কোটা আন্দোলন নিয়ে তারকারাও সরব

মৌ সন্ধ্যা

দেশের মালিক আসলে সরকার নাকি জনগণ? উত্তর যদি জনগণ হয় তাহলে নিজেদের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয় কেন তাদের? ভোট দিয়ে সরকার বানিয়ে তার কাছেই কেন ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে চাইতে হয় সবকিছু। সরকার জনগণের বাবা-মায়ের মতো! আর কথায় আছে সন্তান না কাঁদলে মা-ও দুধ দেয় না। সন্তানের আবদারে বিরক্ত হতে পারেন মা-বাবা। কখনো কখনো সন্তান অন্যায় আবদারও করতে পারে। রাগ করে বাবা-মা সন্তানকে শাসন করতে পারে বড়জোর, কিন্তু প্রাণ কেড়ে নেয় না! এই যে কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে যারা প্রাণ দিয়েছে তার দায় কার? সরকারের নাকি জনগণের!

সারা দেশে দিনের পর দিন কারফিউ, ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ। অন্ধকারের মধ্যে আসলে কীসের খেলা চলছে? দিনের আলোর মতো পরিস্কার অনেক কিছু। সকল শক্তির উৎস জনগণের মুখ বন্ধ রাখতেই কী এই নেট বন্ধের আয়োজন ও কারফিউ। এই লড়াই তো এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের নয়, এই লড়াই কিছু অধিকারের। ভীষণ চিন্তার বিষয়। আসলে কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ এবং কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভরতদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, বুলেট নিক্ষেপে গত ১৬ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ২০৩ জন নিহত হয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)

পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির সদস্য ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপপরিদর্শক ময়নাল হোসেনের ১৭ বছরের ছেলে ইমাম হোসেন তাঈমসহ অনেক মায়ের সন্তান। এসব সহিংসতার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের সর্বস্তরের জনগণ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল দেশ। টানা বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যখন সারাদেশ উত্তাল, তখন তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে শোবিজ তারকারাও। চলুন দেখে নেওয়া যাক কে কি বলেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘আপনারা যারা ভাবছেন আন্দোলনটা স্রেফ একটা চাকরির জন্য, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। আপনারা এর সবগুলা সেøাগান খেয়াল করেন। দেখবেন, এই আন্দোলন নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য। এই আন্দোলন নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে না বাঁচার জন্য। এই আন্দোলন রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, দেশের মালিক তারা না। আসল মালিক জনগণ। সেই জনগণকে রাষ্ট্র যে পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলন সেটার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা। রাষ্ট্র জনগণকে কেন পাত্তা দেয় না এই আন্দোলনকারীরা সেটাও বোঝে। যে কারণে ভোটের বিষয়টাও সেøাগান আকারে শুনেছি। আমি এটাকে এভাবেই পাঠ করছি।’

চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা

সহিংসতার কথা স্মরণ করে কথা বলেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সমসাময়িক এই উত্তেজনা দেখে তিনি শোকাহত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরতে দেখে হয়েছেন হতবাক। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিকমাধ্যমে কালো প্রতিকী ছবি যোগ করেন। সেখানে চঞ্চল লেখেন, ‘পেশাগত কাজে প্রায় বিশ দিন আমেরিকা থাকার পর ঢাকায় ফিরেছি। সেখানে বসে এই কয়দিন নিউজগুলো দেখে হতবাক হয়েছি। হয়েছি শোকাহত!’ সেই পোস্টে কিছু প্রশ্নও ছোঁড়েন চঞ্চল। লেখেন, ‘সমাধানের অন্য কোন পথ কি খোলা ছিল না? গুলি কেন করতে হলো? বুকের রক্ত না ঝরিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করা যেত না?’ রাজনীতির নামে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়ে চঞ্চল চৌধুরী আরও লেখেন, ‘যা ঘটে গেলো এটা যেমন মোটেও কাক্সিক্ষত নয়, বিষয়টা তেমনি হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক এবং সভ্যতা বহির্ভূত! আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ এবং অভিভাবক হিসেবে রাজনীতির এত এত কঠিন কৌশল বুঝি না! শুধু একটা প্রশ্ন বুঝি, তরুণ তাজা যে প্রাণগুলো অকালে ঝরে গেল, তার দায় কে নেবে? যে মায়ের বুক খালি হলো, তার আর্তনাদ কি কোনো জনমে শেষ হবে? হায়রে দুর্ভাগা দেশ! নোংরা রাজনীতির নামে এই রক্তপাত বন্ধ হোক!’

