জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশি কথা হয়েছে, কাজ হয়েছে খুব কম

আফরোজা আখতার পারভীন

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যতটা কথা হয়েছে, কাজ হয়েছে খুবই কম। বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকসের ১৬তম পর্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ক্লিন এনার্জিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০৪০ সালে পুরোপুরি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন। তবে পরমাণু প্রযুক্তিতে সুযোগ রয়েছে, তেমনটি করতে হলে এখনই বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে নামতে হবে। বাস্তবতা বলছে তারা মোটেই আন্তরিক নয়। ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র ২৪টি দেশ এনডিসি দাখিল করেছে। এতেই অনুমান করা যায় অগ্রগতি কেমন হবে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যতটা কথা হয়েছে, কাজ হয়েছে খুবই কম।

মুশফিক বলেন, বিশ্ব সত্যি সত্যি একটি খারাপ সময় পার করছে। ইউক্রেন ক্রাইসিসটা যদি সেখানে সীমবদ্ধ থাকতো তাহলে এতোটা প্রভাব ফেলত না। তাইওয়ান নিয়ে নতুন করে সংকট সামনে এসেছে, চীন ও আমেরিকার মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। এখন একদিকে ইউরোপ-ন্যাটো অন্যদিকে রাশান ফেডারেশন ও তার মিত্ররা, আবার চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশেও অস্থিরতা ছড়িয়েছে।  এমন একটি বাস্তবতায় আস্থার ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায়  সফল হতে হলে, আস্থার সংকট দূর করতে হবে আগে। ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে কপ-২৭ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।

কপের বিগত ৩০ বছরের অর্জন প্রসঙ্গে বলেন, যাদের তহবিল যোগান দেওয়ার সামর্থ ও দায়িত্ব রয়েছে, তারা আন্তরিক না হলে খুব একটা সফল হওয়া কঠিন। বিগত সময়ের প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে, তারা যা বলছে তা পালন করছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে রয়েছে ১৭টি দেশ। আমেরিকা সেখানে ফসিল ফুয়েলে বিনিয়োগ করেছে ৯ বিলিয়ন ডলার, একই সময়ে নবায়নযোগ্য খাতে মাত্র ৬৮২ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বৈপরীত্যটা খুবই হতাশার। একই আচরণ করছে ইইউ। তারা এক ধরনের লিপ সার্ভিস দিচ্ছে, অ্যাকটিভ প্রমাণের জন্য নানা রকম কাজ করছে। তবে তা ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। জীবাশ্ব জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করার জন্য বলা হচ্ছে, কিন্তু তাদের ফসিল ফুয়েল ভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমিও মনে করি, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ইস্যুটি তারা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তারা আগে যে টাকা দিয়েছে, তা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে, তা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে উন্নত দেশের লোকজনের মধ্যে এক ধরনের ঢিলেমি রয়েছে। তাদের মধ্যে অল্পসংখ্যক মানুষ খুবই আন্তরিক হলেও বড় একটি অংশের মধ্যে অনীহা রয়েছে। তাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে নিজের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য। তারা স্বচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের সঙ্গে এভাবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাতে যারা বেশি ভূমিকা রাখতে সেই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বিষয়গুলো খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না।

তার মতে, আমরা রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিমাদের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার ভূমিকা পালনে আন্তরিক। তবে অর্থায়ন না হলে আমাদের একার পক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা কঠিন। সোলারের বিষয়েও টেকনোলজি ও অর্থায়ন সংকট রয়েছে। আবার যদি পরমাণু বিদ্যুতে যেতে হয় সেখানেও বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।  খাদ্য সংকটের মতো বিষয়গুলো আমাদের দরজায় কড়া নাড়তে থাকে, তখন অগ্রাধিকার পরিবর্তন করতে বাধ্য হই।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে সর্বোচ্চ সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন জনকেরি। তিনিও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে। যুদ্ধকে সামনে এনে হিউম্যান ও ক্লাইমেটের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 3 =