ঈদুল আজহায় মুক্তির অপেক্ষায় ফেরদৌস-ভাবনার ‘‌দামপাড়া’

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সিনেমা ‘দামপাড়া’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন শুদ্ধামন চৈতন। এতে পুলিশ সুপারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। শামসুল হকের স্ত্রী মাহমুদা হক চৌধুরীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আশনা হাবিব ভাবনা। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত। গত বছরের জুনেই শুটিং শেষ হয়েছিল দামপাড়ার।

সম্প্রতি সেন্সর পেয়েছে সিনেমাটি। এটি শুদ্ধামন চৈতনের পরিচালিত প্রথম সিনেমা। এর আগে নাটক নির্মাণ করে হাত পাকিয়ে এবার বড় পর্দায় সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় এ নির্মাতা। সিনেমাটি নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌আমি সিনেমাটা নিয়ে উচ্ছ্বসিত, কারণ প্রথম সিনেমায়ই দেশের মহান স্বাধীনতার প্লট নিয়ে কাজ করা সৌভাগ্যের বিষয়। প্রথমে এটা তথ্যচিত্র বানানোর কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প হিসেবেই তুলে ধরা হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) প্রযোজনায় সিনেমাটি নির্মিত। ’

সিনেমার গল্প নিয়ে শুদ্ধামন চৈতন বলেন, ‘‌তৎকালীন সময়ে যারা প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরিতে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গিয়ে যে বিদ্রোহ গড়ে তোলেন, সেটি শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের মাধ্যমে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশ পুলিশের অবদান ছিল অসামান্য। তার অবদান নিয়েই এ সিনেমার গল্প।’ সিনেমার মুক্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, ‘‌সবে আমরা দামপাড়ার সেন্সর পেয়েছি, যেটা অনেক আনন্দের আমাদের জন্য। পরিকল্পনা রয়েছে ঈদুল আজহায় সিনেমাটি বড় পর্দায় মুক্তি দেয়ার। শিগগিরই সিনেমার মুক্তির বিষয়ে জানাব।’

দামপাড়া সিনেমার অন্যতম চরিত্র মাহমুদা হক চৌধুরী। ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী শামসুল হককে হারিয়ে তিনি চাকরি ও সন্তানদের নিয়ে লড়াই করেছেন। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সেবায় যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মাহমুদা হকের অবদানের চিত্র পর্দায় তুলে ধরেছেন আশনা হাবিব ভাবনা। এ নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘‌দামপাড়ায় আমি বাংলাদেশের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূতের চরিত্রে অভিনয় করেছি। সত্যি বলতে মাহমুদা হক চৌধুরীর চরিত্রটি আমার খুব আপন মনে হয়েছে। সত্তরের দশকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন, ঘর ও চাকরি দুইই চালিয়ে যাওয়া সহজ কিছু নয়। যুদ্ধ চলাকালীন তার অবদানের কথা সবার জানা। তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সিনেমার শুটিংয়ের আগে আমি তার সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি। এমনকি শুটিংয়ের সময়ও তিনি থেকেছেন। আমি তার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। মজার কথা হচ্ছে, তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমি তার চরিত্রের সঙ্গে আমার অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি।’

এ সিনেমায় নিজের চরিত্রটি দুটি ভাগে দেখানো নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘দর্শক দামপাড়ায় আমাকে দুটি সময়ে দেখবে। এর একটিতে ২০ বছর বয়সের একজন তরুণীর চরিত্রে ও অন্যটিতে মাহমুদা হক বাংলাদেশে ফেরত আসার পরের সময়টায় একজন ৪০ বছরের সংগ্রামী সফল নারী রূপে।’

সিনেমাটিতে নিজের চরিত্র নিয়ে এর আগে ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে অস্ত্রের গুদামের দায়িত্ব ছিল এসপি শামসুল হকের কাছে। পাকিস্তানি আর্মিরা তার কাছে গুদামের চাবি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি পাকিস্তানি আর্মিদের নজর এড়িয়ে সব অস্ত্র চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। যে কারণে পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আর্মিরা তাকে অবর্ণনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে খুন করে। এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করে আমি গর্বিত।’

প্রয়াত এম শামসুল হক ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের জীবন বাজি রেখে তিনি চট্টগ্রামের জনগণের সঙ্গে পুলিশকে এক করে জনযুদ্ধের সূচনা করেন। ২৮ মার্চের পর চট্টগ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে সার্কিট হাউজে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার এ স্মৃতিকে ধরে রাখতে ও মুক্তিযুদ্ধে এ বীরের অবদান তুলে ধরতে সিএমপি এ সিনেমা নির্মাণ করছে। এর গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন আনন জামান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five + four =