মেহের আফরোজ শাওন, নির্মাতা ও অভিনেত্রী

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ অন্যতম। তাকে নিয়ে মেহের আফরোজ শাওন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো এই নিরস্ত্র মানুষটাকে সরাসরি গুলি করা পুলিশ ভাই কি কাল রাতে ঘুমাতে পেরেছেন? তার কি কোনো সন্তান আছে? সেই সন্তানের চোখের দিকে তাকাতে তার কি একটুও লজ্জা লাগবে না!’ তিনি তার স্ট্যাটাসে হ্যাসট্যাগ দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি-কোটা-সংস্কারের-পক্ষে’। স্ট্যাটাসের শেষে শাওন আরও লেখেন, ‘দয়া করে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবার নিয়ে কোনো প্রকার বাজে মন্তব্য করবেন না।’

শাকিব খান, চিত্রনায়ক

ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার শাকিব খানও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাধান চেয়েছেন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি  লেখেন, ‘আমার প্রাণের বাংলাদেশ এভাবে রক্তাক্ত হতে পারে না। কারও মা-বাবার বুক এভাবে খালি হতে পারে না। আপনারা যারা অভিভাবক পর্যায়ে আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ রইল, এখনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এই সংকটের যৌক্তিক সমাধান বের করুন। সব ধরনের সংঘাতের সমাপ্তি চাই।’

রওনক হাসান, সাধারণ সম্পাদক, অভিনেতা ও অভিনয়শিল্পী সংঘ

অভিনেতা ও অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান মনে করেন, কোটা সংস্কার হতেই পারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের জন্য কোটা এমনিতেই দু-চার বছর পর অকার্যকর হয়ে যাবে! রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মানসূচক একটি ন্যূনতম কোটা থাকা উচিত। রওনক আরও লিখেছেন, ‘সম্মানসূচক একটি ন্যূনতম কোটা থাকা উচিত কিন্তু হাজারো সাধারণ ছাত্রছাত্রীর এই আন্দোলনকে সুকৌশলে যেদিকে প্রবাহিত করা হলো, তা দেখে এটাই স্পষ্ট, এর মাস্টারমাইন্ড কারা।’

আশফাক নিপুণ, পরিচালক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর হামলা হয়েছে। দুজন ছাত্রীকে পেটাচ্ছেন একজন। তেমন একটি ছবি মন্তব্যের ঘরে পোস্ট করে পরিচালক আশফাক নিপুণ লিখেছেন, ‘ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।’

নিলয় আলমগীর, অভিনেতা

সামাজিকমাধ্যমে কোটা সংস্কার চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান অভিনেতা নিলয় আলমগীর। নিলয় নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও এদেশে বৈষম্য চান না এই অভিনেতা। ফেসবুকে নিলয় লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজকের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামী দিনের ভবিষ্যত। তারাই একটা সময় দেশের হাল ধরবে। এত এত ছাত্র ছাত্রী ভুল দাবি করতে পারে না।’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে নিলয় বললেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও বলছি, দয়া করে কোটা সংস্কার করে দিন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারকে যে সম্মান এবং ভালোবাসা আপনি সবসময় দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।’ সবশেষে নিলয় বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এখন হাসির পাত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের জায়গাটা ঠিক রাখতে হলেও কোটা সংস্কার মেনে নিন। আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীদের এই দুরবস্থা সহ্য করার মতো না। পুরো জাতি আপনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।’

