এশিয়া কাপে সেরা দলগুলো দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত

অনেক নাটকীয়তা এবং বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত বিতর্ক ছড়িয়ে এশিয়ান  ক্রিকেট  কাউন্সিল আয়োজিত বহুল আলোচিত এশিয়া কাপ টি ২০ টুর্নামেন্ট ২০২৫ গ্রুপ অফ ফোর পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ৮ জাতির এই টুর্নামেন্টে আইসিসির ৫ পূর্ণ সদস্যের সঙ্গে ছিল হংকং ,ইউএই এবং ওমান তিন সহযোগী সদস্য। এ গ্রুপ থেকে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান, বি গ্রুপ থেকে শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ অনেকটা কাঙ্খিত ভাবেই পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হয়েছে। গ্রুপ অফ ফোরে চারটি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে খেলার পর সেরা দুই দল খেলবে ফাইনালে।

দুই গ্রুপে বিভক্ত এই টুর্নামেন্টে শক্তি, সামর্থ আর অভিজ্ঞতার বিবেচনায় এ গ্রুপে ভারত আছে যোজন যোজন এগিয়ে। একসময়ের তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান ক্রিকেটে আর সেই জৌলুশ অবশিষ্ট নেই। গ্রুপের বাকি দুই দল ওমান এবং ইউএই কেবল সংখ্যা পূরণ করবে সেটি অনুমিত ছিল। পাকিস্তান -ভারত ম্যাচটি উত্তাপ ছড়ালেও নিতান্ত একপেশে হয়েছে। তবে দুই দলের অধিনায়ক খেলার আগে সৌজন্যমূলক করমর্দন করেনি। খেলাশেষেও ভারত দল পাকিস্তান দলের সঙ্গে হাত না মেলানোয় খেলার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ম্লান হয়েছে। এছাড়া বাকি খেলাগুলোতে নাটকীয় কিছু না হওয়ায় এ গ্রুপ থেকে ভারত এবং পাকিস্তান পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হয়েছে।

শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং হংকং নিয়ে গঠিত বি গ্রুপের খেলায় তিনটি প্রায় সমশক্তির দল নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উত্তাপ ছড়িয়েছিলো। এই মুহূর্তে শক্তি সামর্থ এবং অভিজ্ঞতার বিচারে এগিয়ে থাকা শ্রীলংকা ভালো খেলেই তিনটি ম্যাচ জিতেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিকট অতীতের সকল সেরা খেলোয়াড় একে একে বিদায় নেয়ার পর অনেকটা তরুণ দল নিয়ে বাংলাদেশ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে হেরে নিজেদের অবস্থান অনিশ্চিত করে ফেলেছিলো। তবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভালো খেলে জয়লাভ করে বাংলাদেশ সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ভাগ্য ঝুলেছিল শেষ ম্যাচ শ্রীলংকা -আফগানিস্থানের উপর. সেই ম্যাচ শ্রীলংকা সহজে জিতে নেয়ায় এই গ্রূপ থেকে শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশ খেলবে দ্বিতীয় রাউন্ডে।

