এশিয়া কাপ  ২০২৩: ভারত -পাকিস্তান ডগ ফাইট

এসে গেলো দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ হিসাবে বিবেচিত এশিয়া কাপ।  প্রতিদ্বন্দ্বী দল গুলো ইতিমধ্যেই স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। পাকিস্তান স্বাগতিক হলেও ভারত -পাকিস্তান আঞ্চলিক ভুরাজনীতির কারণে হাইব্রিড পদ্ধতিতে ভারত ,পাকিস্তান, শ্রীলংকা ,বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ,নেপাল  ৬ জাতির টুর্নামেন্টের ১৩ খেলার ৪ টি পাকিস্তানে আর ৯ টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলংকায়।  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষত ভারত ,পাকিস্তান ,বাংলাদেশ ,শ্রীলংকায় ক্রিকেট এখন দ্বিতীয় ধর্মের মত।  কোটি কোটি ভক্ত অনুরাগী ক্রিকেট উন্মাদনায় মেতে থাকে। এবার আবার মাস খানেকের ব্যাবধানে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব কাপ।  তাই ইতিমধ্যেই ক্রিকেট উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে।  উপমহাদেশে কিন্তু ভারত , পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে ভিন্নমাত্রার উন্মাদনা আছে. রাজনৈতিক কারণে দুই দল এখন দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে না. দেখা হয় শুধু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। এবারের এশিয়া কাপে স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে তিন বার ওদের মুখমুখি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এশিয়া কাপ শুধু না বিশ্ব কাপেও ভারত পাকিস্তান ফেভারিট দল।  নিঃসন্দেহে বিশ্ব বিভিন্ন স্থান থেকে কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী নানা ভাবে ম্যাচ গুলো উপভোগ করবে। যদিও শ্রীলংকা , বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের সম্ভাবনা আছে ফেভারিট দল দুটাকে চমকে দেয়ার। তবুও সাধারণ হিসাবে শিরোপা লড়াই পাকিস্তান ভারতে সীমিত থাকবে বলে মনে করার যুক্তি সঙ্গত কারণ রয়েছে।

স্কোয়াড :

ভারত : রোহিত শর্মা ( অধিনায়ক) , ভিরাট কোহলি , কে এল রাহুল, সুবমান গিল , সূর্যকুমার যাদব, তিলক ভার্মা, ঈশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া ( সহ অধিনায়ক) , রবীন্দ্র জাদেজা, আক্সার প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সামি , মোহাম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব, প্রাসিধ কৃষ্ণা।  সানজু স্যামসং ( বিকল্প খেলোয়াড়)

পাকিস্তান : বাবর আজম ( অধিনায়ক) , আব্দুল্লাহ শফিক, ফখর জামান, ইমাম উল হক, সালমান আলী আগা , ইফতিখার আহমেদ, তৈয়ব তাহির, মোহাম্মদ রিজওয়ান , মোহাম্মদ হারিস , শাদাব খান, মোহাম্মদ নেওয়াজ , উসামা মীর, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম ( জুনিয়র) , নাসিম শাহ এবং শাহীন শাহ আফ্রিদি।

দুদলে কিন্তু ম্যাচ জয়ী ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড়দের সমাহার। ভারত এশিয়া কাপের সবচেয়ে সফল দল।  এখন পর্যন্ত ৭ বার জিতেছে শিরোপা।  সেই তুলনায় পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের রেকর্ড মাত্র দুই বার. কিন্তু শীর্ষ খেলোয়াড় এবং সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনায় এবারের টুর্নামেন্টে পাকিস্তান সবচেয়ে প্রস্তুত এবং তুখোড় দল।  ভারত পাকিস্তান  ক্রিকেট যুদ্ধ এখন এশেজ মোকাবিলার মতোই আকর্ষণীয়। নিদৃষ্ট দিনে যে দল স্নায়ুর চাপ মোকাবিলা করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে ওরাই পাবে জয়.গ্রুপ পর্যায়ে একবার, গ্রুপ অফ ফোরে একবার এবং ফাইনালে সম্ভাব্য একবার তিন বার দেখা হতে পারে দুই দলের স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে। অবশ্য বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা অথবা একদিনের ক্রিকেটের মেধাবী দল বাংলাদেশ এমনকি আফগানিস্তানকেও একেবারে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না।

