গৃহসজ্জায় পেইন্টিং

ময়ূরাক্ষী সেন

সবারই চেষ্টা থাকে নিজের ঘর নান্দনিক ভাবে সাজিয়ে তোলার। সারাদিন আমরা যত জায়গায় ছোটাছুটি করি না কেন শেষ স্থান আমাদের ঘরেই। এই ঘরই আমাদের ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়ে থাকে। কেমন করে ঘর সাজাবেন তা নির্ভর করছে আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের ওপর। অনেকেই নিজের ঘরকে দেশীয় ঐতিহ্য দিয়ে সাজাতে পছন্দ করেন, অনেকে আবার ওয়েস্টার্ন কালচারের ছোঁয়া রাখতে চান। তবে ঘর সাজানোর সময় সতর্ক থাকা জরুরি। ঘর কেমন করে সাজানো উচিত তা নির্ভর করছে ঘরের সাইজ এবং আরো প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয়ের উপর। ঘর সাজানোর সময় ঘরের আয়তন এবং অন্যান্য বিষয় খেয়াল না রাখলে ঘরে সৌন্দর্যের বদলে হিবিজিবি লাগবে।

ঘর সাজাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে দেয়াল। দেয়াল আপনি মনের মতো সাজিয়ে তুলতে পারবেন। এতে আপনার ঘরে জায়গার অপচয় হবে না, লাগবে না কোনো বাড়তি আসবাবপত্র। রঙ তুলি ব্যবহার করে কিংবা বিভিন্ন শৈল্পিক পেইন্টিং দিয়ে খুব সহজেই দেয়াল সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন। দেয়াল সাজাতে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে পেইন্টিং কিংবা বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। যেকোনো রঙের রয়েছে একটা আলাদা জাদু। রঙ আপনার মুড এবং মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। আর ঘরে যদি থাকে বড় একটি পেইন্টিং তাহলে দিনশেষে এটি আপনাকে রিফ্রেশ অনুভূতি দিবে। তবে রঙের ব্যবহার এবং পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে এবং অত্যন্ত বিচক্ষণ থেকে বাছাই করতে হবে। কারণ ঘরের রঙ বা পেইন্টিং সঠিকভাবে বাছাই না করলে ঘরের শোভা বেড়ে যাওয়ার চেয়ে বরং কমে যেতে পারে। ঘরের সাথে মানানসই রঙ এবং যেকোনো একটি পেইন্টিং আপনার ঘর মুহূর্তে বদলে দিতে পারে। ঘরের আবহ পরিবর্তন চাইলে ঘরের রঙ পাল্টে ফেলতে পারেন কিংবা তার সাথে যুক্ত করতে পারেন হ্যান্ড পেইন্ট। অনেকেই ঘরের একঘেয়েমি দূর করার জন্য ঘন ঘন দেয়ালের রঙ পরিবর্তন কিংবা পেইন্ট করাতে চান। সেক্ষেত্রে সব সময় রঙমিস্ত্রি বা পেশাদার মানুষ হাতের কাছে পাওয়া যায় না এবং খরচের বিষয় তো রয়েছেই।

অনেকে রঙ তুলি নিয়ে নিজেই লেগে পড়েন দেয়ালের রঙ পরিবর্তন করতে কিংবা পেইন্ট করতে। মোটামুটি ছবি আঁকা জানলে বা রঙ সম্পর্কে ধারণা থাকলে যে কেউ খুব সহজেই নিজের ঘরে হ্যান্ড পেইন্ট কিংবা রঙ পরিবর্তন করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই রঙ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে এবং কোন ঘরে কোন ধরনের রঙ মানানসই বা কোন ঘরে কোন ধরনের পেইন্ট করা উচিত সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তবে কাজ শুরু করতে হবে। নিজের ঘরের রঙ নিজে করতে পারলে এতে যেমন খরচ বাঁচবে তেমনি সৃজনশীলতা ও নান্দনিকতাও ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

