অভিনেত্রী শাবানা আজমির জন্মদিন আজ

ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা আজমির জন্মদিন আজ। বাণিজ্যিক ও শিল্প – দুই ধারার ছবিতেই তিনি সফল। এই অভিনেত্রী শতবর্ষের বলিউডের আকাশে অরুন্ধতীর মতোই স্থির।

শাবানা আজমী ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদে এক সৈয়দ মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাইফি আজমি ছিলেন একজন ভারতীয় কবি ও গীতিকার এবং মাতা শওকত কাইফি ছিলেন একজন মঞ্চ অভিনেত্রী। শাবানার ভাই বাবা আজমী একজন চিত্রগ্রাহক এবং তার ভাইয়ের স্ত্রী তানবী আজমী একজন অভিনেত্রী।

এগার বছর বয়সে তার নাম রাখা হয় শাবানা, নামটি রাখেন আলি সরদার জাফরি। এর পূর্ব-পর্যন্ত তার পিতা-মাতা তাকে ‘মুন্নি’ নামে ডাকতেন।

আজমি একাধিক মঞ্চনাটক ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সাম্প্রদায়িকতার নিন্দা করেন। ১৯৮৯ সালে স্বামী অগ্নিবেশ ও আসগর আলির সাথে তিনি নতুন দিল্লি থেকে মিরুট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য চার দিনের পদযাত্রায় অংশ নেন। এছাড়া তিনি বস্তিবাসী, বাস্তুচ্যুত কাশ্মিরী পণ্ডিত অভিবাসী ও মহারাষ্ট্রের লাতুরের ভূমিকম্পে আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা সামাজিক দলগুলোর সাথে একাত্বতা পোষণ করেন।

তিনি এইডস আক্রান্তদের সমাজবিচ্ছিন্নকরণের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালান। ভারত সরকারের অনুমোদনে নির্মিত একটি ছোট ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় তিনি একটি এইচআইভি পজিটিভ শিশুকে তার কোলে নিয়ে বলছেন, “সে আপনাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। তার আপনাদের ভালোবাসা প্রয়োজন।” বাংলাদেশী চলচ্চিত্র মেঘলা আকাশ-এ তিনি একজন এইডস রোগীর চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া তিনি অমুনাফাভোগী সংস্থা টেকএইডস থেকে নির্মিত এইচআইভি/এইডস শিক্ষামূলক অ্যানিমেটেড সফটওয়্যার টিউটোরিয়ালে কণ্ঠ দেন।

১৯৮৯ সাল থেকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলের সদস্য; ভারতের জাতীয় এইডস কমিশনের সদস্য; এবং ১৯৯৭ সালে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য। ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) তাকে ভারতের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।

আজমি মুম্বাইয়ের কুইন ম্যারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে ভর্তি হন।

এখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৭৩ সালে খাজা আহমেদ আব্বাসের ফাসলা চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন। একই সময়ে তিনি কান্তিলাল রাঠোড়ের পরিণয় চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র হল শ্যাম বেনেগলের পরিচালনায় অভিষেক চলচ্চিত্র অঙ্কুর (১৯৭৪)। বেনেগল ছিলেন চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে তার শিক্ষক। নব্য-বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্রটি হায়দ্রাবাদে সংগঠিত একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। আজমি লক্ষ্মী নামে এক গ্রাম্য বিবাহিত গৃহপরিচারিকা চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার মালিকের কলেজ পড়ুয়া নববিবাহিত পুত্রের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আজমি এই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন না, কয়েকজন প্রধান অভিনেত্রী এই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের নিকট থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে এবং আজমি তার কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে বেঞ্জামিন গিলানির সাথে শাবানা আজমির বাগদান সম্পন্ন হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন সংস্থানে তাদের পরিচয় হয়েছিল, কিন্তু আজমির উঠতি খ্যাতির সামলাতে না পেরে গিলানি এই বাগদান বাতিল করেন। পরে শেখর কাপুরের সাথে তার সাত বছর সম্পর্ক ছিল। ১৯৮৪ সালের ৯ই ডিসেম্বর তিনি কবি, গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এতে তিনি আখতার-আজমি চলচ্চিত্র পরিবারের একজন সদস্য হন। এটি ছিল আখতারের দ্বিতীয় বিবাহ, পূর্বে তিনি বলিউডের চিত্রনাট্যকার হানি ইরানিকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি আখতারের দুই সন্তানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।

শ্যাম বেনেগলের পরিচালনায় তার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল নিশান্ত (১৯৭৫), জুনুন (১৯৭৮), সুসমান (১৯৮৬) ও আন্তর্নাদ (১৯৯২)। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় শতরঞ্জ কে খিলাড়ি (১৯৭৭) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই সময়ে তার অভিনীত কয়েকটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র হল মনমোহন দেশাইয়ের অমর আকবর এন্থনি (১৯৭৭) ও পরবরিশ (১৯৭৭) এবং প্রকাশ মেহরার জ্বলামুখী (১৯৮০)।

১৯৮০-এর দশকে তিনি মৃণাল সেনের পরিচালনায় কন্ধার (১৯৮৩), জেনেসিস (১৯৮৬), এক দিন আচানক (১৯৮৯); সাঈদ মির্জার পরিচালনায় আলবার্ট পিন্টু কো গুসসা কিঁও আতা হ্যায় (১৯৮০); সাই পারাঞ্জপাইয়ের স্পর্শ (১৯৮০) ও দিশা (১৯৯০); মহেশ ভাটের অর্থ (১৯৮৩); গৌতম ঘোষের পার (১৯৮৫); অপর্ণা সেনের পিকনিক (১৯৮৯) ও সতী (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সালে অর্থ, কন্ধার ও পার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

১৯৮০-এর দশকের শেষভাগে ও ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তিনি কয়েকটি বিদেশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন, সেগুলো হল জন শ্লেসিঞ্জারের মাদাম সুসৎজকা (১৯৮৮), নিকোলসা ক্লোৎজের বেঙ্গলি নাইট, রোলান্ড জোফের সিটি অব জয় (১৯৯২), চ্যানেল ফোরের ইমাক্যুলেট কনসেপশন (১৯৯২), ব্লেক এডওয়ার্ডসের সন অব দ্য পিংক প্যান্থার (১৯৯৩) এবং ইসমাইল মারচেন্টের ইন কাস্টডি (১৯৯৩)।

তিনি ১৯৯৬ সালে দীপা মেহতার ফায়ার চলচ্চিত্রে রাধা নামে এক একাকী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যে তার ঝাকে পছন্দ করে। পর্দায় নন্দিতা দাসের সাথে তার সমকামী নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অনেক সামাজিক গোষ্ঠী এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ-মিছিল করে এবং তাদের হুমকি দেয়। যাই হোক, রাধা চরিত্রটি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয় এবং তিনি এই কাজের জন্য ৩২তম শিকাগো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সিলভার হুগো পুরস্কার এবং লস অ্যাঞ্জেলেস আউটফেস্ট থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বিনয় শুকলার গডমাদার চলচ্চিত্রের জন্য তার পঞ্চম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × two =