অ্যাম্বার হার্ড হলিউডের বুনো সুন্দরী

অপরাজিতা জামান: বুনো ফুলের সাথে তুলনা করা যায় হলিউড অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডকে। নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘অ্যাকুয়াম্যান’ সিনেমার দৃশ্য। মনে পড়ে যায় ওয়ার্ন ব্রসের যোদ্ধা মেরার কথা। এই ছবিতে মেরা চরিত্রে অ্যাম্বারের দুর্দান্ত অভিনয়ের রেশ এখনও আলোড়িত করে বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীদের। এ ছবিতে সৌন্দর্য ও বীরত্ব দুইয়ের সমন্বয়ে অ্যাম্বার এক অন্য অনুভূতি জাগিয়েছেন ভক্তদের মনে। তাদের মনযোগ কেড়ে নিয়েছেন নিজের দিকে।

জন্ম ও শৈশব

অ্যাম্বার আমেরিকার টেক্সাস পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ১৯৮৬ সালের ২২ এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই বোনের মাঝে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি। অ্যাম্বারের বাবা ডেভিড ক্লিনটন ছিলেন একজন ব্যবসায়ি আর মা প্যাট্রিসিয়া ছিলেন ইন্টারনেট গবেষক। অ্যাম্বারের শৈশবটা ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। কেননা তার বাবা ছিলেন একজন ঘোড়া প্রশিক্ষকও। সেই সুযোগে ছোটবেলায়ই ঘোড়া চালানো রপ্ত করেন তিনি। পাশাপাশি মাছ ধরা, শিকার করা এগুলো ছিল তার বেড়ে ওঠার সঙ্গী। এ হলিউড সুন্দরীর শৈশব ছিল দুরন্তপনায় ভরা।

কৈশোরে ঈশ্বরে অনীহা

অ্যম্বার বড় হয়েছেন ক্যাথলিক পরিবারে। পড়াশুনা করতেন একটি ক্যাথলিক স্কুলে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বয়স যখন ১৬ তখন অ্যাম্বারের খুব কাছের এক বন্ধু মারা যায়। হঠাৎ এই বন্ধু বিয়োগ এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে তার মাঝে। তার ভিতরে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী সত্তা বেড়ে উঠতে থাকে। এর একপর্যায়ে ওই ক্যাথলিক স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারান তিনি। ত্যাগ করেন ওই বিদ্যাপীঠ। এরপর পাড়ি জমান লস এঞ্জেলেস। এ সময় জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। হয়তো মানসিক শান্তির খোঁজেই এ পথে এসেছিলেন তিনি। অবশ্য এর আগে এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ও অংশ নিয়েছিলেন।

অভিনেত্রী হয়ে ওঠা

অ্যাম্বার প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে। ২০০৪ সালে কেনি চেসনি’র ‘দেয়ার গোজ মাই লাইফ’ এবং ইসলেসের ‘আই ওয়াজ নট প্রিপেয়ারড’ গানের মিউজিক ভিডিওতে মডেল হন তিনি। পাশাপাশি টিভিতেও ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ‘জ্যাক অ্যান্ড বেবি’ নামের একটি টিভি সিরিজ দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয় তার। এ সময় আরও কিছু টিভি সিরিজে অভিনয় করেন তিনি। এদের মধ্যে ‘জ্যাক অ্যান্ড ববি’, ‘দ্য মাউন্টেন’, ‘দ্য ববি’ উল্লেখযোগ্য। তবে কোনোটাতেই উল্লেখযোগ্য চরিত্র ছিল না তার। ছোটখাট চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করেই বড় হয়েছেন অ্যাম্বার। একই চিত্র দেখা গেছে তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের বেলায়ও।

চলচ্চিত্রে অ্যাম্বার

চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে সুযোগ পেতে ধৈর্য ধরতে হয়েছে অ্যাম্বারকে। সিনেমায় তার শুরুটা হয়েছিল টিভি সিরিজের মতোই ছোটখাট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। অ্যাম্বারের প্রথম চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ২০০৪ সালে। সে বছর ‘দ্য ফ্রাইডে নাইট লাইটস’ নামের একটি চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরপর লাগাতার বেশকিছু সিনেমায় স্বল্প সময়ের জন্য পর্দায় উপস্থিত হতে দেখা যায় তাকে। এরমধ্যে ‘ড্রপ ডেড সেক্সি’, ‘নর্থ কান্ট্রি’, ‘সিড এক্স’ সিনেমা উল্লেখযোগ্য। এই সময়টা সিনেমার পাশাপাশি টিভি সিরিজেও অভিনয় করতেন তিনি। অ্যাম্বার সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে প্রথম সুযোগ পান ২০০৬ সালে। ‘অল দ্য বয়েস লাভ ম্যান্ডি’ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

