মরমী সাধক বাউল সম্রাট লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবসের আয়োজন আজ ১৭অক্টোবর সন্ধ্যায় শুরু হবে । চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী ছেউড়িয়ার লালন আখড়া বাড়িতে বসছে লালন ভক্ত অনুসারী বাউলদের মিলন মেলা।
তিন দিনের এ তিরোধান দিবসের উৎসব শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই লালন ভক্ত সাধু অনুসারী বাউল ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে লালন আখড়া বাড়ি। এ আখড়া বাড়ির আঙিনা থেকে লালনের আধ্যাত্মিক গানের সুরের মুর্ছনায় মানবতার বাণী ছড়াচ্ছেন লালন ভক্ত অনুসারী বাউলেরা। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন শাহ ফকিরের মৃত্যর পর থেকে তার স্মরণে এভাবেই লালন তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলে আসছে। দাওয়াতের আয়োজন না থাকলেও দিন ক্ষণের হিসেব ঠিক রেখেই নিজেদের মতো আগে ভাগেই লালন আখড়া বাড়িতে চলে আসেন লালন ভক্ত সাধু অনুসারী বাউলেরা।
১৩৪তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন শাহের আখড়া বাড়ির আঙিনা ও মরা কালীগঙ্গা নদীর বুক চিরে গড়ে ওঠা বিশাল উন্মুক্ত মাঠে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় খন্ড খন্ড দলে বিভক্ত হয়ে আস্তানা গেড়ে গান গাইছেন লালন ভক্ত সাধু অনুসারী বাউলেরা। তাদের গান শুনতে আখড়া বাড়িতে জড়ো হচ্ছেন নানা বয়সী নানা ধর্মের লাখো মানুষ। গানের মাধ্যমেই সাধু গুরু বাউলেরা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন লালনের আধ্যাত্মিক অহিংসু মানবতাবাদী বাণী ও তার মতবাদ এবং দর্শনের কথা।
প্রতি বছরের মতো এ বছরেও লালন উন্মুক্ত মঞ্চের সামনের মাঠে বসেছে লালন মেলা। আর এ মেলায় নানারকম পণ্যের ও খাবারের পশরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। মেলা প্রাঙ্গণের দোকানগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে।
তিন দিনব্যাপী লালন তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজনে কালীগঙ্গা নদী পাড়ের উন্মুক্ত মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় লালনের জীবনী নিয়ে বিশিষ্ট জনেরা আলোচনা করবেন। আলোচনা শেষে শুরু হবে লালন গানের আসর। এ গানের আসর চলবে মধ্যরাত পর্যন্ত। লালন শাহের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান নির্বিঘœভাবে পালনের জন্য ও লালন অনুসারী ভক্ত সাধু এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা। মেলা প্রাঙ্গণ ও এর আশে পাশের এলাকায় মোতায়েন রয়েছে আট শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ।
সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান দিবস উপলক্ষে লালন উন্মুক্ত মঞ্চে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় প্রথম দিনে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোছা. শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী,কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান,আলোচক হিসেবে থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান। , স্বাগত বক্তব্য রাখবেন কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে ৭ টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে মধ্য রাত পর্যন্ত।