ক্রিকেট প্রেমীদের ঈদ উৎসব

সালেক সুফী

আমরা যারা অপেক্ষাকৃত প্রবীণ ক্রিকেট পূজারী তাদের জন্য কাল ক্রিকেট বিশ্বের দুই প্রান্তে শুরু হচ্ছে দুটি আকর্ষণীয় ক্রিকেট সিরিজ। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ নগরীর পার্থ স্টেডিয়ামে ৫ টেস্টের গুরুত্বপূর্ণ বোর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজটি হবে শীর্ষস্থানীয় দুটি দল অস্ট্রেলিয়া-ভারতের শেয়ানে শেয়ানে লড়াই।  চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলার জন্য সিরিজ জয় দুটি দলের জন্য অপরিহার্য।  পা পিছলে পড়ে গেলে একটি দল ছিকটে পড়ার সম্ভাবনা।

অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জ এন্টিগার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে  শুরু হবে পয়েন্টস টেবিলের নিচু সারির দুটি দেশ বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। আমার মায়ের দেশ বাংলাদেশ। এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়া। ভালোবাসি ক্রিকেট টেস্ট ক্রিকেট।  তাই টেস্ট ক্রিকেটের রমরমা সময়ে দারুন উপভোগ করছি ক্রিকেট আলোচনা বিশ্লেষণ।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রান্তি লগ্নে এসে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নিউ জিলান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা যে কোন দুইটি দল ২০২৫ ইংল্যান্ডে ফাইনাল খেলতে পারে।  তবে শীর্ষ স্থানীয় দুটি দল অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। তবে সিরিজে একটি দল আধিপত্য বিস্তার করলে অপর  দল ছিটকে পড়বে।  অপরদিকে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই ধরনের কোন মাথা ব্যাথা নেই। বাংলাদেশকে সম্মান রক্ষার জন্য জিততেই হবে। অন্যদিকে ঘরের মাঠে হারতে চাইবে না ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ভারত গত দুই সফরে অস্ট্রেলিয়াকে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে হারিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ভারত সবাইকে হতবাক করে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের কাছে টেস্ট সিরিজ ধবল ধোলাই হওয়ায় সব সমীকরণ পাল্টে গেছে। নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের সামনে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং বারবার তাসের ঘরের মোট ধসে পড়েছে। স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে সেই আতঙ্ক থেকে কতদূর ঘুরে দাঁড়াবে ভারত ব্যাটিং তার উপর নির্ভর করবে ভারতের সিরিজে টিকে থাকা।

পার্থ, ব্রিসবেন, মেলবোর্নের দ্রুত গতির বাউন্সি উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার উঁচু মানের পেস বোলিং সামাল দেওয়া সহজ হবে না। স্টার্ক, কামিন্স, হেজেলউডের সঙ্গে আছে স্কট বোলান্ড। অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে ভিরাট কোহলিকে দ্রুত ফর্মে ফিরে ব্যাটিং দায়িত্ব নিতে হবে।  রোহিত শর্মা প্রথম টেস্ট খেলছে না। তরুণ ওপেনার যশবি জায়সোয়ালের জন্য হবে অগ্নি পরীক্ষা, একই সঙ্গে একই কথা বলা চলে শুভমান গিলের ক্ষেত্রেও। এই অবস্থায় কে এল রাহুল এবং ঋষভ প্যান্টকে নিজেদের সাধ্যের সবটুকু নিবেদন করতে হবে। আমি মনে করি জাসপ্রিত বুমরাহ ভারত আক্রমণের ট্রাম্প কার্ড হবে। মোহাম্মদ সামি সিরিজে প্রয়োজন হবে। মোহাম্মদ সিরাজ হয়ত ভালো করবে। জানিনা জাদেজা বা অশ্বিন কতটা কার্যকরী হবে সিডনি ছাড়া অন্য কোথাও।

অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং সমস্যা আছে টপ অর্ডার নিয়ে। মৌসুমের শুরুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের নড়বড়ে মনে হয়েছে। হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদিদের খেলতেই হিমশিম খেয়েছে। ডেভিড ওয়ার্নার নেই। উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ওপেন করবে আনকোরা নবীন নাথান মাকুইনি।  শুরুতে বুমরাকে সামাল দেওয়া সহজ হবে না। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং মেরুদন্ড লাবুচ্যাং, স্মিথ, মার্শ এবং ট্রাভিস হেড।  অস্ট্রেলিয়া নিয়মিত অন্তত ৩৫০-৪০০ রান করলে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটে শক্তিশালী বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং দিয়ে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। তবে দুটি প্রায় সমান শক্তির দলের লড়াই জমে উঠবে বলে বিশ্বাস করি।

অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজের সঙ্গে তুলনীয় নয় বিধায় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ আলাদা ভাবে সমীক্ষা করবো। জানি ক্রিকেটপ্রেমীরা দুটি সিরিজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উপভোগ করবেন। যেন ক্রিকেটের ঈদ মৌসুম শুরু হবে কাল থেকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 + sixteen =