আজ কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতার জন্মদিন

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার জন্মদিন আজ। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই তৎকালীন বাগেরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউব ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা বি জে আরা ছিলেন চিকিৎসক।

ববিতার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায় হলেও বাবার চাকরি সূত্রে বাগেরহাটেই থাকতেন তারা। তার শৈশব ও কৈশোরের শুরু সময়টা কেটেছে যশোর শহরে। বড়বোন সুচন্দার অনুপ্রেরণায় চলচ্চিত্রে পা রাখেন ববিতা। ১৯৬৮ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ সিনেমার মাধ্যমে আত্নপ্রকাশ করেন তিনি।

চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিলো ‘সুবর্ণা’। জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ সিনেমাতে অভিনয় করতে গিয়েই তার হয়ে যায় ‘ববিতা’। ১৯৬৯ সালেই নায়িকা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেন ববিতা। জহির রায়হানের ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটি ছিল তার টার্নিং পয়েন্ট। এরপর তিনি অভিনয় করেন নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে। যা ওই সময় সুপারহিট হয়েছিল।

সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অনঙ্গ বৌ চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান ববিতা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি তৈরি হয়। দৃশ্যধারণের আগে ভারতীয় চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ স্বাধীনতার পর ঢাকায় এফডিসিতে এসে ববিতার প্রায় ১৫০-২০০টি ছবি তোলেন। এর কিছুদিন পর ববিতার বাসায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে একটি চিঠিতে মনোনীত হওয়ার বার্তা আসে।

চার দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে গ্রামীণ, শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকী সব ধরনের সিনেমাতেই ববিতা ছিলেন সাবলীল। সত্তরের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তৎকালীন সময়ে তার ফ্যাশন শহুরে মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেছিল।

ববিতাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করা তারকা। তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা আড়াইশ’রও বেশি। এর মধ্যে ‘বাদী থেকে বেগম’ (১৯৭৫), ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), ‘বসুন্ধরা’ (১৯৭৭), ‘রামের সুমতি’ (১৯৮৫) এবং ‘পোকামাকড়ের ঘর বসতি’ (১৯৯৬) সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

ববিতা অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য সংসার, শেষ পর্যন্ত, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, আলোর মিছিল, ডুমুরের ফুল, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, অনন্ত প্রেম, লাঠিয়াল, এক মুঠো ভাত, সূর্য গ্রহণ, এখনই সময়, জন্ম থেকে জ্বলছি, বড় বাড়ির মেয়ে, পেনশন, দহন, চন্ডীদাস ও রজকিনী, নিশান, নাগ-নাগিনী, দোস্তী, প্রতিজ্ঞা, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, প্রতিহিংসা, নাগ পূর্ণিমা, মায়ের জন্য পাগল, টাকা আনা পাই, স্বরলিপি, তিনকন্যা, লটারি, শ্বশুরবাড়ি, মিস লংকা, জীবন পরীক্ষা, জীবন সংসার, লাইলি মজনু, সাক্ষী ইত্যাদি।

ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি স্বরূপ আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ছয়বার বাচসাস পুরস্কার এবং একাধিক আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 5 =