টি২০ বিশ্বকাপ ২০২২: ভারত ইংল্যান্ড সমানে সমান

সালেক সুফী

সবাই জানে অনেক নাটকীয়তার পর টি২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমি ফাইনালে উন্নীত হয়েছে চারটি ফেভারিট দল ভারত, পাকিস্তান, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড। অনেকে হয়তো শিরোপাধারী স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এবং অপর শক্তিধর দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখানে দেখতে চেয়েছিলেন। তবে এবারে বড় দল ছোট দল ব্যাবধান ঘুচে যাওয়ায় বেশ কিছু অঘটন ঘটেছে। বৃষ্টি আইন বেশ কয়েকটি ম্যাচে প্রভাব ফেলে সমীকরণ পাল্টে গাছে। সুপার ১২ গ্রুপ পর্যায়ের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে সেমিফাইনালিস্টস নির্ধারণে।

আজ প্রথম সেমি ফাইনালে এসসিজিতে খেলবে মোক্ষম সময়ে মোমেন্টাম ফিরে পাওয়া দুরন্ত পাকিস্তান আর সব টুর্নামেন্টে ভালো খেলা কিউই পাখির দেশ নিউ জিল্যান্ড। অপর সেমি ফাইনাল হবে এডিলেড ওভালে কাল। প্রতিদ্বন্দ্বী আইসিসির বিত্তশালী দল শক্তিধর ভারত আর ক্রিকেট জননী ইংল্যান্ড।

দুই সেমিফাইনালের বিজয়ীরা আইকনিক এমসিজিতে রোববার খেলবে ফাইনাল। এরই মধ্যে অনেকেই ভারত ও পাকিস্তানের আরো একটি দ্বৈরথের পূর্বাভাস দিয়েছেন। আইসিসিও হয়তো মনে প্রাণে চাচ্ছে আরো একটি ব্লকবাস্টার ম্যাচ।

পাকিস্তান-নিউ জিল্যান্ড খেলা নিয়ে লিখেছি। ইতিহাস, খেলোয়াড়ের তুলনামূলক শক্তিমত্তা, পারস্পরিক মোকাবিলার পরিসংখ্যান নিয়ে পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখছেন বেশিরভাগ ক্রিকেট এনালিস্ট।  বাবর আযমের এই দলটিও কিন্তু খাদের কিনারা থেকে নাটকীয় ভাবে ফিরে এসেছে।

অন্যদিকে নিউ জিল্যান্ড কিন্তু বেশ কিছু বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলছে। তারা কিন্তু গত আসরের রানার্স আপ দল।  এই ম্যাচ নিয়ে আর বিস্তারিত আলোচনায় যাবো না।  নিউ সাউথ ওলসের রাজধানী সিডনির ঐতিহাসিক এসসিজিতে আজ মহারণ উপভোগ্য হবে বলে মনে করি। আমার বাজির ঘোড়া থাকবে পাকিস্তানের উপর, যদিও আমি ব্ল্যাক ক্যাপ পরিবারেরও সদস্য।

আজ আলোচনা করবো ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেমিফাইনাল নিয়ে। দুটি দল কিন্তু আইসিসির মোড়ল।  আম্পায়ারিং সিদ্ধান্তের ভুল ভ্রান্তি  কোনো একটি বিশেষ  দলের অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত। দুটি দলেই আছে তুখোড় টি২০ খেলোয়াড়ের সমাহার। ইংল্যান্ড দলের অধিকাংশ সদস্য নিয়মিত ভারতীয় টি২০ ফ্রাঞ্চাইজ আইপিএল নিয়মিত খেলায় একে ওপরের সামর্থ নিয়ে বিশেষ ভাবে অবহিত। খেলোয়াড়দের তুলনামূলক বিবেচনায় বলা যায় সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে।

যদিও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে খেলা হলেও ভারত দলে অগণিত সমর্থক জমা হয়ে খেলার মাঠ ভারতের নিজস্ব অঙ্গন করে ফেলে তা সত্ত্বেও বার্মি আর্মি কিন্তু কম সক্রিয় নয়।