কিন্তু তারকা খ্যাতি পেতে বেশ ধৈর্য ধরতে হয়েছে তাকে। ২০০৮ সালে অ্যাম্বার অভিনয় করেন ‘জাড অ্যাপাটু’ ও ‘নেভার বক্স ডাউন’ নামক দুটি ছবিতে। দুটি ছবিই ব্যবসাসফল হয়। একই বছর ব্রেট ইস্টন ইলিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘দ্য ইনফরমারস’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। উপন্যাস আশ্রয়ী এই সিনেমাটি ব্যবসায়িক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়লেও অ্যাম্বারের অভিনয় প্রশংসিত হয়। পরের বছর ‘জোনেসেস’ নামক একটি ছবিতে ডেমি মুর ও ডেভিড ডাচভানির সঙ্গে পর্দা ভাগ করেন তিনি। এই ছবিতেও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন অ্যাম্বার। একই বছর তার ক্যারিয়ারে আরও একটি চমক নিয়ে আসে ‘জোমবেইল্যান্ড’ নামের একটি চলচ্চিত্র। ব্যবসাসফল এই ছবিটি দিয়েই বছর শেষ করেন তিনি।

২০১০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন অ্যাম্বার। ‘দ্য স্টেপ ফাদার’, ‘দ্য ওয়ার্ড’সহ তার অভিনীত আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ২০০৯-১০ সালে। তবে ২০১১ সাল অ্যাম্বারের ক্যারিয়ারের জন্য খুব এক সুবিধার ছিল না। এ বছর তার অভিনীত কোনো ছবিই ব্যবসা করতে সক্ষম হয়নি। তবে ব্যক্তি অ্যাম্বারের জন্য বছরটি উল্লেখযোগ্য ছিল। এ বছরই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ‘পাইরেটস ক্যরিবিয়ান’ খ্যাত অভিনেতা জনি ডেপের সঙ্গে। রাম ডায়রি নামের এক ছবিতে কাজ করতে গিয়ে জনির সঙ্গে আলাপ হয় তার। কিন্তু ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে এগিয়ে যায় জনি-অ্যাম্বারের সম্পর্ক। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করলেও সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি এ অভিনেত্রী। এই সময়ের মধ্যে তার কোনো ছবি প্রযোজনা সংস্থার পকেটে পয়সা এনে দিতে পারেনি। তবে ২০১৪ যেন ছিল অ্যাম্বারের জ্বলে ওঠার বছর। সে বছর তার অভিনীত ‘থ্রি ডেস টু কিল’ নামের সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। পরের বছরটাও একই ছন্দে চলে অ্যাম্বারের।

অ্যাকুয়াম্যান

অভিনেত্রী হিসেবে অ্যাম্বার তার কাক্সিক্ষত সাফল্য পান ২০১৭ সালে। এ বছরই তিনি অভিনয় করেন পৃথিবী নাড়িয়ে দেওয়া চলচ্চিত্র অ্যকুয়াম্যানে। পর্দায় উপস্থিত হন যোদ্ধা মেরা রূপে। বিশ্বের সিনেমাপ্রেমীরা লুফে নেন ছবিটি। সেইসঙ্গে অ্যাম্বারও হয়ে ওঠেন বিশ্বতারকাদের একজন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর সিনেমার মাধ্যমে অনুরাগীদের হৃদয়ে নিয়েছেন স্থায়ী আসন যা আজও অব্যাহত আছে।

আবার অ্যাকুয়াম্যান

এরইমধ্যে আবার নিজেকে বিশ্বব্যাপী প্রমাণ করার সময় এসে গেছে অ্যাম্বারের। কেননা অ্যাকুম্যানের সিকুয়েল আসছে। এতে মেরা চরিত্রে তার থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়। গুঞ্জন উঠেছে অ্যাকুয়াম্যানের সিকুয়েলে থাকছেন না অ্যাম্বার। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রাক্তন স্বামী জনি ডেপের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ। ২০১৫ সালে বিয়ে করেছিলেন তারা। তবে সে দাম্পত্য সুখের হয়নি। বিয়ের দুই বছরের মাথায় জনির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে আদালতে যান তিনি। জনি ডেপও পাল্টা মামলা করেন অ্যাম্বারের বিরুদ্ধে। বিগত বছরগুলোতে আদালতেই সময় কাটে জনি-অ্যাম্বারের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় জনিরই হয়। গত বছর আদালত জনির পক্ষে রায় দেওয়ার পাশাপাশি অ্যাম্বারকে বিশাল অংকের জরিমানা প্রদানের নির্দেশ দেয়। এতে যারপরনাই ভেঙে পড়েন এ নায়িকা।

এরমধ্যে উটকো ঝামেলা হিসেবে উপস্থিত হয় জনি ডেপের অনুরাগীরা। জনির সঙ্গে মামলা চলাকালীন অ্যাম্বারের ওপর নাখোশ ছিলেন জনির ভক্তরা। তা প্রকট হয় আদালতে পর্দার এ সুপার হিরোইনের হারের পর। সামাজিকমাধ্যমে তারা দুয়োধ্বনি দিতে থাকে এ নায়িকার নামে। যা যারপরনাই অতিষ্ঠ করে তোলে তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় অ্যাকুয়াম্যানের সিকুয়েল থেকে ছিটকে পড়ার কথা শোনা যায় ৩৬ বছর বয়সী এ অভিনেত্রীর। বিষয়টি এখনও পরিষ্কার করেনি প্রযোজনা সংস্থা। যার কারণে এখনও সবার ধারণা অ্যাম্বারই থাকছেন পরবর্তী মেরা।

অর্জন

অ্যাম্বার পেয়েছেন সেরা অভিনেত্রী হিসেবে এমটিভি মুভি অ্যান্ড টিভি অ্যাওয়ার্ড, ডালাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন রিসপ্রেভ অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি ২

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − 11 =