ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আরো একটি আত্মসমর্পণ

সালেক সুফী

কাল চেন্নাইতে চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অসহায় আত্মসমর্পনে এতো টুকু বিস্মিত হইনি। এবারের বিশ্বকাপে শুরু থেকে উড়তে থাকা তুখোড় নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখনো দল নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকা দল তুড়িতেই উড়ে যাবে, হালে পানি পাবে না সেটি ছিল প্রত্যাশিত। তাই প্রথমে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের মামুলী ২৪৫/৯ রান তাড়া করে ৪৩ বল হাতে রেখে নিউ জিল্যান্ডের দাপুটে জয়কে আমি অবধারিত পরিণতি হিসাবেই মেনে নিয়েছি। তবে কষ্ট হয় এতো বিতর্ক, এতো নাটকের পর নির্বাচিত স্কোয়াড নিয়ে বিশ্ব কাপে এসেও চলছে একাদশ নিয়ে কাটাছেড়া।  দলের বাটিংয়ে টপ, বটম কিছুই নেই। শুরুতেই ৩/৪ উইকেট অবলীলায় পরে যাচ্ছে। কাকে কখন কোন পজিশনে কি কারণে খেলানো হচ্ছে কোনো যুক্তি সঙ্গত কারণ নেই। এই যেমন কাল কিছুটা পেস বান্ধব উইকেটে শুরুতেই ৮ উইকেট পড়ে গেল।  লিটন অকারণে প্রথম বলেই বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেসার ট্রেন্ট বোল্টকে উড়িয়ে মারতে গেলো। নবীন তরুণ তানজিদ তামিম এখন বিশ্ব আসরে সেরা বোলারদের মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত নয় আবারো বোঝা গেলো। ইদানিং নাজমুল শান্ত এবং মেহেদী মিরাজের ব্যাটিং স্পট নিয়ে প্রতিদিন কাটা চেরা করছে হাতুরা -সাকিব -সুজন।  ফলাফল ঘোড়ার ডিম্। দলে থাকা অভিজ্ঞ, বিশ্ব মানের মাহমুদুল্লাহ।  দলের বিপন্ন অবস্থায় কেন তাকে খেলতে হবে লেজের দিকে, লেজকে সাথী করে? এগুলো জবাবহীন প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও এখন লজ্জার। যদি কাল তিন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মুশফিকুর রহিম (৬৬), রিয়াদ (৪১*), সাকিব (৪০) রুখে না দাড়াত তাহলে তরুণ তুর্কিতে অবদানে বাংলাদেশ  সংগ্রহে হয়তো ১০০ রান পার হত কিনা নিশ্চিত নই।

এবারের বিশ্ব কাপে কিন্তু শুরু থেকে কালো টুপিওয়ালারা কালো ডায়মন্ড হয়ে জ্বলছে।  প্রথম ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দেয়ার পর টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডসকেও সহজেই হারায়। বাংলাদেশকে নিয়ে আবেগী বাংলাদেশিদের স্বপ্ন থাকলেও অন্তত এবারের এলোমেলো । বাংলাদেশ খাবি খাবে লিখেছি লেখায়,বলেছি মিডিয়ায়।  তবু  আশা ছিল লড়াই করবে।  কিন্তু লড়াই হলো না।  বিশাল ব্যাবধানে পরাজিত বাংলাদেশের এখন ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলা অবস্থা। তিন ম্যাচ দুটিতেই বিশাল পরাজয়। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের সঙ্গে ভরসা পাই না। এমনকি শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে জয় দুটো নিশ্চিত নয়। হতাশ করতে কষ্ট লাগে। হাজার হোক নিজের মায়ের দেশ।

