জার্মান কিংবদন্তি বেকেনবাওয়ার আর নেই

চলে গেলেন জার্মান কিংবদন্তি ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর বয়স। কোচ ও ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ জেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। প্রথম হিসেবে এই কীর্তি গড়া ব্রাজিলিয়ান মারিও জাগালো পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন কিছুদিন আগেই। বেঁচে আছেন কেবল ফ্রান্সের দিদিয়ের দেশম।

বেশ অনেকদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন জার্মানির ‘দের কাইজার’। আজ তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এলে ফুটবল বিশ্বে। এক  বিবৃতিতে বেকেনবাওয়ারের পরিবার লেখে, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা ঘোষণা করছি যে, আমার স্বামী ও আমাদের বাবা ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার রোববার ঘুমের মধ্যে শান্তিতে মারা গেছেন। আমরা চাই যে, আমাদের যেন কোনো প্রশ্নের মাধ্যমে বিরক্ত না করা হয় এবং  নীরবে যেন শোক পালন করতে পারি। ‘

জার্মান ফুটবলের অন্যতম আইকন বেকেনবাওয়ার। কেউ কেউ তাকে দেশটির ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবেও মনে করেন। কী নেই তার ঝুলিতে! সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার তো বটেই অন্যতম সেরা কোচও তিনি।  অধিনায়ক হিসেবে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে জার্মানিকে (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) চ্যাম্পিয়ন করার পর কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতেন বেকেনবাওয়ার। বিশ্বকাপ জয়ের আগে ১৯৭২ সালে জার্মানিকে করে তোলেন ইউরোর সেরা।  ক্লাব ফুটবলে বায়ার্ন মিউনিখ তার অধীনে জেতে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ। ৬ বার উঁচিয়ে ধরে বুন্দেসলিগার শিরোপা। বেকেনবাওয়ারের ব্যক্তিগত অর্জনও কম ছিল না। দুইবার জেতেন ব্যালন ডি অর। জার্মানির বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছেন চারবার। ডিফেন্ডার হিসেবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে জায়গা করে নেন বিশ্বকাপের স্বপ্নের একাদশে।

১৯৪৫ সালে মিউনিখে জন্ম হলেও বেকেনবাওয়ারের বেড়ে ওঠা গিনিজ শহরে। বোমার শব্দে তখন নিয়মিতই কেঁপে উঠত শহরের বিল্ডিংগুলো। সেখানেই ফুটবল পায়ে মেতে থাকতেন তিনি। শৈশবে স্ট্রাইকার, ক্যারিয়ারের শুরুতে মিডফিল্ডার হিসেবে খেললেও সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবেই বেশি পরিচিত এই কিংবদন্তি। বিশেষ করে লিবারো বা সুইপার পজিশনে। যেখানে থেকে রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণেও উঠে যেতেন তিনি। আধুনিক যুগে তা নিয়মিতই দেখা যায়। অনেকের মতে, এই পজিশনের জন্মদাতা বেকেনবাওয়ার। সেই দায়িত্বে বেকেনবাওয়ার এতোটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন যে  জার্মানরা তাকে ভালোবেসে দের কাইজার (সম্রাট) ডাকতো। উজ্জ্বল ক্যারিয়ারে জার্মানির হয়ে ১০৩ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৪ গোল। প্রায় ২০ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে ১৩ বছরই কাটান বায়ার্ন মিউনিখে। যার ইতি টানেন নিউইয়র্ক কসমসে।

তাকে হারানোর ধাক্কাটা যে কত বিশাল তা বোঝা যায় শিষ্য লোথার ম্যাথাউসের কথাতেই, ‘যদিও আমি জানতাম ফ্রাঞ্জ খুব একটা সুস্থ ছিলেন না, কিন্তু তাকে হারানোর ধাক্কাটা বেশ গভীর। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে তিনি অন্যতম সেরা, মাঠের বাইরেও…। শুধু ফুটবল নয়, ফুটবলের বাইরেও ফ্রাঞ্জ অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। সম্মান কুড়িয়েছেন বিশ্বব্যাপী। যারা তাকে চেনে তারা সবাই জানে ফ্রাঞ্জ মানুষ হিসেবে কতটা মহান ও উদার  ছিলেন। একজন ভালো বন্ধু আমাদের ছেড়ে চলে গেল। আমি তাকে মিস করব, আমরা সবাই তাকে মিস করব। ‘

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve − one =