টি২০ বিশ্বকাপ ২০২২: ইতিহাসের ধারা পাল্টে দিয়ে শিরোপা জিতলো ইংল্যান্ড

সালেক সুফী

অনেকের ধারণা ছিল ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হবে। ৩০ বছর পর ১৯৯২ ফিরে আসবে এমসিজিতে ২০২২ এর শেষ লগ্নে। ইমরান খানের কর্নার্ড টাইগার্স এই এমসিজিতে ১৯৯২ ইংল্যান্ডকে পরাজিত করেই জিতেছিল আইসিসি বিশ্বকাপ। এবারের পাকিস্তানের টি২০ ফাইনালে উত্তরণ হয়েছিল অনেকটা একই ধারায়।  ফাইনালের প্রতিপক্ষও ছিল পরিচিত সেই ইংল্যান্ড। ফাইনালে প্রথম ব্যাটিং করলো পাকিস্তান। তবে শেষটা পাকিস্তানের জয়ে শেষ হলো না।

গ্রিপিপিং, টার্নিং, ডুবলে পেসড উইকেটে ১৩৭/৮ মামুলি সংগ্রহ করেছিল পাকিস্তান ইংল্যান্ডের স্যাম কুরান (৩/১২), ক্রিস জর্দান (২/২২) এবং আদেল রাশিদের  (২/৩২) তুখোড় বোলিং মোকাবিলায়। সামান্য পুঁজি রক্ষায় মরণপণ যুদ্ধ করেছে পাকিস্তান।  হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহীন আফ্রিদি দুরন্ত গতিতে বল করে ইংলিশ লায়নদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। ভাগ্য পাকিস্তানকে সহায়তা দিল  না। নাসিম শাহ বেশ কয়েকবার ব্যাটসম্যানদের পরাজিত করেও উইকেটের দেখা পায় নি। খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তুরুপের তাস শাহীন আফ্রিদি আহত হয়ে ১১টি বল করতে পারেনি। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা চৌকষ খেলোয়াড় বেন স্টোকস ঠান্ডা মাথায় ব্যাটিং করে অপরাজিত ৫২ রান করায় ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে শিরোপা জয় করে ইংল্যান্ড।

কাল মেলবোর্নের আকাশে মেঘ ছিল।  পূর্বাভাস ছিল কয়েক পশলা বৃষ্টি খেলায় বিঘ্ন ঘটাবে। হয়নি সেটা। অনেকেই ভেবেছিলো ভারত ফাইনালে না থাকায় দর্শক বেশি হবে না। কিন্তু ৮০,৫০০ দর্শক কাল এমসিজিকে রাঙিয়ে দিয়েছিলো। দুটি সমশক্তির দলের তীব্র লড়াই ক্রিকেট বিশ্ব উপভোগ করেছে। পাকিস্তানের রান আরো ২৫ বেশি হলে খেলাটি আরো উপভোগ্য হতো সন্দেহ নেই। তবে স্বল্প পুঁজি নিয়েও লড়াই করেছে পাকিস্তান সাধুবাদ ওদের দিতেই হয়।

এটি ছিল ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টি২০ শিরোপা জয়। ২০১৯ লর্ডসে নিউ জিল্যান্ডকে পরাজিত করে আইসিসি বিশ্বকাপ জিতেছিল ওরা। ইতিহাসে থ্রি লায়ন্স প্রথম দল যারা একসঙ্গে সাদা বলের দুটি সংস্করণের শিরোপাধারী  হলো। ২০১৫ সালে এডিলেড ওভালে বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপের ম্যাচ হেরেছে ইংল্যান্ড। সেই তারাই ২০১৫ থেকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সব ফরম্যাটে ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করে এখন শীর্ষে। আর তলানিতে তলিয়ে আছে বাংলাদেশ সঠিক পরিকল্পনা আর খেলোয়াড়দের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পরিচর্যার অভাবে।

বিশ্বকাপ আসে বিশ্বকাপ যায়। বাংলাদেশের শিক্ষা সফরে শিক্ষার পালা শেষ হয় না। সার্বিক বিচারে এবারের বিশ্বকাপ সফল বলা যায়। কিছু ম্যাচে কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়েছে, কিছু ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত বা বিঘ্নিত হয়েছে। ছোট দল বড় দলের পার্থক্য ঘুচে গাছে। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর ক্রিকেট অনেক উন্নত হয়েছে। ক্রিকেটকে সর্বজনীন করার আইসিসির উদ্যোগ সফলতার পথে। অপেক্ষা এখন ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৩ আইসিসি বিশ্বকাপ। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারত যাচ্ছে নিউ জিল্যান্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলবে অস্ট্রেলিয়ায়।  পাকিস্তান যাচ্ছে ইংল্যান্ড, ভারত যাবে বাংলাদেশে। আবার কবে অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপের আসর বসবে সেই আশায় অপেক্ষায় থাকবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen + 20 =