মিশুক মনি, পরিচালক

‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমার পরিচালক মিশুক মনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই সব দৃশ্য শহরে হু হু করে হাহাকার নামায়। মুক্তিযোদ্ধার বিরোধিতা করা আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করা এক নয়। এই মুল্লুকে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে রাজাকার হয়ে যায়। সরকারের চেয়ারধারী কোনো কর্তার দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে রাজাকার হয়ে যায়। দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামলে রাজাকার হয়ে যায়।’ মিশুক আরও লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামা ছাত্রদের আজ ছাত্রলীগ কর্মীরা হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করে আহত করেছে। কেন? অথচ সরকার তার প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে আলাপ করতে পারত।’

তাসরিফ খান, গায়ক

তরুণ গায়ক তাসরিফ খান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছেন। তিনি মনে করেন, এটা যৌক্তিক। এই সংস্কারের পক্ষে তিনি। এই গায়ক লিখেছেন, ‘ছাত্ররা সম্পূর্ণ যৌক্তিকভাবে তাদের মেধার মূল্যায়ন চায়। এই ন্যূনতম চাওয়াটুকু যদি না দেওয়া হয়, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু আর হতে পারে না।’

জিয়াউর রহমান, গায়ক

দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’-এর লিডার জিয়াউর রহমান মনে করছেন, কোটাব্যবস্থা মানেই এক্সট্রা বেনিফিট দেওয়ার রাস্তা। ফেসবুক পোস্টে জিয়া লিখেছেন, ‘কোটা ব্যবস্থা’ মানেই এক্সট্রা বেনিফিট দেওয়ার রাস্তা। মেধার বাইরেও আলাদা করে বিশেষ ক্ষেত্র অফার, যাতে বঞ্চিত গোষ্ঠী সুবিধা পায় কিংবা অসাধারণ/বিশেষ অবদানের জন্য, নিজের চূড়ান্ত স্যাক্রিফাইসের জন্য পরিবার বেনেফিটেড হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এই এক্সারসাইজটা করার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই।’ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান স্মরণ করে জিয়া আরও লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে আছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু লক্ষ্য করুন, নিশ্চয়ই মুক্তিযোদ্ধা বা ওনাদের নিকটাত্মীয় তরুণ নয়। বঞ্চিত গোষ্ঠীর বিবেচনাতেও একই রকম ইক্যুয়েশন আছে। তার মানে, কোটাব্যবস্থা একটা প্রবল মিসইউজের রাস্তা তৈরি করা ছাড়া এখন আর কোনো ভূমিকা রাখছে না। মাঝখান থেকে মেধাবী, যোগ্য তরুণ হারাচ্ছে তার সুযোগ। ফ্রাস্ট্রেশন নিয়ে পাড়ি দিতে হচ্ছে তার দৈনন্দিন জীবন।’ পোস্টের শেষে জিয়া লিখেছেন, ‘কোটাব্যবস্থা থেকে তরুণ সমাজকে মুক্ত করা হোক। মেধা ও যোগ্যতা স্বীকৃতি পাক। এটা অনস্বীকার্য যে, আমাদের দেশে সঠিক জায়গায় যোগ্য মানুষের অভাব আছে। বঞ্চিতকে বেনিফিট দিতে গিয়ে যোগ্য কাউকে বঞ্চিত করা কোনো সুফল নিয়ে আসে না।’

সিয়াম আহমেদ, অভিনেতা

দেশের বড়পর্দা ও শোবিজের জনপ্রিয় অভিনেতা সিয়াম আহমেদ তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ক্যাম্পাস রক্তাক্ত কেন? শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’

সুমন আনোয়ার, নির্মাতা ও অভিনেতা

নির্মাতা ও অভিনেতা সুমন আনোয়ারও আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষে লিখেছেন, ‘দেশটা তাহলে শুধুই আপনাদের, আমরা ধইঞ্চা? আসলে যেখানে দায়িত্ব শব্দটা ‘ক্ষমতা’ হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে নাগরিক ধইঞ্চা!’

