কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন আজ

আজ কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জন্মদিন। ১৯৬৩ সালের ১ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন। এর আগে সব জন্মদিনে তিনি হেসেছেন, প্রাণবন্ত উদযাপন করেছেন। গত দুই বার তার জীবনে নেই জন্মদিনের কোনো উচ্ছ্বাস। ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একমাত্র সন্তান নিবিড় কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। এরপর থেকে কানাডাতেই চলছে তার চিকিৎসা। জীবনের সব উচ্ছ্বাস, আনন্দ যেন থমকে গেছে বিশ^জিতের জীবনে। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নিবিড়ের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার। বিশেষ এই দিনটি ঘিরে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল নিবিড়ের। ২০২১ সালে জন্মদিনে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য কাউকে কিছু না জানিয়ে কানাডা থেকে বাংলাদেশে চলে আসে নিবিড়। আর এখন নিবিড়ের পাশে বাবা-মায়ের প্রতিটি দিন কাটে হাসপাতালে। একটু সময়ের জন্যও নিবিড়কে রেখে কোথাও যান না বাবা-মা। বৃহস্পতিবার কথা হয় কুমার বিশ^জিতের সঙ্গে। কানাডা থেকে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ কাটে একটা অপেক্ষা, একটা প্রত্যাশা ঘিরে নিবিড় কথা বলবে। নিবিড় আগের চেয়ে একটু ভালো আছে। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

স্টেজেও ফিরেছিলেন কুমার বিশ^জিৎ। কিছু দিন আগে ঢাকায় আসেন। এসে মঞ্চ শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাই করে দেখলাম এত দিন পর গানে ফিরে কেমন লাগে। ভালো থাকার বৃথা চেষ্টা মনে হচ্ছিল আমার কাছে। দেখলাম সন্তান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কারণ গাইতে গেলে গানের ইমোশন আসে না। আবার ইমোশন এলে চোখে জল চলে আসে। যেটা একজন বাবা হিসেবে খুব কষ্টের। যে পরিস্থিতিতে দেড় বছর ধরে আছি, এটা মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের। দেশের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কনসার্টের অনুরোধ পাচ্ছেন। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শোতে অংশ নেবেন বিশ^জিৎ।

এর মধ্যে কুমার বিশ^জিৎ সংগীতে চার দশক পূর্তি করেছেন। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য এক আয়োজন করার কথা ছিল। নিবিড়ের দুর্ঘটনায় থমকে আছে সে আয়োজন। তবে জানা যায়, এ বছরের অক্টোবরে সেই আয়োজন করবেন। পুরো আয়োজনটি হবে গান বাংলার তত্ত্বাবধানে। বিশ^জিতের গাওয়া ৫০টি গান প্রকাশ হবে। পুরনো গানের নতুন সংগীত আয়োজনের পাশাপাশি থাকবে নতুন গান। দেশে ফিরে বিশ^জিৎ বলেছিলেন, এখন তো ফিউশনের যুগ। যত্ন নিয়ে কাজগুলো করা হচ্ছে। ফিউশনটা এমনভাবে করা হবে যেন গানের মৌলিকত্ব নষ্ট না হয়। এ ছাড়া কনসার্ট ও সংগীত নিয়ে নানা আয়োজন থাকবে। যেগুলো কখনো বাংলাদেশে হয়নি, এটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। আমি একটা উদাহরণ তৈরি করে যেতে চাই, যাতে এখনকার প্রজন্ম নতুন করে ভাবতে পারে যে, চাইলে সেও একদিন এমন জায়গায় পৌঁছতে পারে।

চিরসবুজ গায়ক কুমার বিশ^জিৎ আশির দশক থেকে টানা গান করে যাচ্ছেন। তার বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবন সমৃদ্ধ করেছে দেশের সংগীতাঙ্গনকে। তার বেড়ে ওঠাও বন্দরনগরীতে। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল তার।

১৯৭৭ সালে একটি রেডিও অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার মাধ্যমে সুরের ভুবনে পা রাখেন কুমার বিশ্বজিৎ। এর পর তিনি ‘রিদম ৭৭’ নামে একটি ব্যান্ডে দুই বছর গান করেন। ১৯৭৯ সালে নিজেই ‘ফিলিংস’ নামে একটি ব্যান্ড গঠন করেন। টেলিভিশনে কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম গান করেছিলেন ১৯৮০ সালে।

সিনেমা ও অডিও দুই মাধ্যমেই সফলতা পেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ৩০টি একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বহু মিশ্র অ্যালবাম ও সিনেমায় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে কুমার বিশ্বজিৎ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। এর মধ্যে দুবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার ও সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।

জনপ্রিয় ১০ গান

তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে

যেখানে সীমান্ত তোমার

তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে

ও ডাক্তার

একটা চাঁদ ছাড়া রাত

চন্দনা গো

কান্নার রোল

তুমি যদি বল

চতুর্দোলায় চড়ে

ভিটা নাইরে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 2 =