জলবায়ু অর্থায়নে করোনা-ইউক্রেন যুদ্ধ অজুহাত হিসেবে ব্যবহার হতে পারে

আফরোজা আখতার পারভীন

জলবায়ু তহবিল প্রশ্নে কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকস আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, জলবায়ু তহবিল প্রশ্নে কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধ সবার উপর প্রভাব ফেলেছে তবে আরও বেশি করে ব্যবহার করা হতে পারে। লস এন্ড ড্যামেজ ইস্যু খুব সুফল বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। এখনও লস এন্ড ড্যামেজের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা যায়নি। উন্নত বিশ্ব বলেই দিয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণের কথা শুনতে চায় না। আমাদের বেশি প্রয়োজন অভিযোজন। লস অ্যান্ড ড্যামেজ কত বছরে হিসাব করবো, তারপর পাবো। আমরা দেখেছি অনেক সময় সমঝোতা হয়, তারা কথা দেয় কিন্তু পালন করে না। লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইস্যু বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই ইস্যুকে সামনে রেখে অভিযোজন ইস্যু পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে।

তিনি বলেন, ১০ বিলিয়ন তহবিল জমা হওয়ার কথা। তার মধ্যে আমেরিকার ৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা। ১ বিলিয়ন দেওয়ার পর আমেরিকা বেরিয়ে গেলো, বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ফিরে এসেছেন, কিন্তু কোন অর্থ দেয়নি। যুক্তরাজ্যের ১ বিলিয়ন দেওয়ার কথা, এখনও দেয়নি। অনেক জায়গায়তো প্রতিশ্রুতি দেওয়াই হয়নি। প্রকল্প রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, আমরা অনুমোদন দিলাম, এখন তহবিল নেই, তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে অর্থ দেওয়া হবে।

অর্থায়ন না হলে অভিযোজন ও অন্যান্য বিষয় এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। আগামী ১ বছরে খুব বেশি অগ্রগতি হবে বলে মনে হয় না। কারণ যুক্তরাজ্য বলেছে তারা দিতে পারবে না। বাস্তবে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও সে অবস্থানে নেই। কপ-২৭ এ বাস্তবে কিছু ঘটবে বলে আমি আশাবাদী নই, এবার হয়তো প্রতিশ্রুতি আসবে। তবে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিশ্রুতি পেলে দাবী করার একটি জায়গা তৈরি হবে।

তার মতে, যুদ্ধের জন্য যে খরচ হচ্ছে, এতে কার্বন নিঃসরণ আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১.৫ ডিগ্রি অর্জনের স্বপ্ন ভুলে যাওয়া উচিত। আমাদের আইপিপিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ-১ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে ১.৫ ডিগ্রি ২০৪০ সালের মধ্যে ঘটে যাবে। এনডিসি সবদেশ জমা দিয়েছে, শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে ৫ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়বে, এই টাকা কোথা থেকে আসবে। সুতরাং উন্নয়নশীল দেশ পারবে না, আর উন্নত বিশ্ব করবে না। যা বলা হয়েছে সবটুকু যদি বাস্তবায়ন করা হয়, যেটা কন্ডিশনাল আর আন কন্ডিশনাল। ২.৪ ডিগ্রিতে থাকবে না। উল্টোটা যা করার কথা ছিল, চারদিকে নানা ধরনের অভিঘাত বাড়ছে, সব জায়গায় বাড়ছে। যদি না দ্রুত গ্রিন হাউজ গ্যাস কমানো না, জীবনের প্রতি হুমকি বাড়ছে, কোন দেশ দ্রুত কেউ কিছুটা বিলম্বে মুখোমুখি হবে।

খলিকুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের অর্জন অনেক, নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক কিছু করা হয়েছে। খরচও অনেক করছি ২০২০ সালে তথ্য আমার কাছে রয়েছে, সেখানে দেখেছি আমরা ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো খরচ করেছি, জাতীয় আয়ের ১.৫ শতাংশের মতো। বাইরে থেকে তেমন কিছু পাওয়া যায় নি। এনডিসিতে শর্তসাপেক্ষে যে অঙ্গীকার করেছি, অর্থায়ন না হলে বাস্তবায়ন সম্ভব না। বাংলাদেশ কেনো অর্জন তুলে ধরতে পারছে না, বলতে পারছি না। আমি ২০১৫ সাল পর্যন্ত সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলাম, আমরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করতাম, আমরা যখন কথা বলতাম, অনেক দেশ শুনতো, আগ্রহ দেখাতো। এখন কেনো সমন্বয় হচ্ছে না, কে কি বলছে তাও জানি না।

বাংলাদেশের প্রকল্প প্রণয়নের সক্ষমতা বেড়েছে। আরও বেশি করা উচিত।  আমরা যেসব প্রকল্প দিচ্ছি ২-৩ বছর সময় লেগে যাচ্ছে। প্রকল্প ভালো না হলে দ্রুত বলে দেওয়া উচিত। অর্থপ্রাপ্তির বিষয় রয়েছে আর অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে। জিসিএফ থেকে ১০০ মিলিয়নের মতো অনুদান হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। ইডকলের মাধ্যমে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে এসেছে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা, বাংলাদেশের বেশকিছু সিদ্ধান্ত রয়েছে কাটিয়ে ওঠার জন্য। বৈশ্বিক যুদ্ধে কোন দেশ একার পক্ষে মোকাবিলা করা কঠিন। আমাদের দারিদ্র্য নিরসনের যে সড়ক সেটাকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করতে হবে। আমাদের সবচেয়ে আগে যেটা নেওয়া উচিত সেটা নেওয়া যাচ্ছে না, নানা কারণে। এখান থেকে বেরিয়ে আসবে হবে।

জলবায়ু তহবিল অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক সময় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আসে। মিটিগেশনের জন্যই বেশি আসে, আমরা সেগুলোকে মূল্যায়ন করি। পুনমূল্যায়ন করার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। কিছু ব্যত্যয় থাকেই সব জায়গায়, এখানেও রয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ভালো দেখে না, তারা সবকিছুই এক চশমায় দেখে। যে কারণে এগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেই না।

তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্ট পণ্য যারা কেনে তারা ক্ষমতাবান, তারাই দাম নির্ধারণ করে। তারা নিজের দেশে যে দামে বিক্রি করে, সামান্য পরিমাণে দাম দেয়। প্রচেষ্টা চালানো উচিত দাম বেশি পাওয়ার জন্য, যেহেতু মানসম্মত পণ্য দিচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, উন্নত বিশ্বের নারী ও তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে এলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। কিছু কিছু কিন্তু ঘটছে, উন্নত বিশ্বে অনেকেই এগিয়ে আসছে। তারা যদি তাদের সরকারের উপর যদি চাপ ‍সৃষ্টি করে তাহলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × 3 =