উদয়ের পথে বাংলাদেশ ক্রিকেট অঙ্গন-ক্রীড়াঙ্গন

সালেক সুফী

২৪ বছর হয়েছে বাংলাদেশ বিশ্বক্রিকেটে বনেদি টেস্ট পরিবারের সদস্য। বিলেতে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল তখনকার তুখোড় দল পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল। তখনকার ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের ক্রিকেট দূতিয়ালিতে বাংলাদেশ টেস্ট পরিবারের সদস্য হয়েছিল। দেশে ক্রিকেটের অসামান্য জনপ্রিয়তা থাকলেও কিন্তু অবকাঠামো আদৌ আন্তর্জাতিক মানের ছিল না। এখনো আছে বলবো না।

কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটার এক সঙ্গে বিকশিত হওয়ায় ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে মাশরাফি বাহিনী কোয়ার্টর ফাইনাল খেলার পর দেশে ফিরে পাকিস্তান, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ওডিআই সিরিজ জিতেছিল।

কিন্তু উন্নত ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামোর অভাবে এবং স্থানীয় ক্রিকেট নিয়ে বিসিবির মাথাব্যাথা কম থাকায় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পায়ের নিচে মাটি ছিল। অধিকাংশ টেস্ট সিরিজের আগে প্রস্তুতি ছিল দায়সারা গোছের। দেশের মাটিতে ভঙ্গুর উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারলেও বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় ছিল খর্ব শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ করার মতো ছিল এবাদত নৈপুণ্যে নিউ জিল্যান্ডকে ওদের মাটিতে হারানো আর ১০০তম টেস্টে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে টেস্ট জয়। বাংলাদেশে অভূতপূর্ব গণজাগরণের পথ ধরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনুপ্রাণিত সেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল চমক জাগানো ক্রিকেট খেলে শক্তিশালী পাকিস্তান দলকে টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই করে ইতিহাস সৃষ্টি করলো।  বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে ক্রিকেট আবার বিশ্ব ক্রীড়ামঞ্চে করলো গর্বিত অনুপ্রাণিত। ক্রিকেটের এই জয় নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করবে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘আমরাও পারি’ দর্শনে।

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে গেছে বিসিবি। প্রাক্তন সভাপতি পদত্যাগ করায় বিসিবি পেয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সভাপতি।ফারুখ আহমেদ প্রাক্তন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক এবং দীর্ঘকালীন প্রধান নির্বাচক, বিসিবিতে এসেছে খ্যাতিমান ক্রিকেট প্রশিক্ষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। দুর্নীতি এবং অপশাসনের দায়ে দুষ্ট অনেক পরিচালক পলাতক অনুপস্থিত।

প্রধান নির্বাচক হিসাবে আগেই এসেছে জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বিচক্ষণ ক্রিকেট ব্যাক্তিত্ব গাজী আশরাফ লিপু। ক্রিকেটারদের পথের বাধা দূর হয়েছে। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে একাট্টা হয়ে জয়ের জন্য খেলেছে বাংলাদেশ। আর সবকিছুর সম্মিলিত ফলাফল উপর্যুপুরি দুই টেস্ট জয় এবং বিদেশের মাটিতে ধবল ধোলাই অর্জন।

ভাবতেই বিস্ময় জাগে প্রথম টেস্টে শক্তিশালী পাকিস্তান ১০ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হেরে গেছে। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে কখনো কোনো দল পাকিস্তানকে এই ব্যাবধানে হারাতে পারেনি। একই রাওয়ালপিন্ডি মাঠে দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশ দাপুটে ক্রিকেট খেলে জিতেছে ৬ উইকেটে।

গোটা দল জেগে উঠেছে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে। বিজয় উৎসর্গ করেছে সাম্প্রতিক আন্দোলনে জীবন বিসর্জনকারী বীর শহীদদের। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ছিল অনন্য। টপ অর্ডারে সাদমান, জাকির, শান্ত সীমিত সাফল্য পেলেও মোমিনুল, মুশফিক, লিটন, মিরাজ বিস্ময় জাগিয়েছে।মাঠের বাইরে নানা ঘটনার সাকিব সিরিজটি শাকিবময় করতে না পারলেও বল হাতে মন্দ করেনি।

শরিফুল, হাসান মাহমুদ, তাসকিন, নাহিদ রানার মাধ্যমে গড়ে ওঠা অ্যালেন ডোনাল্ড পেস বলার শিষ্যরা পাকিস্তানকে তটস্থ করে রেখেছে। নাহিদ রানার মাঝে আবিষ্কৃত হয়েছে এক্সপ্রেস পেস প্রতিভা। মেহেদী মিরাজ আর সাকিব বিশ্বমানের স্পিনিং অল রাউন্ডার সবাই জানে। এরসঙ্গে দলের ব্যাক আপ ভাবুন। এবাদত, খালেদ আছে। লেগ স্পিনার হিসাবে উঠে আসছে রিশাদ হোসেন। ভাবুন পরিবেশ এবং প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে কত দ্রুত সাফল্য এসে পায়ে লুটায়।

জানি হঠাৎ করে এই সাফল্য আসেনি। দলের প্রতিটি সদস্য কঠোর অনুশীলন করেছে।পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিজেদের সেরা নিংড়ে দিয়ে দলকে জয়ের জন্য অনুপ্রাণিত করেছে। জানি জয় জয়ের জননী। এই সিরিজ জয় বাংলাদেশকে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ স্থানে উন্নীত করেছে। পাকিস্তান জয়ের পর পরবর্তী মিশন ভারত জয়। শক্তিশালী ভারত এবার কিন্তু অতি সহজে বাংলাদেশকে হারাতে পারবে বলে মনে হয় না। আসুন সবাই বিজয়ী বীরদের বন্দনা করি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − five =