কবি আবুল হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ জুন

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি আবুল হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী ২৯ জুন। ২০১৪ সালের ২৯ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কবি আবুল হোসেনের প্রথম কবিতার বই ‘নব বসন্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে। আধুনিক মুসলমান বাঙালী কবিদের মধ্যে তার কবিতা বইই প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘বিরস সংলাপ’, ১৯৮২ সালে ‘হাওয়া তোমার কি দুঃসাহস’, ১৯৮৫ সালে ‘দুঃস্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্নে’, ১৯৯৭ সালে ‘এখনও সময় আছে’।

২০০০ সালে ‘আর কিসের অপেক্ষা’, ২০০৪ সালে ‘রাজকাহিনী’, ২০০৭ সালে ‘আবুল হোসেনের ব্যঙ্গ কবিতা’ ও গদ্যের বই ‘দুঃস্বপ্নের কাল’, ২০০৮ সালে ‘প্রেমের কবিতা’ ও ‘কালের খাতায়’, ২০০৯ সালে গদ্য ‘স্বপ্ন ভঙ্গের পালা’ বইগুলি প্রকাশিত হয়। তার অনুবাদ কবিতাগুলি হলো- ‘ইকবালের কবিতা’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অন্য ক্ষেতের ফসল’। ২০০০ সালে ‘আমার এই ছোট ভূবন’, ২০০৫ সালে ‘আর এক ভুবন’ নামে দুটি স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ লিখেছেন তিনি। ‘অরণ্যের ডাক’ তার অনুবাদ উপন্যাস। ‘পার্বত্যের পথে’ নামক ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন তিনি। এছাড়া তার আরও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে।

কবি আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট খুলনার তৎকালীন বাগেরহাট মহুকুমার ফকিরহাট থানার আড়ুয়াডাঙা গ্রামে। পৈত্রিক গ্রাম দেয়াড়া। খুলনা জেলার রূপসা থানায় এই গ্রাম। বাবা এস. এম. ইসমাইল হোসেন পুলিশ বিভাগে কাজ করতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন।

আবুল হোসেন করেছেন কৃঞ্চনগর কলেজিয়েট স্কুলে, কুষ্টিয়া হাই স্কুলে, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতিতে সম্মান পর্যায়ের স্নাতক। সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে।

তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। আবুল হোসেন দায়িত্ব পালন করেছেন সম্পাদক, রবীন্দ্র পরিষদ, প্রেসিডেন্সি কলেজ (১৯৩৯-৪০); সম্পাদক, রবীন্দ্র পরিষদ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৪৩-৪৪); বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য; বেঙ্গলি ইন্সটিটিউট অব টেকনলজির গবেষণা ফেলো; পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য (১৯৫৯-৬২); সভাপতি, রবীন্দ্র-চর্চা কেন্দ্র, ১৯৯০-২০০২।

আবুল হোসেন সরকারি চাকুরে ছিলেন। প্রথম আয়কর বিভাগে কাজ করেন, পরে রেডিওতে। তারপরে তথ্য বিভাগে। সরকারি চাকরি শেষ হবার সময় (১৯৮২) পদমর্যাদা ছিলো যুগ্ম-সচিবের। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য নিযুক্ত ছিলেন, কিন্তু কাজে যোগ দেননি। কয়েক বছর ব্যাংককে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরি করেছেন। এক সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অবসর নেয়ার পর কিছুদিন ডায়াবেটিস রোগের নিরাময়, প্রতিরোধ ও গবেষণা সংক্রান্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠান বারডেম-এর সাথে যুক্ত ছিলেন।

তিনি বাংলা একাডেমি ফেলো। বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। স্ত্রী সাহানা হোসেন লেখক আকবর উদ্দিনের বড়ো মেয়ে। বিয়ে হয় ১৯৫৮-তে। স্ত্রী হঠাৎ করে ১৯৯৪ সালে মারা যান। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।

কবি আবুল হোসেন বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে একুশে পদক, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পুরস্কার, নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক, পদাবলী পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক, আবুল হাসানাৎ সাহিত্য পুরস্কার, জনবার্তা স্বর্ণপদক, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন সম্মাননা ও জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক সংবর্ধনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − thirteen =