সালেক সুফী
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উপুর্যপুরি তিন দিন খেলা ভারত কাল প্রেমাদাসার ঘূর্ণি উইকেটে লংকান বাধা পেরিয়েছে। যতটুকু খেলা হয়েছে এশিয়া কাপ ২০২৩ অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায় ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনাল খেলবে ভারত। কে হবে ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী সেটি নির্ধারিত হবে ১৪ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকা-পাকিস্তান দৈরথে।
কাল টস জয় করে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই মাঠেই আগের ম্যাচে পাকিস্তানের দুরন্ত পেস আক্রমণকে তুলোধুনো করে ৩৫৬/২ বিশাল রানের পাহাড় গড়েছিল ভারত। কাল কিন্তু সেই মাঠেই উইকেটে শুরু থেকেই স্পিন ধরলো।
২০ বছরের নবীন লংকান তরুণ দিনুথ ওয়ালালাগে তুখোড় বাম হাতি স্পিন (৫/৪০) দিয়ে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করেছিল। সঙ্গী ছিল চরিথা আসালংকা (৪/১৮) .ভারতের ২১৩ অনেকটাই মামুলি মনে হয়েছিল। কিন্তু লংকান স্পিন শক্তির চেয়ে আদৌ কম কিসে ভারতীয় স্পিন শক্তি।
কুলদীপ যাদব (৪/৪৩) , রবীন্দ্র জাদেজা (২/৩৩) এবং ভারতের এক্স ফ্যাক্টর জাসপ্রিত বুমরার (২/৩০) সম্মিলিত অবধানে ভারত শ্রীলংকার ইনিংস ১৭২ রানে সীমিত করে ৪১ রানে জয় তুলে নিলো। দুই ম্যাচে দুই জয়ে ভারতের পয়েন্ট এখন ৪।
দুটি ম্যাচ খেলে পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার পয়েন্ট ২। তলানিতে থাকা বাংলাদেশের ০। বলা যায় ভারত ফাইনালের দুয়ার খুলে অপেক্ষা করছে পাকিস্তান না শ্রীলংকা আসবে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে। অবশ্য বাংলাদেশ ওদের সাথে খেলবে ১৫ সেপ্টেম্বর নিজেদের রিয়েলিটি চেক করতে (বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের থেকে ধার নিয়েছি)।
অনেকের ধারণা ছিল বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়ে এশিয়া কাপ ২০২৩ গ্রুপ অফ ফোরের অধিকাংশ খেলা ভেস্তে যাবে। বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়েছে প্রায় প্রতিটি খেলা কিন্তু একমাত্র পাকিস্তান-ভারত মহারণ ছাড়া কোনটি এযাবৎ বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েনি। আশা করি বাকি দুটি গ্রুপ ম্যাচ বৃষ্টি বাধায় পণ্ড হবে না। ফাইনাল খেলার জন্য রিজার্ভ দিন আগে থেকে নির্ধারিত আছে।
কাল টসে জয়ী হয়ে রোহিত সঙ্গত কারণেই ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আগের দুইদিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট মহাযুদ্ধের পর সেটি ছিল সরল সিদ্ধান্ত। উইকেটের কথা বিবেচনায় নিয়ে কাল ভারত শার্দুল ঠাকুরকে বিশ্রাম দিয়ে স্পিন অল রাউন্ডার আক্সার প্যাটেলকে দলে নিয়েছিল। শ্রীলংকার দল ছিল অপরিবর্তিত।
উইকেটে শুরু থেকেই বল গ্রিপ করতে শুরু করলো, স্পিন ধরলো। বাম হাতি স্পিনার দিনুথ ওয়ালালাগের বাম হাতি স্পিন মারকুটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দুর্বোদ্ধ মনে হলো। শুরুতে রোহিত শর্মা (৫৩), মিডল অর্ডারে কে এল রাহুল (৩৯) এবং ঈশান কিষান (৩৩) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লে ভারত কঠিন উইকেটে ২১৩ রান করার পুঁজি পেয়েছিলো। দিনুথ ছাড়াও চমৎকার বোলিং করেছে চারিথা আসালংকা (৪/১৮)।
বিরতিতে অনেকেই ভেবেছিলো শ্রীলংকা হয়তো লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ম্যাচ জিতে নিবে। কিন্তু ভারত দলে এখন সব ধরনের উইকেটের জন্য বাহারি বোলিং সমাহার আছে। আর সেটি কাজে লাগিয়ে জাসপ্রিত বুমরা (২/৩০), কুলদীপ যাদব (৪/৪৩), রবীন্দ্র জাদেজার (২/৩৩) লংকান ইনিংস ১৭২ রানে সীমিত করলো।
সেই দিনুথ ওয়ালালাগে ৪২ রানে অপরাজিত ছিল। এছাড়া ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৪১ এবং চরিথা আসালংকা করলো ২২। দুই একটি লম্বা পার্টনারশিপ হলেই হয়তো জয় পেত শ্রীলংকা। কিন্তু লাটিমের মত ঘূর্ণি উইকেটে ব্যাটিং করা আদৌ সহজ ছিল না।
যে যাই বলুক ভারত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে প্রস্তুত এবং শক্তিশালী দল। নিজেদের প্রমাণ করেই ওরা আরো একটি শিরোপা জয়ের পথে ফাইনালের দুয়ারে পৌঁছে গেলো। আজ বাদে কাল পাকিস্তান শ্রীলংকা ম্যাচে নির্ধারিত হবে পাকিস্তান না শ্রীলংকা হবে ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলাদেশ কিন্তু শেষ ম্যাচ খেলবে ভারতের বিরুদ্ধে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক