কভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানীতে বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে: তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী

কভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানীতে ৩ বছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অধিক ব্যয় করতে হয়েছে। এটার দায় বাংলাদেশের না থাকলেও অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পরিস্তিতি বিবেচনায় আমদানীর উপর চাপ কমাতে বর্তমান মজুদ থেকে উৎপাদন বাড়ানো ও নতুন অনুসন্ধানের জন্য পরিকল্পিনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে পরিবেশ, কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় আপাতত: নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনের চাহিদার বিদ্যুতের কমপক্ষে অর্ধেক সোলার থেকে পাওয়ার বিবেচনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি (বিইএস) দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন, অর্জন ও বাস্তবায়নের অবস্থা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা (মন্ত্রী) তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম উপরের কথাগুলো বলেছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশি-বিদেশি একক উৎসের প্রতি নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন ও পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। আগামীতে স্মল মিডিউলার রিয়াক্টর (এসএমআর) ও মাইক্রো মডিউলার রিয়াক্টর (এমএমআর) স্থাপনের বিষয় সরকারের বিবেচনায় আছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসাবে যুক্ত ছিলেন সামিট গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান। আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি কনসাল্টেন্ট ইঞ্জি. খন্দকার আব্দুস সালেক (সুফি); পেট্রোবাংলা’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. হুসাইন মনসুর; বুয়েট-এর পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম প্রমুখ। এছাড়া, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইআরসি’র সাবেক সদস্য মো. মকবুল-এ-এলাহী চৌধুরী; এবং স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন বিইসি’র সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।

বিশেষ অতিথি মোহাম্মদ আজিজ খান বলেন, “জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল, যার ধারাবাহিক বাস্তয়ায়নের ফলেই দেশব্যাপি শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপি জ্বালানি সংকট দেখা দেয়, যা বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলে। একইসাথে বিগত দশকে দেশের জ্বালানি চাহিদা আনুমানিক ৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে এই উক্ত সংকট ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়। তবে সেই সংকট মোকাবেলা করে উক্ত চাহিদা পূরণে সরকারের সাথে কাজ করতে পেরে সামিট গ্রুপ গর্বিত।”

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মো. মকবুল-এ-এলাহী চৌধুরী বলেন, “জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের আরও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, জ্বালানি সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং জ্বালানি চোরাকারবারি ও দূর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।” তিনি দাবি করেন, সিস্টেমলসের নামে চুরি বন্ধ এবং নিজস্ব মজুদ থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি করে আগামী এক বছরের মধ্যে স্পট এলএনজি আমদানী থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। আর এককভাবে গ্যাস দেশের পুরো জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারবে না। তাই সময় নষ্ট না করে নিজস্ব কয়লা উত্তোলনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহন জরুরি।

প্রফেসর এম তামিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করলেও আমদানী নির্ভরতা থেকে পুরোটা বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই। কিন্তু নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও সাগরে যগপদভাবে কাজ করে এবং নিজস্ব কয়লা উৎপাদন করে আমদানী বিলম্বিত করা উচিত। আবার নবানয়যোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সোলার ও বায়ু বিদ্যুতের পরিকল্পিত উন্নয়ন করা জরুরি। ততদিনে দেশের অর্থনীতি জ্বালানি আমদানী ব্যয় সামাল দিতে সক্ষম হয়ে ওঠবে।

প্রফেসর হোসেন মনসুর বলেন, বিদেশী নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব দক্ষ জনবলকে সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগানোর উপর জোর দিতে হবে। আর গ্যাস খাতে কোনো কাজ না করার যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা যথাযথ নয়।

বিইসি’র সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই আলোচনার মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামগ্রিক অর্জন ও বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। আশা করি, এর মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাত ও ভবিষ্যৎ উপকৃত হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven − six =