টি২০ বিশ্বকাপ ২০২২: ফিরে দেখা ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট মহারণ

সালেক সুফী: এ যেন শেষ হয়েও হইলো না শেষ উপাখ্যান।  অস্ট্রেলিয়ার আইকনিক ক্রিকেট ভেন্যু মেলবোর্নের এমসিজিতে কাল হয়ে গেলো স্মরণকালের অন্যতম তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট মহাযুদ্ধ। প্রায় ১ লক্ষ বিমুগ্ধ ক্রিকেট পূজারীর মুহূর্মুহূ হর্ষধ্বনির মাঝে ভারত ম্যাচের শেষ বলে নাটকীয় ভাবে ম্যাচ জয় কয়ে ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে চির প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো। সবাই জানে এই জয়ে অন্যতম মূল ভূমিকা রেখেছে সমসাময়িক বিশ্বক্রিকেটের সব ফরম্যাটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। বছর খানেক আগেও সব ফরম্যাটে ফর্ম হারানো কোহলির ক্রিকেট জীবন অনিশ্চয়তার মুখে ছিল। শুরু থেকে শেষ অবধি উত্তেজনায় টইটম্বুর খেলাটি নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। খেলার বিস্তারিত বর্ণনায় যাবো না। শুধু সারসংক্ষেপ আলোকপাত করে ভিন্ন প্রসঙ্গে যাচ্ছি।

কাল লা নিনার প্রভাবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে খেলা বিঘ্নিত হবার পূর্বাভাস থাকলেও হয়নি। আর তাই মাঠে সমবেত ৯২,০০০ হাজার বিমুগ্ধ ক্রিকেট পূজারীর পাশাপাশি বিশ্বজোড়া বিলিয়ন ক্রিকেট আমুদে টি২০ ইতিহাসের সেরা খেলা উপভোগ করেছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে সবুজ ঘাসের গালিচায় পেসি বাউন্সি উইকেটে প্রথমে কোণঠাসা পাকিস্তান ১৫৯/৮ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ স্কোর গড়েছিল। পাকিস্তানের তুখোড় পেস আক্রমণ সহসাই ভারতকে (৩১/৪ ) সংকুচিত করেছিল। সেই অবস্থান থেকে ধৈর্য, সাহস, পরিমিতিবোধ নিয়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলো বিরাট কোহলি, সঙ্গী ছিল উদীয়মান তরুণ হার্দিক পান্ডিয়া।  শেষ ৮ বলে প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। সারাক্ষণ দোলক দোলায় দোলা খেলার  ভাগ্য তখন ঝুলে আছে পাকিস্তানের দিকে। বল করছিলো কালকের ম্যাচের অন্যতম সেরা বলার হারিস রউফ। ওভারের ৫ম আর শেষ বল দুটি হারিস দিয়েছিলো স্লোয়ার ডেলিভারি। দুটো বলে অসামান্য দক্ষতায় দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে মোমেন্টাম পাল্টে দিলো কোহলি।

শুরু হলো শেষ ওভারের নাটকীয়তা।  বাবর আযমের পরিকল্পনায় বামহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকে সংরক্ষিত রাখায় আমি ভুল দেখি না। তখনো প্রয়োজন ছিল ৬ বলে ১৬ রান।  প্রথম বলেই নাওয়াজ ফেরালেন পান্ডিয়াকে। ৫ বলে ১৬। কার্তিক এসে দুই রান নিলো। তৃতীয় বলে কোহলি আসলো। চাপের মুখে নেওয়াজের বলটি হলো নো বল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বিতর্ক কেন সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। কোহলি তথাকথিত নো বলে হাঁকালেন ছক্কা।  সমীকরণ পাল্টে গেলো। নেওয়াজ আবার ওয়াইড ছুড়লেন। পরের ফ্রি হিট কোহলির উইকেট ভেঙে দিয়ে বাউন্ডারির দিকে গেলে আসলো ৩ রান। পরের বলটিতে আউট কার্তিক। উইকেটে আসলো অশ্বিন।  আবারো ওয়াইড বল।  স্কোর সমান হয়ে গেলো। শেষ বলে ম্যাচ জিতে নিলো ভারত। বলা যায় পাকিস্তানের মুঠি গলে ম্যাচ গেলো বেরিয়ে। ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো আকর্ষণীয় একটি টি২০ ম্যাচ। সম্ভবত এযাবৎ খেলা অন্যতম সেরা ম্যাচ। বিরাট কোহলির অসামান্য অবদানে জয় পেলো ভারত। কোহলি নিজেও বলেছে ভারতের হয়ে এটি ওর সেরা ইনিংস।

খেলার কথা পাশে রেখে আসি বিতর্কিত প্রসঙ্গ নিয়ে। নেওয়াজের যে বলটি খেলার মোড় ঘুরিয়েছে সেটি কি সত্যিই কোহলির কোমরের উপরে ছিল। বার বার রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে কোহলি পপিং ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। বলটি ওর ব্যাটে পৌঁছানোর মুহূর্তে ডিপ করছিলো। এই ধরনের ক্ষেত্রে মূল আম্পায়ার বা লেগ আম্পায়ার তাৎক্ষণিক নো বল সিগন্যাল দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে আম্পায়ার ইরাসমাস সিদ্ধান্ত দিলেন কিছু পরে কোহলি আবেদন করে। ভালো হতো সিদ্ধান্তটি থার্ড আম্পায়ারের কাছে রেফার করা। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণও এই কারণে যে ওই সিদ্ধান্তটি ম্যাচের ফলাফলে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ফ্রি হিট থেকে কোহলির উইকেটে লাগা বল থেকে ৩ বাই রান ক্রিকেটের নতুন নিয়ম অনুযায়ী ঠিক আছে। জয়টি অবশ্যই মৃত্যুকূপের গুহায় থাকা গ্রুপে ভারতকে এগিয়ে দিলো। খেলাটির গুণগত মান নিয়ে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। তবে নেওয়াজের নো বল নিয়ে আলোচনা হতেই থাকবে।

আজ সকালে মেলবোর্ন ফিরে যাওয়া ছোট ছেলে অভ্রকে আমরা ড্রাইভ করে গোল্ড কোস্ট বিমানবন্দরে নেওয়ার পথে র্রেডিওতে  ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, মিসবাহুল হক আর শোয়েব মালিকের ম্যাচ রিভিউ শুনছিলাম। বাবর আজম, রিজওয়ানের পতনের পর শান মাসুদ আর ইফতিখারের বদান্যতায় পাকিস্তান  দলের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রশংসার পাশাপাশি ওরা সবাই কোহলি, পান্ডিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। পাকিস্তান দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আত্মাহুতি এবং পেসি উইকেটে চতুর্থ পিয়াসের না খেলানোর ভুলের কথাও  বলেছে ওরা।

শেষ কথা হলো পাক-ভারত উপমহাদেশের তুখোড় দুই দলের মুখোমুখি লড়াই ক্রিকেট পূজারীদের মুগ্ধ করেছে। ক্রিকেট জিতেছে। এমন ম্যাচ ক্রিকেটকে জীবনী শক্তি যোগায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − five =