‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার’-এ মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

নাটকের মানুষ ইশরাত নিশাত। তাঁর স্বপ্ন ছিল থিয়েটারে আসবেন নতুন সব ছেলেমেয়ে। তাঁরা দক্ষ থিয়েটারকর্মী ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে গড়ে উঠবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়াত ইশরাত নিশাতের নামে প্রবর্তন করা হয়েছে পুরস্কার। মঞ্চের গুণী ব্যক্তিত্ব ইশরাত নিশাত স্মরণে ২০২২ সালে এ উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়। দেশ নাটকের সহায়তায় নিশাতের নামে পুরস্কারটি প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে ‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার’ বাস্তবায়ন কমিটি। গত বছরের ধারাবাহিকতায় আবারও এ পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে এটিই বাংলাদেশে প্রবর্তিত প্রথম প্রতিযোগিতামূলক নাট্য পুরস্কার।

৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেওয়া হবে ‘ইশরাত নিশাত নাট্য পুরস্কার’। শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের আসরের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

গেল বছর ৮টি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হলেও এ বছর ৯টি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হবে। নাট্যকর্মীদের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর যুক্ত হওয়া ক্যাটাগরিটি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ পোশাক পরিকল্পক।

৯ বিভাগে যাঁরা পেলেন মনোনয়ন:

১. শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা- নাট্যদল প্রাচ্যনাটের ‘অচলায়তন’, তাড়িুয়ার ‘আদম সুরত’, আরশিনগরের ‘সিদ্ধার্থ’।

২. শ্রেষ্ঠ নির্দেশক- আবুল কালাম আজাদ, বাকার বকুল, রেজা আরিফ।

৩. শ্রেষ্ঠ নাট্যকার- বাকার বকুল, মুক্তনীল, শাহাদুজ্জামান।

৪. শ্রেষ্ঠ অভিনেতা- খায়রুল আলম হিমু, প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ, রমিজ রাজু।

৫. শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- ফৌজিয়া করিম অনু, সঞ্জিতা শারমীন, সানজিদা প্রীতি।

৬. শ্রেষ্ঠ মঞ্চ পরিকল্পক- আহম্মেদ অপু, চারু পিন্টু, মো. সাইফুল ইসলাম।

৭. শ্রেষ্ঠ আলোক পরিকল্পক- অনিক কুমার, মো. সাইফুল ইসলাম, হেনরি সেন।

৮. শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিকল্পক- জনি সেন রুবেল, নীল কামরুল, সমুদ্র প্রবাল।

৯. শ্রেষ্ঠ পোশাক পরিকল্পক- আফসান আনোয়ার, এনাম তারা সাকি, জিনাত জাহান নিশা ও নুসরাত জাহান জিসা।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সরব থাকা ইশরাত নিশাত। তাঁর স্মরণে ২০২২ সালে এই পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রতিটি পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার টাকা এবং সাথে একটি ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। শ্রেষ্ঠ প্রযোজনার পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ১ লক্ষ টাকা।

প্রয়াত অভিনেত্রী নাজমা আনোয়ারের মেয়ে ইশরাত নিশাত ঢাকার মঞ্চ নাট্যাঙ্গনে ‘বিদ্রোহী কণ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইশরাত নিশাত ‘দেশ নাটক’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মঞ্চে একাধারে অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে খ্যাতি ছিল তাঁর। তাঁর নির্দেশনায় ‘দেশ নাটকে’র প্রযোজনা ‘অরক্ষিতা’ প্রশংসিত হয়। নাসির উদ্দীন ইউসুফের আলোচিত ‘আলফা’ চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অনেক নাটকে ও আবৃত্তি প্রযোজনায় মঞ্চ ও আলোক নির্দেশকের কাজ করে সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি নিজেকে করে তুলেছিলেন অনন্য।

প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইশরাত নিশাত বলেছিলেন, ‌‘আমি মঞ্চে অভিনয় করব না কিংবা করব, এটা বিষয় না। আমি মূলত পুরো থিয়েটার নিয়ে কাজ করতে চাই। একসময় অভিনয় করতাম, এখন করি না। এখন নতুন যাঁরা আসছেন, তাঁদের জায়গা দিতে হবে। তা ছাড়া দলে যেকোনো কাজই থিয়েটার করার মধ্যে পড়ে।’ ইশরাতকে প্রায় প্রতিদিনই শিল্পকলা একাডেমিতে দেখা যেত। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তাঁর কণ্ঠ ছিল সব সময় সোচ্চার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen + 12 =