আহত বাঘের বিক্রমে ফিরে কাঙ্ক্ষিত জয় পেলো বাংলাদেশ

সালেক সুফী

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান হলো। মাঠের ভেতরের এবং বাইরের কিছু ঘটনায় প্রভাবিত বাংলাদেশ দল সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে স্বাভাবিক খেলতে পারেনি। যেভাবে হেরেছে বাংলাদেশ তা দেখে ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে দলকে আতঙ্কগ্রস্ত মনে হয়েছে। সিরিজ হারানো বাংলাদেশের জন্য কালকের খেলাটি ছিল নিজেদের অঙ্গনে ধবল ধোলাই লজ্জা এড়ানোর। আহত বাঘের ক্ষিপ্রতা নিয়ে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে অনায়াসে। সিরিজ ফলাফল আফগানিস্তানের অনুকূলে ২-১।  কিন্তু এই জয় বাংলাদেশকে টি২০ সিরিজে বাড়তি মনোবল যোগাবে।

টসজয়ী অতিথি দল প্রথম ব্যাটিং করে শরিফুল এবং তাসকিনের তুখোড় বোলিংয়ের মোকাবেলায় ১২৩ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ শুরুতে ফজল ফারুকীর বলে দ্রুত ২ উইকেট হারালেও লিটন দাস (৫৩*) এবং সাকিব আল হাসানের (৩৯) ব্যাটিংয়ে ভর করে ২৬.৩ ওভার হাতে রেখে সহজেই ৭ উইকেটে ম্যাচ জয় করে। ধবল ধোলাই  লজ্জা এড়ানো গেলেও ১-২ ম্যাচে সিরিজ পরাজয়ের তিলক পড়লো বাংলাদেশ।

কাল তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলেছিল বাংলাদেশ।  আগের ম্যাচের তিন পেসার এবাদত, মুস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ ছিল না।  ওদের স্থানে তাসকিন, শরিফুল এবং স্পিনার তাইজুলকে সুযোগ দেওয়া হয়। শরিফুল (৪/২১) এবং তাসকিন (২/২৩) নিজেদের সেরা বোলিং দিয়ে ম্যাচ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন বোলার  রাশিদ খানকে এই ম্যাচে বিশ্রাম দেয়।  দুজন তরুণ খেলোয়াড়কে কাল সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করে কালকের ম্যাচটি হালকাভাবে নিয়েছিল ওরা।  কেন ওরা ধবল ধোলাইয়ের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলেনি আলোচনা হতেই পারে।

বাংলাদেশের দুর্দান্ত ফিরে আসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবো না। আমি বরাবর বলেছি প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের বিশাল পরাজয় আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। মাঠের ভেতরের এবং বাইরের কিছু ঘটনার প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। দ্বিতীয় ম্যাচে দলকে আতংকিত মনে হয়েছে।

কাল কিন্তু শুরু থেকেই দলকে অনেক কৃতকল্প মনে হয়েছে। শরিফুল, তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিং এবং দলের তুখোড় ফিল্ডিং শুরুতেই আফগানদের কোণঠাসা করে ফেলে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাইলফলক স্থাপনকারী দুই মারকুটে ওপেনার রামানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান ফুৎকারে উড়ে যায়। রাহমাত শাহ, হাসমাতুল্লাহ শাহিদী, মোহাম্মদ নবি কিছু করতে পারেনি।

একসময় মনে হয়েছিল দলটি হয়তো ১০০ রানের নিচেই গুটিয়ে যাবে। কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল আজমাতুল্লাহ ওমারজাই (৫৬)। তবুও ১২৪ রান বাংলাদেশের জন্য ছিল সহজ টার্গেট। দ্বিতীয় ম্যাচে গুরবাজ এবং জাদরানের মারকুটে ব্যাটিংয়ের মোকাবিলায় অসহায় ছিল বাংলাদেশ আক্রমণ।  কাল কিন্তু শরিফুল (৪/২১) এবং তাসকিনের (২/২৩) বোলিং মোকাবিলায় একই রকম অসহায় মনে হয়েছে আফগানদের।

বাংলাদেশ শুরুতে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় ফজল হক ফারুকীর কাছে কিছুটা ধাক্কা খেলেও অধিনায়ক লিটনের নিজেকে ফিরে পাওয়া অপরাজিত ৫৩ রান এবং সাকিবের সহজাত ৩৯ রানের ইনিংস ভর করে ২৩.৩ ওভারেই ৭ উইকেটে ম্যাচ জয় করে। সিরিজের ফলাফল আফগানিস্তান ২ বাংলাদেশ ১। বাংলাদেশ ধবল ধোলাই এড়িয়েছে। অথচ এই সিরিজ ৩-০ জয় করলে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে ৫ম হবার সুযোগ ছিল।

সিরিজ নিয়ে অনেক পোস্ট মর্টেম হবে। বাংলাদেশের অস্বাভাবিক পারফরমেন্স নিয়ে অনেক পর্যালোচনা হবে। আফগান দলের বোলিং নিঃসন্দেহে বিশ্বমানের। কিন্তু ব্যাটিং অনেক ক্ষীণ।  বাংলাদেশ কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলেনি। যাক সেই কথা, সিরিজ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ আগামীতে ভুলগুলো শুধরে  নিলে মঙ্গল। সিরিজটি নিদ্রা থেকে জাগানোর সংকেত হিসাবে বিবেচিত হবে বলে বিশ্বাস করি। আফগানরা ভালো মতোই ঝাঁকুনি দিয়েছে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − ten =