কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জন্মদিন আজ

মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা আজকের বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ব বাংলায় তিনি তার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা সম্পন্ন করে দেশভাগের পর পশ্চিম বাংলার কলকাতায় স্থায়ী হন। পরবর্তীকালে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের যুগ পরিবর্তনের অন্যতম কান্ডারি হয়ে ওঠেন। ভারতীয় চলচ্চিত্রের নবতরঙ্গের প্রধান পুরোধা হিসেবে আজ তিনি নন্দিত হয়ে আছেন। বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র বিদ্যায়তনগুলোয় মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র এখন অবশ্যপাঠ্য।

মৃণাল সেন স্কটিশ চার্চ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা পড়াশোনা করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হন। চল্লিশের দশকে তিনি আইপিটিএর (ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ তবে তিনি কখনো কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হননি। তিনি কখনো সাংবাদিক, কখনো ওষুধ বিপণনকারী এবং চলচ্চিত্রে শব্দ কলাকুশলী হিসেবে কাজ করেন।

১৯৫৯ সালে ‘নীল আকাশের নিচে’ ছবিটি তাকে পরিচিতি দিলেও তার আগে তিনি ছবি করেছেন৷ তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘রাতভোর’৷ এই ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার, তখনো তিনি সেভাবে তারকা হয়ে ওঠেননি৷ আবার ১৯৭৬ সালে তার ছবি ‘মৃগয়া’তে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে আবির্ভাব ঘটে মিঠুন চক্রবর্তীর৷ মৃণাল সেনের সর্বশেষ ছবি ‘আমার ভুবন’ মুক্তি পায় ২০০২ সালে।

বাংলা ভাষার পাশাপাশি হিন্দি, ওড়িয়া ও তেলেগু ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তিনি ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেন ‘জেনেসিস’ নামে একটি চলচ্চিত্র। ছবিটি হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় তৈরি হয়। তিনি ১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ লাভ করেন এবং ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান।

তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল অবধি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন। ফরাসি সরকার তাকে কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস সম্মানে সম্মানিত করেন। আর রাশিয়া তাঁকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেছে।

২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্রবিষয়ক মৌলিক গ্রন্থও লিখেছেন। ভারতীয় প্যারালাল সিনেমার পুরোধা ব্যক্তি তিনি। গত শতাব্দীর পাঁচের দশক থেকে শুরু করে নয়ের দশক এবং শূন্য দশকের পশ্চিম বাংলার সমাজকাঠামোর নানা সংকট থেকেই তিনি তার অধিকাংশ চলচ্চিত্রের বিষয় বেছে নিয়েছেন। তার চলচ্চিত্রসমুদয়, দু-একটি বাদে, তার সময়ে ঘটতে থাকা সমাজ-ইতিহাসের চলচ্চিত্রায়ণ।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × five =