কেমন হবে বাংলাদেশ ভারত টেস্ট সিরিজ?

সালেক সুফী

কেউ বলছে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারবে না, কেউ বলছে তর্কসাপেক্ষে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল লড়াই করবে ভারতের বিরুদ্ধে।  ইতিহাস, ঐতিহ্য, পরিবেশ, পরিস্থিতি কি ভারতের পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু পাকিস্তানের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ওদের মাটিতে দাপুটে সিরিজ জয়ের পর ভারত দল বাংলাদেশকে সমীহ করছে। আমরাও পারি, আত্মবিশ্বাসে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশ লড়াই করবে, বলতে পারি। ভারত এগিয়ে সন্দেহ নেই।  কিন্তু ইতিহাস নতুন করে লেখার সক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের। চোখে চোখ রেখে লড়বার প্রত্যয় সৃষ্টি হয়েছে।

সবাই জানে ব্যাটিং বোলিং মিলিয়ে তুখোড় দল ভারত। নিজেদের মাঠে প্রায় অজেয়। আছে এখন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। অচিরেই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড এবং সফরে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সিরিজ। হালকা করে নেওয়ার সুযোগ নেই।

পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ দলের ঐতিহাসিক সাফল্য বাংলাদেশকে হেলা ফেলা না করতে ভারতের জন্য সতর্ক বাণী। দুরন্ত গতির উদীয়মান তরুণ নাহিদ রানাকে মোকাবিলার জন্য যেতে ৬’৪” উচ্চতার এক্সপ্রেস পেস বোলারের বিরুদ্ধে অনুশীলন করছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা।  মেহেদী মিরাজের মত আক্রমণাত্মক অফ স্পিনারের বিরুদ্ধে স্বাচ্ছন্দের জন্য রবিচন্দ্র অশ্বিনের কার্বন কপি একজন বোলারকে নেটে রাখা হয়েছে। এগুলো প্রমান করে ভারত কত সতর্কতার সঙ্গে নিয়েছে সিরিজটি। সৌরভ গাঙ্গুলি বা হরভাজন সিংহ যাই বলুক ভারত কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার কিন্তু বাংলাদেশকে সঠিক মূল্যায়ন করেছেন। শীর্ষস্থানীয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বাংলাদেশ দলকে বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসের সেরা দল বলেছে।

যাই হোক খেলা শুরু হবে প্রথম টেস্ট কাল বাদে পরশু চেন্নাইতে। উজ্জীবিত বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে। অনুশীলন করছে এসজি বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। শুনা যাচ্ছে প্রথা ভেঙে লাল মাটির ঘাসের আচ্ছাধনে ঢাকা দ্রুত গতির উইকেট বানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু পাকিস্তানে শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং নাসিম শাহের মত বোলারদের সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ সিরাজ অবশ্যই ভিন্ন প্রকৃতির পেসার। তবে ভারতের মাটিতে ভারতের প্রধান শক্তি স্পিন বোলিং। স্কোয়াডে আছে অশ্বিন, জাদেজা, আক্সার প্যাটেল, কুলদীপ যাদবের মত বিশ্বমানের বোলার। উইকেটে সামান্য টার্ন বাউন্স থাকলে দ্বিতীয় ইনিংসে চেন্নাই এবং কানপুরে ধস নামাতে পারে ভারতীয় স্পিনাররা। সুযোগ থাকলে বাংলাদেশকে প্রথম ব্যাটিং করে নিদেন পক্ষে ৪-৫ সেশন খেলে ৩৭৫-৪০০ রান করতে হবে। তরুণ দুই ওপেনার এবং অধিনায়ক নাজমুল শান্তকে নিজেদের অতিক্রম করে খেলতে হবে। মূল ভরসা মিডল অর্ডার মোমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন, মেহেদী মিরাজ। পাকিস্তানে সাকিবের ব্যাট হাসেনি। সিরিজে টিকে থাকতে হলে সাকিবকে চৌকষ ভূমিকায় সেরাটা উপহার দিতে হবে। ভারতের ব্যাটিং বিশ্ব সেরা। রোহিত, যশপাল, গিল, কোহলি, রাহুল, প্যান্ট কাকে রেখে কার কথা বলবেন। তবে এই ব্যাটিং শক্তির বিরুদ্ধেও চমক দেখতে পারে বাংলাদেশের ব্যালান্সড বোলিং আক্রমণ। নাহিদের পেস নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখলে, তাসকিন এবং হাসান মাহমুদ স্বমহিমায় সক্রিয় থাকলে সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের চমক দেখানোর। বাংলাদেশের সুবিধা সাকিব এবং মিরাজের মত বিশ্বমানের দুইজন স্পিনিং অল রাউন্ডার। তবে তৃতীয়  স্পিনার হিসাবে তাইজুলকে খেলাতে  হলে হয় দুই পেসার  একজন ব্যাটসম্যান কম রেখে একাদশ সাজাতে হবে। জানিনা বাংলাদেশ সেই ঝুঁকি নিবে কিনা। যাই হোক বাংলাদেশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হলে টপ অর্ডারকে ভালো ব্যাটিং করতে হবে।

ভারত এগিয়ে নির্দ্বিধায় বলা যায়, কিন্তু বাংলাদেশকে কোনো ভাবেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করুন। সুন্দরবনের বাঘেরা আসছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − two =