কাল টসে হেরে ব্যাট করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। লিটন ইংলান্ডের সঙ্গে হেরে যাওয়া আগের ম্যাচে ভালো ব্যাটিং উপহার দিয়েছিলো। কাল যেন পরিকল্পনা ছিল ব্ল্যাক ক্যাপসদের তাসমান সাগরের ওপারে ছুড়ে ফেলবে।  প্রথম বলে ট্রেন্ট বোল্টকে কেন ডাউন টি উইকেট খেলতে হবে।  শুরুতেই সেই ধাক্কা সামাল দিতে মেহেদী মিরাজকে পাঠানো হলো।  গত কয়েক মাসে মিরাজ ১-৮ সব পজিশনে খেলছে। শান্ত ৩ নম্বরে স্থিতু থাকলেও নাড়াচাড়া হচ্ছে।  বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে দেশে রেখে এসে জুনিয়র তামিমের উপর ভরসা রাখা হলেও এখনো সে বিশ্ব মানের তুখোড় বোলারদের বিরুদ্ধে বিশ্ব আসরে লম্বা ইনিংস খেলতে প্রস্তুত নয় কাল আবার প্রমান হলো। লিটন, ছোট তামিম, শান্ত, মেরাজ চার উইকেট উড়ে গেলো ৫৬ রান করতেই নিউ জিল্যান্ডের তুখোড় বোলিং ফিল্ডিংয়ের মোকাবিলায়। দলে থাকা বিশ্বমানের অভিজ্ঞ এবং খোদ নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে প্রমাণিত সফল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে কি ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোট করা যেত না? যাহোক মুশফিক, সাকিব ভালো মতোই সামাল দিচ্ছিলো।  ৫ম উইকেট জুটিতে ৯৬ রান যোগ হলো।  কার্ডিফ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব -রিয়াদ জুটির কথা মনে পড়ছিলো। কিন্তু সাকিবের মাংসপেশীতে টান পড়ায় ছন্দ পতন হলো।  কালকের ম্যাচের সেরা বোলার লোকি ফার্গুসনকে উড়িয়ে মারতে যেয়ে উইকেট কিপারের কাছে ধরা পড়লো সাকিব ৪০ রান করে।  ভেঙে পড়লো প্রতিরোধ।  মুশফিক নিজেও ৬৬ রান করার পর হেনরির নিচু হয়ে আসা স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হলো। এর পর মাহমুদুল্লার অবদানে বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলতে পেরেছে এবং ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে না যেয়ে অন্তত ২৪৫/৯ করেছে।

বরাবরের বিশ্বকাপে ভালো খেলা নিউজিল্যান্ড কিন্তু এখনো বিশ্বকাপ জয় করেনি। মাত্র ৫০ লক্ষ শান্ত ভদ্র মানুষের দেশ নিউজিলান্ড কিন্তু এবার বিশ্বজয়ের জন্য মুখিয়ে আছে। ২৪৬ রানের মামুলি টার্গেট হেসে খেলে উতরে যেতে ওদের বেগ পেতে হয় নি. পেস বান্ধব উইকেটে শুরুতে ভালো বোলিং করেছিল মুস্তাফিজ ও শরিফুল।  কিন্তু ফর্মে থাকা ড্যারিল মিচেল (৮৯*) এবং ডেভন কনওয়ে (৪৫) দলের সহজ বিজয় ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দলের অনুপ্রেরণা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ইন্জুরি থেকে দলে ফিরেই করেছে ৮৯। আবারো হাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে না হলে হয়তো পেতে পারতো সেঞ্চুরি।  ৪৩ বল হাতে রেখে বিশাল জয়।  বিশ্বকাপে ৬ বারের মোকাবিলায় ১০০% জয়ের ধারা বজায় রাখলো নিউ জিল্যান্ড।

জানিনা অব্যাহত বাজে খেলার কি অজুহাত দিবে টিম ম্যানেজমেন্ট। দেখতে হবে সাকিবের ইনজুরি কতটা গুরুতর।  বাংলাদেশকে অন্তত কিছু ম্যাচ জিততে হবে।  আপাতত সেমি ফাইনাল খেলার স্বপ্ন না হয় গুটিয়ে নেয়া হল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × 5 =