পাকিস্থান কিন্তু খেলার মাঝেই আছে. দলে যেমন একদিনের ক্রিকেটের তিন সেরা ব্যাটসম্যান বাবার আজম , ইমাম উল হক , ফখর জামান আছে ,তেমনি আছে মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস এবং তরুণ তৈয়ব তাহির। স্লগ ওভারে বিধ্বংসী ব্যাটিং করার জন্য আছে শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ এবং চৌকষ খেলোয়াড় ফাহিম আশরাফ। ইদানিং আনপ্রেডিক্টেবল কুখ্যাতি থেকে বেরিয়ে আসলেও নিজেদের ব্যাটিং দক্ষতা সবসময় পুরোপুরি মেলে ধরছে বলা যাবে না. ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের শংকা ভারতের এক্স ফ্যাক্টর জাসপ্রিত বুমেরাকে মোকাবিলা করা, রবীন্দ্র জাদেজা এবং কুলদীপ যাদবকে সামলানো। ভারতের যেমন বুমরা পাকিস্তানের তেমনি শাহীন শাহ আফ্রিদি। সঙ্গে যোগ করতে হবে তুখোড় ফর্মে থাকা হারিস রউফ এবং নাসিম শাহ।  তরুণ উসামা মীর আছে বিকল্প হিসাবে। পাকিস্তান দলের লেট্ মিডল অর্ডার ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর জন্য দলে ভিড়িয়ে এনেছে পেস অল রাউন্ডার ফাহিম আশরাফকে।  স্পিন আক্রমণের দায়িত্বে থাকবে শাদাব খান এবং মোহাম্মদ নেওয়াজ।  দলে থাকলে সালমান আগা থাকবে বিকল্প স্পিনার হিসাবে। সব চেয়ে বড়ো পরিবর্তন লক্ষণীয় পাকিস্তানের বদলে যাওয়া ফিল্ডিং দক্ষতা। সম্প্রতি শ্রীলংকার বিরুদ্ধে তুখোড় ফিল্ডিং করেছে পাকিস্তান। আমি নিজেদের গ্রুপে ভারত ,নেপালনা হলেও কে হারিয়ে পাকিস্তান গ্রুপ সেরা হবে বলেই মনে করি. তবে গ্রুপ অফ ফর হবে কঠিন। ধারাবাহিক ভাবে দলকে ভালো খেলতে হবে শিরোপা জয় করতে হলে.

ভারত কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সব ফরম্যাটে সব টুর্নামেন্টে ফেভারিট থাকলেও দীর্ঘ দিন জয় করেনি কিছুই। এবার কিন্তু অনেকের মতে এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপ দুটি টুর্নামেন্টে ওদের ফেভারিট বিবেচনা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ভারত দলে একই মানের পর্যাপ্ত খেলোয়াড় থাকায় অনেক বাছ বিচার করে শেষ মুহূর্তে দল ঘোষণা করেছে ভারত। দলে শিখর ধাওয়ান , রবিচন্দ্র আশ্বিন , চাহালের মতো পরিণত ,পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের জায়গা না হওয়ায় ভারত জুড়ে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় খেলার বাইরে থাকা স্রেস আয়ার , কে এল রাহুলকে ফেরানো হয়েছে দলে।  জাসপ্রিত বুমরা ফিরে এসেছে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে। তরুণ জাসওয়ালের জায়গা না হলেও নেয়া হয়েছে তিলক ভার্মাকে। সকল ফরমেট ক্রিকেটের শীর্ষ স্থানীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার সঙ্গে ইনিংস সূচনা করবে ফর্মে থাকা সুবমান গিল।  আছে  তুখোড় ফর্মে থাকা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি , সূর্য কুমার যাদব , স্রেস আয়ার ,কে এল রাহুল কাকে রেখে কাকে খেলাবে ভারত? জানিনা ম্যাচ প্রাকটিস না থাকা স্রেস আয়ার অথবা কে এল রাহুলকে শুরুতেই খেলানোর ঝুঁকি নিবে কিনা ভারত। সেই ক্ষেত্রে তরুণ তিলক ভার্মার সুযোগ মিলতেও পারে। ভারতের সুবিধা হলো মিডল এবং লেট্ মিডল অর্ডারে হার্দিক পান্ডিয়া , রবীন্দ্র জাদেজা এবং শার্দুল ঠাকুরের মত অল রাউন্ডারদের উপস্থিতি। শাহিন , আফ্রিদি , হারিস রউফ , নাসিম শাহ টপ অর্ডারকে কাঁপিয়ে দিলেও ভারত ব্যাটিং গভীরতা ওদের শক্তি।  জানিনা জাসপ্রিত বুমরা কতটা ফর্ম ফিরে পেয়েছে। তবুও বুমরা ,সামি , সিরাজ , প্রাশিদ কৃষ্না ,শার্দুল ঠাকুরদের মাঝ থেকে গড়া পেস আক্রমণ এবং জাদেজা ,কুলদীপ যাদব এবং আক্সার প্যাটেলের সমন্বয়ে গোড়া স্পিন আক্রমণকে অবহেলা করার উপায় নাই.

সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে দুই সমান শক্তির দলের। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দীর খেলাগুলো সবাই গভীর আগ্রহ নিয়েই দেখবে সারা বিশ্ব। আবার বিশ্ব কাপেও ওরা আছে ফেভারিট তালিকায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 − 1 =