টি ২০ তাৎক্ষণিক ক্রিকেট। এই খেলায় যে দল শক্তি সামর্থ অনুযায়ী ধারাবাহিক ভাবে খেলতে সক্ষম জয় তাদের জন্য নির্ধারিত। বর্তমান মুহূর্তে অনেক ম্যাচ জয়ী প্রতিভার সমন্বয় ঘটে ভারত প্রায় অজেয় দল।  চার দলের মধ্যে একমাত্র শ্রীলংকা ছাড়া কাগজে কলমে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। যদি ভারত কোন ম্যাচ হেরে যায় সেটি নিতান্তই অঘটন। তবে পাকিস্তান ভারতের ম্যাচ খেলার বাইরেও স্নায়ুর  যুদ্ধ. ইদানিং খেলার মাঝে রাজনীতি ঢুকে পড়ে খেলার সৌন্দর্য ব্যাহত হয়। আশা করবো দুটি দল খেলার মহানুভবতা বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে। শ্রীলংকার কিন্তু ব্যাটিং বোলিং সক্ষমতা আছে ভারতকে ভড়কে দেয়ার। তবে ভারতের শক্তি পেস এবং স্পিন দুই ধরণের বোলিংয়ের ক্ষেত্রে ম্যাচ জয়ী কিছু বিরল প্রতিভা। কুলদীপ এবং ভারুনকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিপক্ষ। আছে জাসপ্রিত বুমরা, আর্শদীপ সিংহ পেস আক্রমণে। ভারত দলের বিরুদ্ধে ১৫০ রান করে ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি অনেক চ্যালেঞ্জিং। ব্যাট হাতে অভিষেক শর্মা, তিলক ভার্মা, শুভমান গিল, সঞ্জু স্যামসং, সূর্য কুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকেই ম্যাচ জয়ী প্রতিভা। এই দল থেকে জয় পেতে শ্রীলংকা, পাকিস্তান অথবা বাংলাদেশকে ব্যাতিক্রমী কিছু করতে হবে।

স্বাভাবিক কারণেই আমরা বাংলাদেশ নিয়ে উৎসাহী। দলে আছে কিছু প্রতিভাবান তরুণ এবং কুশলী খেলোয়াড়। তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ভড়কে না গেলে বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনার শক্তি রাখে। টপ অর্ডারে তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন সাহসের সঙ্গে খেলে ভালো সূচনা দিবে আশা রাখতেই পারি। তবে ওদের একজনকে অন্তত ১৫-১৬ ওভার পর্যন্ত উইকেটে থেকে রানের চাকা সচল রাখতে হবে। আশা করি অধিনায়ক লিটন কুমার দাস ব্যাট হাতে ধারাবাহিক হবে। আমি তাওহীদ হৃদয়কে বিশ্রাম দিয়ে সাইফ হাসানকে সুযোগ দেয়ার সুপারিশ করবো। মিডল অর্ডারে জাকের অনিক, শামীম পাটোয়ারীকে আরো প্রয়োগ করে খেলতে হবে। বাংলাদেশ ১৭০-১৮০ রান করতে পারলে ভালো বোলিং এবং চৌকষ ফিল্ডিং দিয়ে একটি বা দুটি ম্যাচ জেতার সক্ষমতা রাখে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতেও বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গর্তে পারবে। তবে বাংলাদেশকে অবশ্যই ৫ জন ফ্রন্ট লাইন বলার নিয়ে খেলতে হবে, ফিল্ডিং অনেক উন্নত হতে হবে। আমি তাসকিন, মুস্তাফিজ, তানজিম শাকিব, রিশাদ হোসেন এবং নাসুমকে নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজাতে বলবো ভারত এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে।

খেলার স্বাভাবিক ধারা বজায় থাকলে ভারত অবশ্যই ফাইনাল খেলবে। ওদের বিরুদ্ধে কোন দল ফাইনাল খেলবে সেটি নির্ভর করবে অনেক যদি, কিন্তু এবং ম্যাচ পরিস্থিতির উপর। শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্য।

ভারত পাকিস্তান খেলা নিয়ে টুর্নামেন্টের আগে আবং খেলার দিন অনেক বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। ক্রিকেট নিতান্তই একটি বিনোদন। যুদ্ধ ময়দানে যুদ্ধ করে দুই দেশের সেনাবাহিনী। ক্রিকেট যুদ্ধ নয়। রাজনীতিকে ক্রিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা দুঃখজনক। কোন দল ক্রিকেটের ঔদার্য ভুলে অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করলে আইসিসি অবস্যই ব্যবস্থা নিতে পারে। আশা করি দলগুলো ক্রিকেটের আদর্শের প্রতি নিবেদিত থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 2 =