গেবেহায় ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থাপত্র

সালেক সুফী

ডারবান টেস্টে খর্ব শক্তির দক্ষন আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের স্বর্ণ সুযোগ লাগসই কৌশল আর দলের ব্যাবস্থাপনায় থাকা “অধিক সন্ন্যাসীতে  গাজন নষ্ট” সক্রমণে হাতছাড়া হয়েছে। টস জয় করে ব্যাটিং না করা ছিল বড় ভুল। আর টেস্ট দলের অন্যতম মূল শক্তি তাইজুল ইসলামকে উপেক্ষা করার পরিণতি হাতে হাতে মিলেছে। সব কিছু ছাপিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৯ ওভারে ৫৩ রানে গুটিয়ে যাবার কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশ বাউন্সি উইকেটে ভালো পেস আক্রমণ খেলতে গলদঘর্ম,  ঘূর্ণি উইকেটে সাধারণ মানের স্পিন আক্রমণে নাভিশ্বাস। তাহলে টেস্ট খেলার কি দরকার? বাংলাদেশ দুই চার বছর টেস্ট খেলা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন চাইতেই পারে।

যাহোক ডারবান টেস্টে লজ্জাজনক ব্যার্থতার মাঝেও কিছু আলোর ছটা ছিল। তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়ের পরিণত ১৩৭ টেস্ট ইনিংসটি দেখে সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের অনেক কিছু শিক্ষার আছে। ৯৮/৪ থেকে দল ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৯৮ করেছিল  জয়,  লিটন -মিরাজে  ভর   করে। খালেদ,  মিরাজ -এবাদত -তাসকিন দুই ইনিংসে বলেও বোলিং করে প্রতিপক্ষের ১০+১০=২০ টি উইকেট সীমিত রানেই তুলে নিয়েছিল। কিছু ৫০:৫০ সিদ্ধান্ত দলের অনুকূলে আসলে,  ডিআরএস নেয়ায় মুন্সিয়ানা দেখতে পারলে পরাজয়ের ব্যাবধান কম হতেও পারতো। রেকর্ড বইতে কিন্তু এগুলো লেখা থাকবে না। লেখা হবে বাংলাদেশ ডারবান কিংসমিড মাঠে সর্বনিম্ন ৫৩ রানে ১৯ ওভারে দুই স্পিনার মহারাজ আর সাইমন হার্মারে কুপোকাত হয়েছে।

যা সেই অতীত। দুঃস্বপ্নের মতো ভুলে যেতে হবে স্মৃতি। আজ থেকে শুরু হতে চলা সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষটি জয় করার সুযোগটা হাতছাড়া করা চলবে না. পোর্ট এলিজাবেথের সেন্ট জর্জ পার্ক দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে পুরোনো ক্রিকেট মাঠ। এযাবৎ অনুষ্ঠিত ৩১ টেস্ট ম্যাচের প্রথমটি হয়েছিল ১৮৬৯ ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকার মাধ্যে। ৩১ টেস্টের ২৬ টিতে জয় পর্যায় নির্ধারিত হয়েছে। ১৩ টি জিতেছে প্রথম ব্যাটিং করা দল,  ১৩ টি জিতেছে পরে ব্যাটিং করা দল। মাঠটি সাহারা ওভাল ক্রুসেডার গ্রাউন্ড নামেও পরিচিতি পেয়েছিলো। মাঠটির বর্তমান নাম গোবেহা। মাঠে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল অস্ট্রেলিয়ার ৫৪৯/৭। সর্বনিম্ন ৩০ রানে অল আউট দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে। ইনিংস প্রতি গড় স্কোর ৩০৭, ২৩৫,  ২১৫, ১৫৯। অর্থ্যাৎ সময় যত গড়ায় উইকেট ততই বোলিং সহায়ক হয়ে যায়। ৩১ টেস্টে এই মাঠে ৩১ টি সেঞ্চুরি হয়েছে। ৫ বা অধিক উইকেট অর্জিত হয়েছে ৩৫ বার।

বাংলাদেশ দলের সুবিধা হলো হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গ এই শহরের বাসিন্দা এবং এই মাঠের প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে পরিচিত। বোলিং কোচ আল্যান্ড ডোনাল্ড এই মাঠে অনেক ভালো বোলিং করেছেন। উইকেটে সবার জন্য কিছু না কিছু থাকে। পেস বলার সঠিক লাইন লেংথে বোলিং করলে সফল আসবে। সময় যত গড়াতে থাকে স্পিনার্সরা সুবিধা পেতে শুরু করে। নিজেকে প্রয়োগ করে খেললে ব্যাটসম্যানরা সফল হবে। তবে দুপুরের পরে বাতাস জোরে বইতে থাকে খেলোয়াড়দের দ্রুত মানিয়ে নিতে হয়। আশা করি ডোমিঙ্গ,  ডোনাল্ড দলকে আপন আলোয় আলোকিত করবেন।

তামিমের ফিরে আসা টপ অর্ডারকে মজবুত করবে। তামিম জয়কে ভালো সূচনা করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং আহামরি কিছু নয়। তবে প্রথম ম্যাচে স্পিনের বিরুদ্ধে অসহায় থেকে দিন এলগার চাইবে একই অস্ত্রে ঘায়েল করতে। নাজমুল শান্ত কিন্তু ডারবান টেস্টে মন্দ করে নি। আমি জানিনা মোমিনুল,  মুশফিকের আগে ইনফর্ম লিটনকে ৪ নম্বরে ব্যাটিং করানো যুক্তিযুক্ত হবে কিনা। কেন জানি দুইজনকে প্রথম টেস্টে আস্থাহীন মনে হয়েছে। বাংলাদেশকে ৮ জন নিয়ে ব্যাটিং করার যুক্তি দেখি না। ৭ জন ব্যাটসম্যান বার্থ হলে ৮ জন কিছু করতে পারবে না। ইমরান খানের মতো দলনায়ক থাকলে মোমিনুল,  মুশফিকের একজনকে বিশ্রাম দিয়ে ইয়াসিরকে খেলাতো। কিন্তু সেটি হবে না। তাই তাইজুলকে জায়গা করতে দিতে খড়গটা পড়তে পারে ইয়াসিরের উপর। বাংলাদেশকে অবশ্যই ৫ জন মাইন স্ট্রিম বলার নিয়ে খেলতে হবে। সেই সুবাদে খালেদ,  ইবাদাতের সঙ্গে রাহি বা শহিদুল খেলবে। মনে হয়না বাংলাদেশ তাইজুলকে উপেক্ষা করার ভুল দুবার করবে। যদি লাগসই ম্যাচ কৌশল নিয়ে সঠিক দল  নির্বাচন করে। ৫ দিন ধারবাহিকভাবে নিজেদের প্রয়োগ করে আমি মনে করি দুর্বল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয়ের সুযোগ আবারো আসবে। টীম টাইগার্সদের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − four =