সালেক সুফী: আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব ওডিআই চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ওডিআই ম্যাচের ফিরতি সিরিজ খেলতে মে মাসে বিদেশ সফরে যাচ্ছে। খেলাগুলো হবে শীতের শুরুতে ইংল্যান্ডের মাটিতে। তখন আকাশ ভারী থাকে। বল সুইং করে। পেস বোলাররা বাড়তি সুবিধা পায়। আয়ারল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা আবহাওয়া এবং পরিবেশের সঙ্গে অনেক বেশি অভ্যস্ত। নবীন প্রবীনের মিলনে গড়া বাংলাদেশের জন্য সফরটি হবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য অ্যাসিড টেস্ট।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে পরিবর্তনের বাঁকবদল শুরু হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দেশের মাটিতে একদিনের সিরিজের পর থেকে পরিবর্তনের সুবাতাস লেগেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ওডিআই ক্রিকেটে বাংলাদেশ সব সময় তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী। শুভ পরিবর্তন এসেছে সংক্ষিপ্ততম টি২০ ফরম্যাটে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দলকে ঘরের মাঠে ধবল ধোলাই এবং এর পর সফরকারী আয়ারল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে সব ফরম্যাটে সিরিজ জয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এখনো সক্রিয় বিশ্বমানের সাকিব, তামিম, মুশফিক, তাইজুল । সঙ্গে আছে পরিণত হবার পথে লিটন, শান্ত, তাসকিন, মিরাজ। যোগ হয়েছে তাওহীদ হৃদয়, হাসান মাহমুদ, এবাদত, রনি তালুকদার। আমি অবশ্য মনে করি ওডিআই দলে অভিজ্ঞ এবং পরিণত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি।
সোনালি প্রজন্মের পঞ্চপান্ডব ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে একে একে স্মৃতি বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। মাশরাফি থেকেও নেই। তামিম, মুশফিক টি২০ থেকে অবসরে। মাহমুদুল্লাহ টেস্ট থেকে অবসর নিলেও টি২০ এবং ওডিআই থেকে অবসর ঘোষণা করেননি। সম্প্রতি তাকে টি২০ নেওয়া হচ্ছে না। ওডিআই থেকেও বিশ্রামের নামে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মাহমুদুল্লাহ কিন্তু বাংলাদেশের লোয়ার মিডল অর্ডারে প্রমাণিত সফল ব্যাটসম্যান। দেশে এবং বিদেশের মাটিতে বহুবার কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাটিংত্রাতা হয়েছে। তাকে চট জলদি ছেটে ফেলা কতটা বিবেচনা প্রসূত ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
ইংল্যান্ডের পরিবেশে যখন সব দেশ অভিজ্ঞ খেলোয়ারদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে সেখানে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হতে পারে। জানিনা তরুণ ব্যাটসম্যানরা বৈরী পরিবেশে নিজেদের কতটা মানিয়ে নিতে পারবে। মাহমুদুল্লাহ এবং অবশ্যই আফিফ হোসেনকে বিবেচনায় নেওয়া যেত। আমরা জানি বাংলাদেশের বিতর্কিত হেড কোচ হাতুরাসিংহের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সুসম্পর্ক ছিল না বা নেই। মাশরাফি তার সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলো। মমিনুলের ক্যারিয়ার সংকীর্ণ হয়েছে তার কারণে। অভিযোগ আছে আনামুল হক বিজয়ের প্রত্যাবর্তনের পথেও মূল বাধা হাতুরাসিংহে।
আয়ারল্যান্ড কিন্তু বাংলাদেশ সফরের শেষ দিকে নিজেদের ফিরে পাচ্ছিলো। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা অনেকটাই ধরে ফেলেছিলো। নিজেদের চেনা পরিবেশে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে ওরা কিন্তু মরিয়া থাকবে সাফল্য পেতে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার বিশেষত তামিম, শান্ত খুব একটা ভালো খেলেছে বলা যাবে না। বিজয়কে বিবেচনায় নেওয়া যেত। মাহমুদুল্লাকে দলে না নিয়ে কোন যুক্তিতে ইয়াসির আরাফাতকে নেওয়া হয়েছে বোধগম্য নয়। স্থানীয় ক্রিকেটে নিয়মিত রান পাচ্ছে বিজয়, রিয়াদ। নিজেদের প্রমাণ করার জন্য আর কি করবে ওরা।
যদিও বাংলাদেশের জন্য সিরিজটির ফলাফল সরাসরি ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলায় প্রভাব ফেলবে না তাই সময়ের সেরা দল নিয়ে বাংলাদেশের যাওয়া উচিত ছিল। ইয়াসির এমনকি তাওহীদ হৃদয় মাহমুদুল্লার প্রতিস্থাপক এখনো নয়।
যাহোক আমি চাই বাংলাদেশ জয়ের ধারা বজায় রাখুক। মৃত্যুঞ্জয়কে দলে নেওয়া সমর্থন করি। তাসকিনের অনুপস্থিতিতে উদীয়মান মৃত্যুঞ্জয় ভূমিকা রাখতে পারবে; এবাদত, হাসান মাহমুদ এবং মুস্তাফিজের সাথে। কিন্তু বাংলাদেশকে ভালো ব্যাটিং করে নিয়মিত ২৯০-৩০০ রান করতে হবে। কাজটি আদৌ সহজ হবে না।