আরও অনেকে তারকারাই কোটা আন্দোলনের পক্ষে তাদের মতামত জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনেত্রী সাবিলা নূর জানান নিজের মতামত। তিনি লিখেছেন, ‘আর কোনও রক্ত না ঝরুক।’ এর আগে অভিনেত্রী বুবলীও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে প্রশ্ন ছুড়ে লিখেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরবে কেন?’ এর আগে, কোটা আন্দোলন ও সংঘর্ষ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আওয়াজ তুলেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, পরীমণি, পূজা চেরি, জিয়াউল হক অপূর্ব, সাদিয়া আয়মান, ইউটিউবার  সালমান মুক্তাদির, অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক, কনটেন্ট ক্রিয়েটর আরএস ফাহিম চৌধুরী, সংগীতশিল্পী তাসরিফ আহমেদ, ইফতেখার রাফসানসহ অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনায় আক্রান্ত এক ছাত্রীর ছবি পোস্ট করে পরীমণি লেখেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক।‘

কলকাতার তারকাদের প্রতিবাদ

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতেও। আবু সাঈদের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন তারকা শিল্পী। আন্দোলনকারীদের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন টলিউড অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি, সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ী, গীতিকার এবং পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাস গুপ্ত এবং অভিনেতা অনিন্দ্য চ্যাটার্জি।

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, সংগীত পরিচালক

ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক। বিসমিল্লাহ, আমি তোমাকে চাই, হরিপদব্যান্ডওয়ালা, পারবো না আমি তোমাকে ছাড়তে, এক যে ছিল রাজা, গল্প হলেও সত্যি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আবু সাঈদের মৃত্যুতে হৃদয় ভেঙেছে তারও। সামাজিকমাধ্যমে ইন্দ্রদীপ লিখেছেন, ‘জীবন আপনাকে মনে রাখবে, ভাই।  ক্ষমতার সাথে সাথে দায়িত্ব আসে, সত্য প্রায়শই ভুলে যায় এবং অগ্রাহ্য হয়ে যায়।  এমন সরকারের জন্য তীব্র লজ্জা।  বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সাথে নিরঙ্কুশ সংহতি।’

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী

শহর ঢাকায় বারুদে গন্ধে আঁতকে উঠেছেন স্বস্তিকা। ঢাকার জাহাঙ্গীরনগরকে নিজের ক্যাম্পাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই দেখছেন তিনি। সামাজিকমাধ্যমে স্বস্তিকা লিখেন, ‘এক মাস হলো আমি নিজের দেশে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খবরের চ্যানেলে তৃতীয় বিশ্বের কোনো খবরই তেমন একটা চলে না। আর আমি খুব একটা ফোনের পোকা নই তাই এত খারাপ একটা খবর কানে আসতে দেরি হলো। তো কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ গেলাম, খুব ইচ্ছে ছিলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার। চারুকলা যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, জীবনের একটা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। প্রতিবার আসি, ব্যস্ততায় যাওয়া হয় না, মা-ও খুব যেতে চাইতেন বাংলাদেশ, নিয়ে যাওয়া হয়নি, কিন্তু আজ একটা ভিডিও দেখলাম, গুলির ধোঁয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আক্রান্ত। ছাত্র বয়স গেছে সেই কবে, তবে জাহাঙ্গীরনগর আর আমার যাদবপুর খুব কাছাকাছি। কাঠগোলাপের গাছগুলোও কেমন এক রকম। এক রকম আকাশের মেঘগুলোও। কেবল আজ ওখানে বারুদের গন্ধ। ‘ময়দান ভারী হয়ে নামে কুয়াশায়/ দিগন্তের দিকে মিলিয়ে যায় রুটমার্চ/ তার মাঝখানে পথে পড়ে আছে ও কি কৃষ্ণচূড়া?/ নিচু হয়ে বসে হাতে তুলে নিই/ তোমার ছিন্ন শির, তিমির।’ এমন এক আপ্যায়নপ্রিয় জাতি দেখিনি, খাবারের নিমন্ত্রণ যেন শেষ হতেই চায় না, অমন সুন্দর করে সারা রাস্তা জুড়ে ভাষার আল্পনা আর কোথায় দেখব? নয়নজুড়ানো দেওয়াল লেখা? এ বোধহয় মুক্তিযুদ্ধের শপথ নেওয়া একটা জাতির পক্ষেই সম্ভব। আজ, অস্থির লাগছে।  আমিও তো সন্তানের জননী। আশা করবো বাংলাদেশ শান্ত হবে। অনেকটা দূরে আছি, এই প্রার্থনাটুকুই করতে পারি। অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো-সেই আমাদের আলো, আলো হোক, ভালো হোক সকলের।’

