জয়ের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দল পাঠায় নি বাংলাদেশ

সালেক সুফী: পাকিস্তানের রাজধানী রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাঁচা মরার ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৬.১ ওভার খেলে অনায়েসে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান করে নিউজিল্যান্ড টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় রাউন্ডে উন্নীত হয়েছে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ওরা স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারিয়েছিল। বাংলাদেশ হেরেছিল ভারতের বিরুদ্ধে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত পরাজয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ছিটকে পড়া নিশ্চিত হয়ে গেলো।

অন্যানো অংশগ্রহণকারী দলের মত প্রস্তুতি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দল পাঠায়নি বাংলাদেশ। আট দলের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ। যেন বলির পাঠার মতই বিশ্ব পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসরে দল পাঠানো। ফলাফল তাই গ্রূপ পর্যায়ে তিন ম্যাচের দুটি ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের মত পরাক্রমশালী দলের বিরুদ্ধে বিপুল ব্যাবধানে হেরে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ছিটকে পড়েছে। শেষ খেলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে গেলে পরাজয়ের ষোলো কোলা পূর্ণ হবে লজ্জাহীন বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের যদি টুর্নামেন্টে ভালো করার মানসিকতা থাকতো তাহলে তামিম ,সাকিবকে শেষ বারের মত দলে নিয়ে শক্তিশালী দল পাঠানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতো। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেশে বা বিদেশে কিছু অনুশীলন ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করতো। টুর্নামেন্টের আগে বিপিএলের মত বিতর্কিত সাধারণ মানের টুর্নামেন্ট খেলে আদর্শ প্রস্তুতি নিতে পারে নি বাংলাদেশ। বাদ বাকি দলগুলো দেখুন পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানে তিন জাতির টুর্নামেন্ট খেলেছে। ভারত ইংল্যান্ডের সঙ্গে দেশে ওডিআই সিরিজ খেলেছে। অস্ট্রেলিয়া শ্রীলংকা সফরে টেস্ট সিরিজের পাশাপাশি ওডিআই সিরিজ খেলেছে। এমনিতেই বাংলাদেশ বর্তমানে দুর্বল দল। তার পরে কোন প্রস্তুতি ছাড়া টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া বাংলাদেশ সফল হবে এটি ক্রিকেট অভিজ্ঞ কেউ ভাবে নি.

কাল তানজিদ তামিমের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো খেলে ৭৭ রান করে ব্যাটিং ভরাডুবি বাঁচিয়েছে। তামিম ভালো শুরু করে ২৪ রানে ফিরে যাবার পর মেহেদী মিরাজ (১৩), তাওহীদ হৃদয় (৭), মুশফিক (২), রিয়াদ (৪) দ্রুত আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ ইনিংস বিপর্যস্ত হয়ে পরে. ব্রেসওয়েলের নিরীহ গোছের অফ স্পিন বাংলাদেশ ইনিংসে ধস নামায়। ২১ রানে মিডল অর্ডারে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ইনিংসকে ২৩৬ রানের মোটামুটি ভদ্র গোছের পর্যায়ে টেনে তোলার কৃতিত্ব টুকু জাকের আলী (৪৫) এবং রিশাদ হোসেনকে (২৬) দেয়া যেতে পারে। কিন্তু রান করা খুব কঠিন নয় এমন উইকেটে ২৩৬ রান অবশ্যই জয়ের জন্য ৩০-৩৫ রান কম ছিল। ব্রেসওয়েল (৪/২৬) ছাড়াও উইল ও ব্রুক (২/৪০) ছিল সফল বলার। উইকেটে দৈত্য দানব ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতি দিয়েছে আনাড়ির মত।

নিউজিল্যান্ড ইনিংসের সূচনায় তাসকিন প্রথম ওভারেই চমৎকার বলে উইল ইয়াংকে (০) রানে ফিরিয়ে দেয়ার পর তরুণ নাহিদ উইলিয়ামসনকে ৫ রানে ফেরালে ১৫ রানে দুটি উইকেট পরে যায়। কিছুটা আকর্ষণ ফিরেছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। কিন্তু এর পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে রাচীন রবিন্দ্র ডেভন কোনওয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৫৭ রান এবং রাভিন্দ্র -লাথাম চতুর্থ উইকেট জুটি ১২৯ রান করে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে দেয়। উপমহাদেশে জন্ম নেয়া রাচিন লেগ স্পিনার রিশাদের বলে ফিরে যাবার আগে ১০৫ বল খেলে অনবদ্দ ১১২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে। ৫৫ রান করে রান আউট হয় টম লাথাম। ৪৬.১ ওভারে ৫ উইকেট হারিরে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪০ রান তুলে ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিলণ্ড। প্রত্যাশিত ভাবে নিউজিলণ্ড পর পর পাকিস্তান বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারতকে সঙ্গী করে পৌঁছেছে সেমী ফাইনালে। পাকিস্তানের সঙ্গী হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গাছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচটি হবে উভয় দলের মুখ রক্ষার লড়াই।

ফিরে তাকিয়ে আবারো বলবো বাংলাদেশ দলকে অপ্রস্তুত অবস্থায় কোরবানির খাসির মতোই পাঠানো হয়েছে বিশ্বমানের টুর্নামেন্ট খেলতে। তামিম সাকিবের কথা না হয় নাই বা বলি সোম্য ম্যাচ ফিট ছিল না। মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ গোধূলি বেলায় কিছু করতে পারে নি। সাধারণ মানের বিপিএল কখনো ভিন্ন ফরম্যাটে দারুন ভাবে ভাবে প্রস্তুত বিশ্ব সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলার জন্য আদর্শ প্রস্তুতি ছিল না। আমি বাংলাদেশ দলের ছিটকে পড়ায় আদৌ বিস্মিত হয় নি। বাংলাদেশ ক্রিকেট যে বিশ্ব পর্যায় থেকে কতটুকু পিছিয়ে তারই প্রমান মিলেছে এবারের টুর্নামেন্টে। দেখা যাক শেষ ম্যাচে কিছু অর্জন হয় কিনা বাংলাদেশের?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − three =