সালেক সুফী
চট্টগ্রামের নিরেট ব্যাটিং স্বর্গে প্রথম ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৪০৯/৮ রানের মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ায় পৌঁছেছিল ভারত। জবাবে বাংলাদেশ যখন ব্যাট করলো সেই উইকেটকেই বাংলাদেশের জন্য মনে হলো কসাইখানা। চিরচেনা সহজ ব্যাটিং উইকেটে ৩৪ ওভারেই ১৮২ রানে গুটিয়ে গেলো বাংলাদেশ। কোটি কোটি ক্রিকেট পূজারীর স্বপ্ন ভাঙার ম্যাচে ২২৭ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজিত হলো বাংলাদেশ। প্রশ্ন করতেই পারেন কেন এতো স্বল্প সময়ে সহজেই প্রত্যাশার বেলুন চুপসে গেলো?
ঢাকার মিরপুরে অসম বাউন্সের, ঘূর্ণি উইকেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চুলচেরা ব্যাবধানে (২-০) জিতে হাওয়ায় উড়ছিল বাংলাদেশ। কোটি ভক্ত অনুরাগী স্বপ্ন দেখেছিলো নিজেদের অন্যতম পয়মন্ত চট্টগ্রাম উইকেটে সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে পরাক্রমশালী ভারত দলকে বাংলাওয়াশ করবে বাংলাদেশ। টস জয় করে প্রাথমিক অনুকূল অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। কেন কি ভেবে কোন পরিকল্পনায় উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে শান্ত, নাসুমকে পরিবর্তন করলো বাংলাদেশ? কেন ব্যাটিং স্বর্গে ক্ষুধার্ত ভারতকে ব্যাটিং করার সুযোগ দেওয়া হলো প্রশ্ন করা যেতেই পারে।
দেশজোড়া আর প্রবাসে থাকা কোটি ক্রিকেট অনুরাগী দেখলো কিভাবে সুনামি হয়ে বাংলাদেশ বোলিং দুমড়ে মুচড়ে ৪০৯/৮ রানের পাহাড় গড়লো ভারত, ১৩১ বলে ২১০ রান করে দ্রুততম দুই শত রান, সবচেয়ে কম বয়সে দুই শতাধিক এই ধরনের বেশ কয়েকটি নতুন রেকর্ড গড়লো রোহিত শর্মা আহত হবার কারণে সুযোগ পাওয়া ঈশান কিষান। শুরুতেই ১ রানে সহজ জীবন পাওয়া বিরাট কোহলি বেদম প্রহার করলো বাংলাদেশ বোলিংকে। ৯৭ বলে ১১৩ রান করে বহুদিন পর সর্বকালের অন্যতম সেরা কোহলি।
আগেই বলেছি আমি এই ম্যাচে নাজমুল শান্তকে পরিবর্তনের যুক্তি পাইনি। পরিবর্তন করতে হলে এনামুল বিজয়কে করা সংগত ছিল। ফ্লাট উইকেটে সঠিক লাইন লেংথে বল করলে নাসুম কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো। ইনজুরি থেকে সবে ফেরা তাসকিনকে এই ম্যাচে খেলিয়ে ওর আত্মবিশ্বাস কেন দুমড়ে মুচড়ে দেয়া হলো? উইকেটে সবুজ ঘাস কি বিভ্ৰান্ত করেছিল লিটন দাসকে?
সবাই জানে দুই ম্যাচ হেরে ক্ষুধার্থ শার্দুল হয়ে ফুঁসছিলো ভারত। অনেক দিন থেকেই দলে স্থিতু হবার আশায় আশায় আছে প্রতিভাবান ঈশান কিষান। সুযোগ পেয়ে সহজ উইকেটে রুদ্র মূর্তি ধারণ করলো। মাত্র ১৩১ বলে ২১০ রানের নয়া মাইল ফলকে পৌঁছানো হীরক মোড়ানো ইনিংসে ২৪টি চার আর ১০টি প্রচন্ড ছক্কা ছিল। উইকেটে সাড়া না পেয়েও কেন বাংলাদেশি পেসাররা ক্রমাগত শর্ট বোলিং করেছে? কিষান-কোহলি জুটির টর্নেডো গতিতে গড়া ২৯০ রানের জুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো কখনো শক্তিশালী দলের সঙ্গে মোকাবিলায় কখনো অসতর্ক হবার বিলাসিতা করা উচিত না।
৪১০ রানের টার্গেট করে বাংলাদেশ কি করবে সেটি অনুমিত ছিল। সহজ উইকেটে রয়ে শোয়ে ব্যাটিং করলে অন্তত ভদ্র গোছের ২৫০-৩০০ কিছু করা যেত। কিন্তু এতো সহজেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়বে ভাবিনি। কিছুটা চেষ্টা করেছিল লিটন, সাকিব। সুযোগ ছিল বর্ষীয়ান মুশফিকের উইকেটে থেকে ফর্মে ফেরার। প্রথম দুই ম্যাচে অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ব্যাটিং করে ম্যাচ জেতানো মেহেদী মিরাজকে কি আরো একটু আগে ব্যাটিং করানো যেত না? বাংলাদেশ কেন ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারলো না? ৩৪ ওভার খেলে ১৮২ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ২২৭ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয়ের কালিমা নিয়ে সিরিজ শেষ করলো।
শুভেচ্ছা ভারতীয় তরুণ ঈশান কিষানকে। ওডিআই পর্যায়ে দুই শত রান করার কিংবদন্তিদের ক্লাবে যুক্ত হবার ইনিংসে বেশ কিছু নয়া মাইলফলক অর্জন করার জন্য। কোহলির আরো একটি শত রানের ইনিংস খেলার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুষ্কার স্বামী লিটনকে স্পেশাল ডিনার খাওয়াতেই পারে।
ম্যাচ শেষে একজন গুরত্বপূর্ণ মানুষের মুখে শুনলাম এমন উইকেট তিনি জীবনেও দেখেননি। তাহলে কি ভারত বাংলাদেশ দুটি ভিন্ন উইকেটে খেলেছিল? যাহোক দুই দিন বাদেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে। এই ধরনের শোচনীয় পরাজয় কিন্তু দলের আত্মবিস্বাদে চিড় ধরানোর জন্য যথেষ্ট।