিমধ্যে দর্শকে টইটম্বুর। নানা রঙে সজ্জিত হয়ে বাদ্য যন্ত্র নিয়ে আমোদে মেতেছে নানা বয়সের পাকিস্তানী ছেলে মেয়েরা। ফাতিমা জোহায়ের খুব উপভোগ করছিল। এদিকে বৃষ্টি আর থামছেই না। ৬টা থেকে ৭টা পেরিয়ে ৭:৪০ এসে বৃষ্টি থামলো। মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম অতি আধুনিক, ম‍াঠ কর্মীরা অত্যন্ত কুশলী। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত হলো টি২০ নয়। অবশিষ্ট সময় টি০৭ ক্রিকেট হবে।

পাকিস্তান টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানালো। স্মরণে রাখবেন অস্ট্রেলিয়ায় অতি উন্নতমানের বিগ বাস টি২০ টুর্নামেন্ট হয়। শীর্ষ স্থানীয় খেলোয়াড়রা দলে না থাকলেও উন্নত মানের খেলোয়াড়দের কমতি নাই। বিশেষত গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মতো তুখোড় সংক্ষিপ্ত ভাষণ ক্রিকেটারের ১৯ বলে ৪৩ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস দেখার সুযোগ হলো। শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং নাসিম শাহকে তুলোধুনো করে ম্যাক্সওয়েল পাকিস্তানী অনুরাগীদের একাই স্তব্ধ করে রাখে ম্যাক্সওয়েল। পরে স্তয়নিস দ্রুত অপরাজিত ২১ রান করলে ৭ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান দাঁড়ায় ৯৩/৪। অস্ট্রেলিয়ার প্রতি উইকেট পতনে পাকিস্তানী দর্শকরা নাচে গানে মেতে ওঠে। নাতি নাতনি দারুন উপভোগ করে।

জবাবে পাকিস্তান ব্যাটিং করে শুরু থেকেই চাপের মুখে ছিল। রিজওয়ান, বাবর আজম ব্যর্থ হওয়ায় পাকিস্তান ৭ ওভার শেষে রান করে ৬৪/৯। পরাজয় ২৯ রানে। তিন ম্যাচ সিরিজে পিছিয়ে পড়ে ০-১।

অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ প্রথম চয়েস খেলোয়াড় এখন পার্থে ভারতের বিরুদ্ধে বর্ডার গাভাস্কার টেস্ট সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সারির দলে ম্যাক্সওয়েল, জাম্পা আর স্তয়নিস ছাড়া যেন জানা খুব কেউ না থাকলেও সংক্ষিপ্ত ভার্সন ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

নাতি নাতনিরা উপভোগ করেছে সেটি মূল কথা। বৃষ্টিতে সংক্ষিপ্ত টি০৭ ভার্শনের একটি ক্রিকেট নাটক দেখা বিশেষ করে আফ্রিদি, রউফ, নাসিমদের বিরুদ্ধে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং বিস্ফোরণ দেখা কম কিছু না। আজ নিশ্চয় স্কুলে ফাতিমা জোহায়ের অনেক গল্প করবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × five =