উজ্জীবিত নতুন বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়

সালেক সুফী

টেস্ট খেলুড়ে পরিবারে দুই যুগ পার করে পরিবর্তিত বাংলাদেশ এই প্রথম পাকিস্তানকে বাংলা ওয়াশ করে টেস্ট সিরিজ জয় করলো। দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট বাংলাদেশ জিতেছিল ১০ উইকেটে। আজ এই মাত্র দ্বিতীয় টেস্ট ৬ উইকেটে জিতে নিয়ে ওদের আঙিনায় পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করেছে। সিরিজ জুড়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে উজ্জীবিত বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ছিল আধিপত্য।  কখনো মনে হয় নি বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দল।  পর পর দুই টেস্টে বাংলাদেশের জয়, সিরিজ ধবল ধোলাই বাংলাদেশ বর্তমান কঠিন সময়ে জাতিকে নতুন সৃষ্টির উন্মাদনায় উজ্জীবিত করবে।

প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়ে পাকিস্তানের অহম আহত হয়েছিল।  দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে সম্মান রক্ষার জন্য বেপরোয়া ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ব্যাক্তিগত মেধা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনো। কিন্তু দল হিসাবে কেন জানি বাংলাদেশ সুসমন্বিত ভাবে খেলতে পারছিলো না। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এর আগে বাংলাদেশ ১৩ টেস্টের ১২ টি হেরেছিল। সেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মনে হলো পথের বাধা অপসারিত হয়েছে। যেন সবাই বাধাহীন মুক্ত বিহঙ্গ। যে দাপটের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছে দল হিসাবে বাংলাদেশ মনে হয়েছে দুর্বার দুর্বিনীত। পাকিস্তান পুরো পুরি পর্যুদস্ত।

এই টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে খেলা হয় নি। চার দিনের টেস্টে হিসাব করলে খেলা হয়েছে তিন দিনের সামান্য কিছু বেশি।  আর তাতেই ৬ উইকেটে হেরে গাছে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে মেহেদী মেরাজের ঘূর্ণি বলের কাছে আত্মসমর্পণ করে ২৭৪ রান করেছিল পাকিস্তান। তৃতীয় দিন সকলে উইকেট পরিবেশের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২২/৬ কোনঠাসা করেও বাংলাদেশকে দমাতে পারেনি। লিটন – মিরাজ বীরের মত লড়াই করে ১৬৯ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, তাসকিন তিন পেসার সম্মিলিত ভাবে সাঁড়াশি  আক্রমণ করে ১৭২ রানে গুটিয়ে দেয় পাকিস্তানকে। জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮৫ রানের। বাধা হতে পারতো বৃষ্টি, বজ্র বৃষ্টি।  বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যানের সবার সম্মিলিত অবদানে ১৮৫/৪ করে ৬ উইকেটের জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। পরিণতি টেস্ট এবং সিরিজ জয়. বিদেশে দ্বিতীয় ধবল ধোলাই।

কাকে রেখে কার অবদান বড় করে দেখবেন।  সাদমান, জাকির, শান্ত, মোমিনুল, মুশফিক, লিটন, মেহেদী, সাকিব কিছু না কিছু করেছে। মুশফিক এবং লিটনের দুটি অতি মানবিক ইনিংস মাইল ফলক রচনা করেছে। হাসান মাহমুদ, শরিফুল, নাহিদ, তাসকিন পাকিস্তানী পেসারদের থেকে এল কেড়ে নিয়েছে। মেহেদির চৌকষ ক্রিকেট দলকে আগুয়ান করেছে। পাকিস্তানের সাধারণ দর্শকদের বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের বন্দনা করতে দেখেছি। তারুণ্যের উদ্বোধনে  নতুন বাংলাদেশের জয়ের মিছিল জাতিকে নব সৃষ্টির উল্লাসে প্লাবিত করবে সন্দেহ নেই। বৃহস্পতি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × five =