উত্তপ্ত পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে বিপর্যস্ত করে জয়ের পথে ভারত

সালেক সুফী

প্রথম দুই দিন নানা  নাটকের পর তৃতীয় দিন শেষে  গুরুত্বপূর্ণ বর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট জয়ের পথে ভারত।

রোদেলা পার্থ  কাল ছিল উষ্ণ তপ্ত।ে বদলে যাওয়া উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বমানের বোলিংকে নাকানী চুবানী খাইয়ে ভারত ৪৮৭/৬ করে অস্ট্রেলীয়কে দুই দিনের বেশি সময়ে জয়ের জন্য ৫৩৪ টার্গেট দিয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে কোন দল চতুর্থ ইনিংসে ৪১৮ র বেশি রান তাড়া করে টেস্ট জয় করেনি।

দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া তরুণ ওপেনার নাথান মাকুইনি, মার্নাস লেবুচ্যাং এবং  নৈশ প্রহরী পাট কামিন্সের ৩  উইকেটে হারিয়ে সংগ্রহ করেছে ১২ রান। জয়ের নিশানা সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। উইকেটে  ফাটল ধরেছে, অস্ট্রেলিয়ার নাথান লায়ন অনেক টার্ন বাউন্স পেয়েছে।  ভারতের শক্তিশালী বোলিং মোকাবিলা করে ম্যাচ জয় করা অস্ট্রেলিয়ার সামর্থের বাইরে নিশ্চিত ধরে নেওয়া যেতেই পারে।

প্রথম ইনিংসে ১০৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া রান তাড়া করে ম্যাচ জয় করবে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারছে না। বলা যায় ভারত ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট নিশ্চিত জয়ের পথে। প্রথম ইনিংসে ভারত ১৫০ রানে গুটিয়ে যাবার পর অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১০৪। দ্বিতীয় ইনিংসে সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে ভারত অস্ট্রেলিয়ার সামনে তুলে ধরেছে দুর্গম গিরি কান্তার মরু।

ভারত ইনিংসের মাইল ফলক অর্জন নবীন তারকা জয়সোয়াল এবং কে এল রাহুল উদ্বোধনী জুটির ২০১ রান।  বিশেষ করে ২২ বছরের মেধাবী তরুণ জয়সোয়াল অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম আবির্ভাবে ১৬১ রানের চোখ জুড়ানো ইনিংস খেলে প্রমাণ করেছে কেন ওকে বিস্ময় তরুণ ভাবা হচ্ছে। অথচ প্রথম ইনিংসে জয়সোয়াল  রানের খাতা খুলতে পারেনি।

প্রথম ইনিংসে ভারতের ১৫০ রান এবং জবাবে অস্ট্রেলিয়ার ১০৪ রানের পর কেউ ভাবেনি একই উইকেটে ভারত দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। তরুণ জয়সোয়াল এবং রাহুল দ্বিতীয় দিনেই প্রথম উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ১৭২ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে কোনঠাসা করে ফেলে।

তৃতীয় দিন সকালে জুটি ২০১ রান করে অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়া দলের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেট জুটির নতুন মাইল ফলক গড়ে তুলে। ৭৭ রান করে রাহুল ফিরে গেলে অভিষিক্ত দেবদূত পাডিকোল যোগ দেয় জয়সোয়ালের সঙ্গে।

ভিরাট এসে যোগ দেয় ভারত ক্রিকেটের উদীয়মান তারকার সঙ্গে। এই জুটি ৭৪ রান যোগ করলে অস্ট্রেলিয়া ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে  থাকে। জয়সোয়াল আক্রমণাত্মক স্ট্রোকস খেলে শত রান করার পর সাবলীল গতিতে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলে। সঙ্গী তখন ভারত ব্যাটিং কিংবদন্তি বিরাট কোহলী। হয়ত কোহলী নিজেও অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকে তারুণ্যের তেজোদীপ্ত ব্যাটিং।

২৯৭ বল খেলে ১৬১ রান করা জয়সোয়াল ফিরে গেলে দ্রুত ৮ রানে তিনটি উইকেটের পতন ঘটে। বিরাট খুঁজে পায় নিজের ছন্দ। পরিশ্রান্ত অস্ট্রেলিয়া বোলিং নির্দয় ভাবে প্রহার করে কোহলী (১০০*) , ওয়াশিংটন সুন্দর (২৯) আর নিতেশ রেড্ডী (৩৮*) রানের পাহাড় গড়ে তুলে। বেশ কিছু দিন ধরে রান খরায় থাকা বিরাট ৩০ম টেস্ট সেঞ্চুরি করে চলতি সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার আতঙ্ক হয়ে আবির্ভুত হয়েছে বলা যায়।

৪৮৭/৬ উইকেটে পৌঁছে ৫৩৪ রানের আকাশ ছোয়া টার্গেট ছুড়ে দেয় ভারত। দিনশেষে বিপর্যস্ত অস্ট্রেলিয়া ১২ রান করতেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। ধরা যেতেই পারে প্রথম টেস্ট বিশাল ব্যাবধানে জয়ের পথে ভারত। এই পরিস্থিতিতে বুমরা, সিরাজ, হার্সিত রানাকে মোকাবিলা করে বেশি দূর যেতে পারবে বলে মনে হয় না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 2 =