আহমেদাবাদে কালো টুপি বজ্রপাত

সালেক সুফী

কাল ৫ অক্টোবর ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে তাসমান সাগরের দ্বীপদেশ নিউ জিলান্ড সুনামিতে প্লাবিত করলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্স ইংল্যান্ডকে। অঘটন বলবো না। দল  দুটি কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দল। কাল একতরফা খেলায় টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করা ইংল্যান্ড ২৮২/৯ পুঁজি গড়েছিল।  ওদের নিজেদের চেনা বাজ্ব্ল ক্রিকেট কৌশল প্রয়োগ করে টর্নেডো বেগে ৩৬.২ ওভারে ২৮৩/১ করে ৮২ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল জয়ে শুভ সূচনা করেছে নিউজিল্যান্ড।  বিশ্লেষকেরা কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম, ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট খেলে থাকা ইংল্যান্ডকে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট বিবেচনা করেছে। একটি পরাজয়ে সব কিছুর শেষ হয় নি। কিন্তু এমন পরাজয়ে বিপর্যস্ত দলকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক কঠিন পথ পারি দিতে হবে। দুটি দলের শক্তি সামর্থের ব্যাবধান কিন্তু বিশাল বলবো না। কিন্তু এভাবে ভূমিধস জয় ছিনিয়ে নিবে সেটি হয়তো কল্পনাও করেনি খোদ নিউজিল্যান্ড সমর্থকরা।

অনেক হাক ডাক করে অনুষ্ঠান করা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটিতে কিন্তু নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের বিশাল গ্যালারী বলা চলে ফাঁকা ছিল। অনেকের মতে ১৪ অক্টোবর এই মাঠ পাকিস্তান-ভারত ম্যাচে দর্শক সমর্থকে টইটম্বুর থাকবে। ইতোমধ্যে সব টিকেট নাকি বিক্রি হয়ে গাছে।

কাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দলে ১০০% ফিট না থাকায় অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস ছিল না। টিম সৌদি এবং লকি ফার্গুসনকেও নেয়া হয় নি। ইংল্যান্ড দলেও নেয়া হয় নি বেন স্টোকসকে।  টস জয়ী হয়ে টম লাথাম ইংল্যান্ড দলকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানায়।  উইকেটে জুজু ছিল না। ট্রেন্ট বোল্টকে খেলতে আদৌ বেগ পেতে হয়নি জনি বেয়ারস্টোকে।  কিন্তু অন্যদিকে হেনরী সঠিক চ্যানেলে বল করে সুইংয়ের বিশে দংশন করে ডেভিড মালানকে সহসাই ফিরিয়ে দিলো। বেয়ারস্টোর সঙ্গী হয়ে ভালো সূচনা করেছিল জো রুট।  ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়কের হাতে বোলিং বিকল্প ছিল সীমিত।  তাই কিছু আগেই আক্রমণে আনা হয়েছিল বাম হাতি স্পিনার সান্টনারকে।  ওর একটি বল ইনসাইড আউট ড্রাইভ করে ডিপ কভারে ধরা পড়লো ভালো খেলতে থাকা ৩৩ রান করা বেয়ারস্টো।  এর পর ভালো বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে ইংল্যান্ড দলকে চেপে ধরে কিউই পাখির ঝাঁক। একমাত্র রুট (৭৭) আর অধিনায়ক বাটলার (৪৮) ছাড়া কেউ পারেনি উল্লেখযোগ্য কিছু করতে। আর তাই নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২৮২/৯ রানে সীমিত থাকে ইংল্যান্ড ইনিংস।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসকে কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা দিয়েছিলো স্যাম কুরান। নিজের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দিয়েছিলো উইল ইয়াংকে। কিন্তু এর পর অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ডেভন কোনওয়ে (১৫২*) এবং রাচীন রাভিন্দ্র (১২৩*) ২৭৩ রানের মাইলফলক স্থাপন করে বিদ্ধস্ত বিপর্যস্ত করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্সদের। ঠিক যেন ইংল্যান্ডের বাজবল ব্যাটিং কৌশলে ওদের বধ করা। কোনওয়ে ১২১ বলে করা ইনিংসে ১৯ টি চার এবং ৩ টি ছক্কা হাকিয়েছিলো। রাভিন্দ্রের ৯৬ বলে করা ১২৩ রানের ইনিংসে ছিল ১১ চার এবং ৫ ছক্কা। এমন বেধড়ক পিটুনি খুব কম খেয়েছে ইংলিশ বোলাররা। মার্ক উড ৫ ওভারে ৫৫ এবং ক্রিস ওকস ৬ ওভারে ৪৫ রান হজম করে। বিশাল জয়ে শুরু করা নিউজিলান্ডের বিশ্বকাপ মিশনের শুভ সূচনা ২০১৯ বিশ্বকাপের মধুর প্রতিশোধ। গিরিখাত থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ইংল্যান্ডকে কঠিন সংগ্রাম করতে হবে। কালকের ম্যাচটিকে যথার্থ অর্থে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট সুনামী মনে হয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে এমনি ঘটনা যে আরো ঘটবে না কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen − five =