সাহানা বাজপেয়ী, সংগীশিল্পী

২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীশিল্পী সাহানা বাজপেয়ী। এরপরও নানা সময় গানের সুবাদে এপার বাংলায় এসেছেন তিনি।  কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষরণে হৃদয় পুড়ছে সাহানারও। সামাজিকমাধ্যমে আবু সাঈদের প্রতিবাদি ছবি শেয়ার করে সাহানা লিখেছেন, ‘মৃত্যুর ঠিক আগে সোস্যাল মিডিয়ায় ’৬৯ সালের শহীদ শিক্ষক শামসুজ্জোহার কথা লিখেছিলেন আবু সাঈদ। ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে পাকিস্তানি সেনার বন্দুকের গুলি থেকে ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন তিনি। আবু সাঈদ লিখেছিলেন, ‘স্যার, এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার। আপনার সময়সাময়িক যারা ছিল, সকলেই মরে গেছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।’ আবু সাঈদ শুধু নন, গোটা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ে আজ বলছে, ‘যদি আজ শহিদ হই তবে আমার নিথর দেহটা রাজপথে ফেলে রাখবেন। ছাত্র সমাজ যখন বিজয় মিছিল নিয়ে রুমে ফিরবে তখন আমাকেও বিজয়ী ঘোষণা করে দাফন করবেন।’

অনিন্দ্য চ্যাটার্জি, চলচ্চিত্র পরিচালক

অনিন্দ্য চ্যাটার্জি পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র পরিচালক। জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর গায়ক-গীতিকার তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি স্বাধীন সংগীত পরিচালক হিসেবে মূলধারার বাংলা চলচ্চিত্রে বহুবিধ গান রচনা করেছেন। আবু সাঈদের ছবি শেয়ার করে ক্ষুদিরাম বসুর কবিতা ক্যাপশন দিয়েছেন অনিন্দ্য।  তিনি লিখেছেন, ‘লড় -/ না লড়তে পারলে বলো।/ না বলতে পারলে লেখো ।/ না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও।/ না সঙ্গ দিতে পারলে যারা এগুলো করছে তাদের মনোবল বাড়াও।/ যদি তাও না পারো, যে পারছে,/ তার মনোবল কমিও না।/ কারণ, সে তোমার ভাগের লড়াই লড়ছে।

মিমি চক্রবর্তী, নায়িকা

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ভারতের নায়িকা ও সাবেক সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনে সহিংসতায় শিক্ষার্থীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন এমন একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতীয় সংসদে মিমি চক্রবর্তী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন শীর্ষক ভিডিওটি এখনকার নয় বরং, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া পর লোকসভার অধিবেশনে মিমির শপথ গ্রহণের ভিডিওর কিছু ক্লিপের সাথে বাংলাদেশের চলমান কোটা আন্দোলনের কিছু ফুটেজ যুক্ত করে ভিডিওটি তৈরি করেছে কেউ।’

লেখাটির পিডিএফ দেখতে হবে ক্লিক করুন: হলি বলি টলি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

19 − 5 =