আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিরতি সিরিজ সহজ হবে না

সালেক সুফী

রাত পোহালেই ৯ এপ্রিল ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে শুরু হবে আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ। শীতের সূচনায় আয়ারল্যান্ড নিজেদের মাঠে সিরিজ অনুষ্ঠানের অবস্থায় না থাকায় প্রতিবেশী ইংল্যান্ডের মাঠে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সিরিজ।  আইসিসি ওডিআই লীগের অন্তর্ভুক্ত এই সিরিজ বাংলাদেশের চেয়েও আয়ারল্যান্ডের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আয়ারল্যান্ডকে খেলতে হলে বাংলাদেশকে এই সিরিজে ৩-০ হারাতে হবে। দুই দলের   তুলনামূলক দলীয় ভারসাম্য এবং   সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ ফেভারিট  হিসাবেই শুরু করার কথা। নিকট অতীতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দুই দলের তিন ফরম্যাটের সিরিজগুলো বাংলাদেশ দাপটের সঙ্গেই জিতেছিল।

তবে আবহাওয়া আর পরিবেশ ছিল ভীষণভাবেই প্রতিকূল আয়ারল্যান্ডের জন্য। আর এখন শীতের শুরুতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট পরিবেশ আয়ারল্যান্ডের জন্য অনুকূল হলেও বাংলাদেশ দলের জন্য পুরোপুরি বিপরীত হবে। আর তাই শক্তির ব্যাবধান যাই থাকুক বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয় এতো অনায়াসলব্ধ হবে না।

গত সিরিজ শেষে বাংলাদেশের অধিকাংশ খেলোয়াড় ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাকিব আল হাসান, লিটন দাস এবং মুস্তাফিজকে আইপিএল খেলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন অনুমতি দেওয়া হয়। সাকিব নিজেকে আইপিএল থেকে উন্মুক্ত করে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন, দেশে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করার পর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।

মুস্তাফিজ দিল্লী ক্যাপিটালস এবং লিটন কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগদান করে। মুস্তাফিজ দুটি আর লিটন ১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়।  বিভিন্নভাবে সবাই এখন দলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে অবস্থান  করছে। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সপ্তাহ খানেক আগে ইংল্যান্ড গেলেও বৈরী আবহাওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুতিমূলক খেলা খেলতে পারেনি।

অবশ্য দেশ ছাড়ার আগে অধিকাংশ খেলোয়াড় নিয়ে বাংলাদেশ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কয়েকদিন অনুশীলন করে। বলা যায় ইংল্যান্ডের উইকেট এবং পরিবেশে অনেকটা প্রস্তুতিহীনভাবেই শুরু করবে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড খেলবে পরিচিত পরিবেশে। উপরন্তু বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকায় খেলে ওদের মূল্যবান অভিজ্ঞতা হয়েছে।

ঘনিয়ে আসছে এশিয়া কাপ। বিশ্বকাপ দূরে নয়। বাংলাদেশ এর মাঝে শুধু আফগানিস্তানের সঙ্গে দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ পাবে। তাই কাল থেকে শুরু হয় সিরিজটি দলের কম্বিনেশন যাচাই করার বলা যায় শেষ সুযোগ।

বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য খেলোয়াড় বহু ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ইংল্যান্ড সিরিজের পর কথিত বিশ্রাম দেয়ার নামে দলের বাইরে রেখেছে। ওর শূন্যস্থানে নেওয়া ইয়াসির রাব্বি দক্ষতা বা অভিজ্ঞতায় রিয়াদের সাথে তুলনীয় না হলেও আয়ারল্যান্ড সফরেও রিয়াদকে নেয়া হয়নি। হয়তো চলতি সিরিজেই রিয়াদের অনুপস্থিতি অনুভূত হতে পারে।

নতুন পরিবেশে নবীন খেলোয়াড়দের মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে না। উচিত ছিল মাহমুদুল্লাহকে খেলার মাঝে রাখা।  ওপর তরুণ আফিফ হোসেনকে ফর্মহীনতার কারণে বাদ দেওয়া হলেও তাকে ওয়েস্টইন্ডিজের সফরকারী এ দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ এ দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ স্কোয়াড: তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান, রনি তালুকদার,  ইয়াসির আলী রাব্বি, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ এবং মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।

আয়ারল্যান্ড অপরদিকে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার শেষ চেষ্টা হিসাবে পূর্ণ শক্তির দল ঘোষণা করেছে। আয়ারল্যান্ড স্কোয়াড: এন্ড্রো বলব্রাইন , মার্ক আদায়ের, কার্টিস ক্যামফার, গ্যারেথ ডেলানি, জর্জ ডকরেল, স্টিফেন দোহেনি, ফিওনা হ্যান্ড, গ্রাহাম হিউম, জস লিটল, এন্ডি ম্যাকব্রাইন, পল স্টার্লিং,  হ্যারি টেক্টর, লড়কান টাকার এবং ক্রেগ ইয়ং।

বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা সফরে আয়ারল্যান্ডের মূল দুর্বলতা ছিল উইকেট অনুযায়ী বোলিং আক্রমণ। বৈরী অবস্থায় কিন্তু ব্যাটিং মাঝে মাঝে ভালো করেছে। দলনায়ক বালব্রাইন, পল স্টার্লিং, হারি টেক্টর, লড়কান টাকার কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছে। ইংলিশ কন্ডিশনে শীতের শুরুতে বাংলাদেশের ফিঙ্গার স্পিনার সুবিধা পাবে না। তরুণ পেস আক্রমণ কত দ্রুত মানিয়ে নিবে সেটি দেখতে হবে।

আবার বাংলাদেশের পেস আক্রমণের মূল ভরসা তাসকিন দলে নেই। অপরদিকে আয়ারল্যান্ড দুইজন ফ্রন্টলাইন পেসার জস লিটল এবং ক্রেগ ইয়াংকে ফিরে পাওয়ায় পেস আক্রমণ অনেক শক্তিশালী হবে। কার্টিস ক্যামফার, মার্ক আদায়ের পরিচিত উইকেটে ভালো বল করবে।

বাংলাদেশের ব্যাটিং অনেকটাই নির্ভর করবে তামিম, মুশফিক, সাকিবের উপর। জানিনা আইপিএল খেলতে ভারতে কেকেআর ডাগ আউট বসে থেকে লিটনের হতাশা সৃষ্টি হয়েছে কি না। আমি নিশ্চিত নই শান্ত, হৃদয় বা ইয়াসির নতুন পরিবেশে কেমন ব্যাটিং করবে। আমি এতটুকু বলতে পারি আয়ারল্যান্ডে বিগত সফরে ভালো খেলা মাহমুদুল্লাহকে বাংলাদেশ মিস করবে।

যাহোক বাংলাদেশ দল জয়ের ধারায় আছে।  জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে নিজেদের সেরা খেলা ক্রমাগত উপহার দিয়েই জিততে হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty + ten =