অ্যান্টিগা টেস্ট: খালেদের নৈপুণ্যে উত্তেজনা

শেষ বিকেলে  বোলার  খালেদ আহমেদের নৈপুণ্যে  আ্যান্টিগা টেস্টে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তারপরও অ্যান্টিগা টেস্ট জিততে সফরকারী বাংলাদেশের প্রয়োজন ৭ উইকেট। আর স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ৩৫ রান।

দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪৫ রানে গুটিয়ে গেলে জয়ের জন্য ৮৪ রানের টার্গেট পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেই লক্ষ্যে খেলতে তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ৪৯ রান তুলেছে ক্যারিবীয়রা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল  ১০৩ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৬৫ রান ।

প্রথম ইনিংস থেকে ১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৫০ রান করেছিলো বাংলাদেশ। দিন শেষে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১১২ রানে পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। মাহমুদুল হাসান জয় ১৮ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।

অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে  টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালোভাবেই করেছিলেন জয় ও শান্ত। প্রথম আট ওভারে কোন বিপদ হতে দেননি তারা। তবে নবম ওভারের চতুর্থ বলে মায়ার্সের বল ঠিক-ঠাক খেলতে না পেরে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন ৩টি চারে ৪৫ বলে ১৭ রান করা শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ১০২ বল খেলে ২৯ রান যোগ শান্ত-জয়।

শান্তর বিদায়ে উইকেটে আসেন সাবেক অধিনায়ক মোমিনুল হক। প্রথম ৯ বলে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। নিজের মুখোমুখি হওয়া দশম বলে বাউন্ডারি পেয়ে যান মোমিনুল। তবে সেটি ভাগ্যের জোরে। বল ইনসাইড এডজ হয়ে স্টাম্পের পাশ দিয়ে বাউন্ডারি হয়। ১ বল পর বিদায় ঘটে মোমিনুলের। মায়ার্সের বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের সাথে লাইন মিস করেন অফ-ফর্ম মোমিনুল। ওয়েন্ট ইন্ডিজের জোরালো আবেদনে মোমিনুলকে লেগ বিফোর আউট দেন আম্পায়ার। তবে নিজের উইকেট বাঁচাতে রিভিউ নেন মোমিনুল। কিন্ত তা কোন  কাজে আসেনি  ১২ বলে ৪ রান করা মোমিনুলের। এই নিয়ে সর্বশেষ ৯ ইনিংসে ডাবল-ফিগারে পৌঁছানোর আগেই থামতে হলো  সাবেক অধিনায়ককে।

দলীয় ৭৫ রানে মোমিনুলের আউটের পর ক্রিজে জয়ের সঙ্গী হন লিটন দাস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উপর চাপ বাড়াতে লিটন ৩টি ও জয় ১টি চার মারেন। লিটন-জয় জুটির হাত ধরে বাংলাদেশের স্কোর শতরানে পৌঁছায়। আর সেখানেই বিচ্ছিন্ন হয় তাদের জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন। ১৫ বলে ১৭ রানে মৃত্যু ঘটে   লিটনের ইনিংসের। লিটনের মত একই শট খেলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন জয়ও। তার ক্যাচটি নিয়েছেন উইকেটরক্ষক জশুয়া। ১৯৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩টি চারে ১৫৩ বল খেলে ৪২ রান করেন জয়।

১০৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেন অধিনায়ক সাকিব ও উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। উইকেটে সেট হওয়ার পর  সহজেই চারটি বাউন্ডারি আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। নিজের মুখোমুখি হওয়া ৪৪তম বলে প্রথম বাউন্ডারি মারেন নুরুল। আর নুরুলের দ্বিতীয় বাউন্ডারিতে সাকিবের সাথে জুটিতে ৫০ রান পূর্ণ হয়।  নুরুলের তৃতীয় বাউন্ডারিতে লিড পায় বাংলাদেশ।

দলীয় রান ২শতে পৌঁছানোর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। ৮২ বলে তিন ইনিংসে টানা হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ  করেন তিনি। সাকিবের হাফ-সেঞ্চুরির পরপই নুরুলের বাউন্ডারিতে ২০০ রান পায় বাংলাদেশ। দলীয় রান দু’শর পর সাকিব-নুরুলের জুটিতে ১শও পূর্ণ হয়। এতে ৬ উইকেটে ২১০ রান তুলে চা-বিরতি যায় বাংলাদেশ। এসময় সাকিব ৫৩ ও নুরুল ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।

বিরতির পর প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই পাঁচ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন নুরুল। তার ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরিও ছিলো এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে, ২০১৮ সালে। ১১০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হবার পর নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন নুরুল। একই পথে ছিলেন সাকিবও। সাকিব-নুরুল জুটি ভাঙ্গতেও মরিয়া ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অবশেষে ক্যারিবীয়দের মুখে হাসি ফুটান পেসার কেমার রোচ।

৮৩তম ওভারের প্রথম বলে রোচকে এক্সটা কভার দিয়ে মারতে গিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়কের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব। আউট হওযার আগে ৯৯ বলে ৬টির চারে ৬৩ রান করেন টাইগার নেতা। সপ্তম উইকেটে নুরুলের সাথে ২২১ বলে ১২৩ রান যোগ করেন সাকিব। ম্যাচে প্রথম শতরানের জুটি এটি। সাকিব ফেরার ২৫ বল পর বিদায় নেন নুরুলও। শিকার হন রোচের। অফ-স্টাম্পের বাইরের বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়া  নুরুল ১১টি চারে ১৪৭ বল খেলে ৬৪ রান করেন।

দলীয় ২৩৮ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে নুরুল ফেরার পর শেষ দুই উইকেটে ৭ রানের বেশি পায়নি বাংলাদেশ। ২৪৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। এবাদতকে ১ রানে রোচ ও মুস্তাফিজুরকে ৭ রানে শিকার করেন জোসেফ। এবাদতকে শিকার করে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন রোচ। ৭২ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১০মবারের মত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন রোচ।

৮৪ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ডান-হাতি পেসার খালেদ আহমেদের বিধ্বংসী রুপ দেখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪ ওভারের মধ্যে ক্যারিবীয়দের ৩ উইকেটের পতন ঘটান খালেদ।  দ্বিতীয় ওভারে প্রথম আক্রমণে এসেই দুই উইকেট তুলে নেন পেসার খালেদ। প্রথম ডেলিভারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে ১ ও পঞ্চম বলে রেইমন রেইফারকে ২ রানে শিকার করেন খালেদ। দু’জনই উইকেটরক্ষক নুরুলকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেট শিকারের পর, দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পান খালেদ। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এনক্রুমার বোনারের অফ-স্টাম্প ভেঙ্গে ফেলেন খালেদ।

৯ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলকে আর বিপদের মুখে পড়তে দেননি ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ও জার্মেই ব্ল্যাকউড। দিনের শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে ৪০ রানের জুটি গড়েন তারা। ক্যাম্পবেল ২৮ ও ব্ল্যাকউড ১৭ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের খালেদ ৫ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন।

বাসস  

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 3 =