অনেকেই মনে করেন ঘর বড় দেখানোর জন্য সাদা রঙ করাই উপযুক্ত। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ঘর যে সাদা রঙ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আপনি যদি হালকা রঙ পছন্দ করেন তবে ক্রিম, পেস্ট ইত্যাদি রঙ করতে পারেন। হালকা রঙ আপনার ঘরের স্নিগ্ধতা বাড়াবে এবং মন শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন বেডরুমে হালকা রঙ করাই উত্তম। তবে আপনার যদি হলুদ, লাল, নীল রঙের প্রতি আলাদা ভালোলাগা থাকে সেক্ষেত্রে ডাইনিং রুম কিংবা বসার ঘরে এ ধরনের রঙ করতে পারেন। বলা হয়ে থাকে হলুদ রঙ মন ভালো করতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে আপনার বসার ঘরে চাইলে হলুদ রঙ করতে পারেন। পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি হ্যান্ড পেইন্ট করতে পারেন কিংবা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের পেইন্ট ঘরে টানিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে ন্যাচারাল বা প্রকৃতির ছোঁয়া। বাজারে সাধারণত লতাপাতা ফুল ইত্যাদি ধরনের পেইন্টিং পাওয়া যায়। চেষ্টা করতে হবে কাচের ভিতরে আছে এমন পেইন্টিং কেনার, এতে ছবি অনেক দিন ভালো থাকে। তা না হলে ছবি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কিংবা পেইন্টিং ময়লা হয়ে যাবার অনেক সম্ভাবনা থাকে।

বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসা ফ্রেমের পেইন্টিং যদি বড় আকারের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে দেয়ালে সঠিক সাপোর্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট বড় সাইজের হুক থাকতে হবে। ঘরের বিভিন্ন কোনে পেইন্টিং আপনার নান্দনিকতা এবং রুচির পরিচয় দিবে। বসার ঘরে টানিয়ে দিতে পারেন বড় ফ্রেমের রঙধনু পেইন্টিং। এতে আপনার খুব সাদামাটা বসার ঘরও হয়ে উঠবে রঙিন। যেকোনো একটি ঘর থিমভিত্তিক পেইন্টিংয়ে সাজাতে পারেন।

যদি ঘরে নিজেই ছবি আঁকতে চান তাহলে পেন্সিল ব্যবহার করে আঁকতে পারেন পরবর্তীতে সে চিত্রের উপরে রঙ করতে হবে। ছবি আঁকার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন থিমে আপনি ঘর রঙ করতে চান। যেমন আপনি যদি চান ভিন্টেজ কোনো চিত্র থাকবে তাহলে প্রথমে ছবি ঠিক করতে হবে এবং সেই ছবি অনুসরণ করে দেয়ালে চিত্র আঁকতে হবে। দেয়াল জুড়ে দিতে পারেন আলপনা, আলপনার ফলে আপনার ঘরটি পাবে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া এবং ফুটে উঠবে নান্দনিকতা। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প নকশা ইচ্ছামতো করে নিতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের মতে দেয়ালে চিত্র আঁকার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত। যে ঘরে অতিরিক্ত সূর্যের আলো কিংবা বৃষ্টির পানি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে ঘরের রঙ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

ঘরে ছবি আঁকার আগে কিংবা রঙ করার আগে এমন ঘর বেছে নিতে হবে যেখানে সহজে সূর্যের আলো পৌঁছায় না। ড্যামেজ থাকলে সেই দেয়ালে রঙ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তবে পেইন্ট করার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। কারণ এই সময় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। আবহাওয়া থাকে আর্দ্রতা মুক্ত ফলে দ্রুত রঙ শুকিয়ে যায়। নিজেই যদি ঘরে ছবি আঁকতে চান তাহলে বেছে নিতে হবে সহজ কোনো নকশা যেমন পাখি গাছ ইত্যাদি। এতে সৃজনশীলতার পাশাপাশি ঘরে নিয়ে আসতে পারবেন প্রকৃতির ছোঁয়া। তবে যে ধরনের ছবি আপনি আঁকুন না কেন প্রথমে মোটিফ ঠিক করে নেওয়া অনেক জরুরি।

ঘর নান্দনিক ও সৃজনশীল উপায়ে ফুটিয়ে তোলার জন্য পেইন্টিং কিংবা ভিন্নধর্মী রঙ করার বিকল্প কিছুই হতে পারে না। তাইতো এখন ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে পেইন্টিং। ঘর বড় কিংবা ছোট সেটি কোনো বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে আপনি কত সৃজনশীলতার সাথে সাজিয়ে তুলতে পারছেন। ঘরের রঙ যেহেতু ঘরের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে দিবে এবং এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয় তাই ঘরে রঙ করানো কিংবা পেইন্ট করার আগে অবশ্যই এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে পড়াশোনা করে নিতে হবে। তবে সব ধরনের ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলে ঘর রঙ করার দায়িত্ব দিয়ে দিতে পারেন কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইনার কিংবা পেশাদার শিল্পীকে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টেরিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three + nine =