কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে কেন নিরাপত্তা দিতে পারছে না সরকার?

সালেক সুফী

বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের সাড়া জাগানো সংবাদ সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে অনীহা প্রকাশ করে বাংলাদেশের সর্বযুগের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান তার প্রিয় প্রাঙ্গন ঢাকা মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জীবনের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলে অবসর নেয়ার সুযোগ পেলো না। অনন্য প্রতিভাধর একজন ব্যাক্তি সাকিবকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে ব্যার্থতা গণবিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের ভাবমূর্তির জন্য সুসংবাদ বলতে পারছি না।

নানা সময়ে নানা জনের নানা কথায় আসস্ত হয়ে সাকিবকে স্কোয়াডে রেখেছিল বিসিবি নির্বাচকমণ্ডলী। সাকিব নিজেও খেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওয়ানা হয়ে দুবাই পৌঁছে। ঢাকায় ইতিমধ্যে রাজনীতিদুষ্ট কিছু মানুষ সাকিবের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। সাকিব অনুরাগীরাও পিছিয়ে থাকেনি। এমতাবস্থায় সরকারের কঠোর অবস্থান কাঙ্ক্ষিত ছিল। কিন্তু তরুণ ক্রীড়া উপদেষ্টা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়নোর জন্য সাকিবকে ঢাকায় না আসার পরামর্শ দেওয়ায় একজন কিংবদন্তির শেষ টেস্ট ম্যাচ দেশের মাটিতে খেলা হলো না।

বিশ্বনন্দিত সাকিব আল হাসান ক্রীড়াবিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যাক্তি সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু চৌকষ ক্রিকেটার হিসাবে সাকিব অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বিশ্ব ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা হিসাবে সাকিব বাংলাদেশকে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে পরিচিতি দিয়েছে। দেশের নাগরিক হিসাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছে। মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় জড়িয়ে নিন্দিত হয়েছে সন্দেহ নেই। বেশ কয়েকবার বিসিবি এবং আইসিসির দণ্ড পেয়েছে।

কিন্তু অনন্য প্রতিভা দিয়ে পারফরমেন্স করে দারুনভাবে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন বিশেষত ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় নীরব থাকায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। ঘটনার সময় অন্যান্য অনেক তারকার মতো বিবৃতি না দিয়ে নীরব থেকে ভক্ত অনুরাগীদের আহত করেছে।

কানাডায় ফ্রাঞ্চাইজি লীগ খেলায় ব্যস্ত থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য সাকিবের বিরুদ্ধে খুনের সহায়তার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলা করলেই একজন নাগরিক দোষী হয়ে যায় না। আর ঘটনার বিদেশে অবস্থান করা সাকিবের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দেওয়া যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সেটা বলাই বাহুল্য।

আমি মিজেও মাঠের বাইরে সাকিবের নানা ভূমিকার কঠোর সমালোচক। কিন্তু একইসঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অনেক অর্জনের মূল ভূমিকা পালনকারি সাকিবকে ঘোষণা অনুযায়ী দেশের মাটিতে শেষ বারের মতো টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে সরকারের ব্যর্থতাকে ভাবমূর্তির জন্য সঠিক সংকেত বলে মনে করি না।

সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়নি। ইদানিং জেলে থাকা অনেক দাগি আসামি, এমনকি জঙ্গিদের জামিন দেওয়া হয়েছে। অনেক দণ্ডিত আসামির দণ্ড মওকুফ করা হয়েছে। জানিনা সাকিব আল হাসানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে কিনা। বিষয়টি কিন্তু আইসিসি পর্যায়ে গড়াতে পারে। একজন ব্যক্তি সাকিবকে যদি সরকার নিরাপত্তা দিতে বার্থ হয় তাহলে সেই দেশে বড় ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ করতেও সহসা দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে বিনিয়োগকারীরা। জানিনা সুযোগ আছে কি না। সরকার প্রধান বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করতে পারেন। খেলাধুলার সঙ্গে রাজনীতি জড়ানো কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না।

দীর্ঘ সময় জুড়ে ক্রিকেটের তিন ফরমেট টেস্ট, ওডিআই এবং টি ‍২০ শীর্ষ চৌকষ খেলোয়াড়ের অবস্থান ধরে রেখেছে সাকিব। বিশ্ববরেণ্য স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার অ্যালেন বোথাম, জ্যাক কালিস, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, ইমরান খান, কপিল দেবের সঙ্গে সগৌরবে উচ্চারিত হয় সাকিবের নাম। তাকে দেশের মাটিতে জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে না দেওয়া জাতি হিসাবে বাংলাদেশের ব্যর্থতা হিসাবে বিবেচিত হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 − six =