আলী যাকেরের মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিন আজ

মৃত্যুর পর এটাই এই ননিন্দতজনের প্রথম জন্মদিন। তাই যাকের পরিবার এবং সংগঠনিকভাবে এই দিনটি বিশেষ বার্তা বহন করছে। আলী যাকেরের জীবনদর্শন ও সৃষ্টিশীল কর্মযজ্ঞ নিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে সংগ্রহালয় ‘বাতিঘর’। দিনটিতে (৬ নভেম্বর) উন্মোচন করা হবে ‘আলী যাকের’ নামে ওয়েবসাইট। সেইসাথে ঘোষণা করা হবে ‘আলী যাকের অনুদান প্রদান’ কার্যক্রম।

শনিবার ‘বিরাজ সত্য সুন্দর’ শিরোনামে একটি অনলাইন আয়োজন ডেকেছে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন। আলী যাকেরের ৭৭তম জন্মদিনে অনুদান প্রদান, সংগ্রহালয় ‘বাতিঘর’ এবং ‘ওয়েবসাইট’-এর উদ্বোধন করা হবে এতে। যাতে অংশ নেবেন আলী যাকেরের বন্ধুজন, সহযাত্রী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আর পুরো আয়োজনটি হবে জুম সংযোগের মাধ্যমে।

আলী যাকেরের অভিনয় শুরু হয়েছিল বিখ্যাত ‘কবর’ নাটক দিয়ে, মঞ্চে। যার ইতি ঘটলো গত বছর ২৭ নভেম্বর ভোরে, মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। জন্মের ৭৬ বছরে পা রেখেই এই কিংবদন্তি ফিরে গেলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। রেখে গেলেন তার অসংখ্য কর্ম ও সৃষ্টি।

১৯৪৪ সালের এই দিনে (৬ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিকের।

১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন এই অভিনেতা। যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয় করেন।

১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা।

আলী যাকের এরপর টিভি নাটকে ব্যস্ত হন। পান অসীম জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে তার চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আকাশছোঁয়া। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তবে মঞ্চের সঙ্গে তার সংযুক্তি ছিল আমৃত্যু। ছিলেন দারুণ সঞ্চালকও। দীর্ঘ সময় তিনি এই কাজটি সফলতার সঙ্গে করেছেন চ্যানেল আই ও বাংলাভিশনের পর্দায়।

আলী যাকের অভিনয়ের পাশাপাশি দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-এর কর্ণধার ছিলেন তিনি।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।

এক সাক্ষাৎকারে আলী যাকের জানিয়েছেন, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশি নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা এসব কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ওই দলে যোগ দেন সারা যাকের, যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি তার! একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রুত চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হন আলী যাকের।১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।

বাংলা ট্রিবিউন

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven + seven =