এবারের টুর্নামেন্টের কথায় যদি আসি ভারতকে কিন্তু অজেয় মনে হচ্ছে না। গ্রুপ পর্যায়ে কিছুটা ৫০:৫০ আম্পয়ারিং সিদ্ধান্ত অনুকূলে থাকায় জয় পেয়েছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।  হেরে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে। একমাত্র দাপুটে জয় পেয়েছে শেষ খেলায় জিম্বাবুয়ের সাথে।

অপর দিকে ইংল্যান্ডকে ভালো খেলে হারিয়েছে প্রতিবেশী আয়ারল্যান্ড। ওরা দারুন জয় পেয়েছে নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়র সঙ্গে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত খেলাটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হলে  ফলাফল হয়তো সেমি ফাইনালের ভাগ্য পাল্টে দিতেও পারতো। কিন্তু সাধারণ ভাবে ইংল্যান্ডের বর্তমান দলটিকে অনেক ব্যালান্সড মনে হয়েছে।

যদি ওপেনারদের তুলনা করি আমি জোশ বাটলার-আলেক্স হেলস জুটিকে রোহিত-রাহুল থেকে এগিয়ে রাখবো। রোহিতকে নড়বড়ে মনে হচ্ছে। রাহুল রান পেলেও স্বচ্ছন্দে খেলছে বলবো না। কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিতে পারে একেই ক্রিকেট বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি।  দীর্ঘদিন পর নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়া বিরাট একাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রায় হারতে থাকা ম্যাচ জয় করেছে। খেলেছে আরো দুটি ভালো ইনিংস। ডেভিড মালান বা অন্য কোনো ইংরেজ  ব্যাটসম্যান বিরাটের সঙ্গে তুলনীয় নয়. কালকের সেমি ফাইনাল বিরাট নিজের ছন্দে খেললে ভারত নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে।

বিরাট-উড, বিরাট-কুরান যুদ্ধ দেখার মতো হবে। তরুণ সূর্য  কুমার যাদবকে বলা হচ্ছে ভারতের এ বি দি ভিলিয়ার্স  (৩৬০ ডিগ্রি )। ওর সাথে অবশ্য তুলনায় পিছিয়ে থাকবে না ইংল্যান্ডের তুখোড় অল রাউন্ডার বেন স্টোকস।  ধুম ধারাক্কা ব্যাটিং বলেন, কার্যকরী আঁটোসাঁটো বা আক্রমণাত্মক বোলিং বা হরিণ ক্ষিপ্রতায় ফিডিংয়ে স্টোকস কিন্তু এগিয়ে থাকবে।

রাহুল, কোহলি আর যাদব ছাড়া ভারতের ব্যাটিং কিন্তু টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত আহামরি কিছু করেনি। হার্দিক পান্ডিয়া, কার্তিক কিন্তু এখনো কিছু করেনি। এখানেই কিন্তু ইংল্যান্ড এগিয়ে।  ওদের ডেভিড মালান, মঈন আলী, লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কুরান কিন্তু সবাই চৌকষ খেলোয়াড়। এমনকি প্রয়োজনে আদিল রাশিদ আর ক্রিস ওয়াক্স কিন্তু ব্যাটিং করতে পারে। ইংল্যান্ডের যেমন ১-১০ টি২০ ব্যাটিং স্তম্ভ ভারতের ব্যাটিং কিন্তু দুই তিন জনের উপর নির্ভরশীল।

জাসপ্রিত ভুমরা না থাকায় অবশ্যই ভারতের বোলিং শক্তি খর্ব অনেকটাই। তবুও নবীন আর্শদীপ অনেক প্রতিশ্রুতিশীল। ভুমরা-অর্শদীপ-সামি সমন্বয়ে গড়া ভারত পেস আক্রমনণর সঙ্গে আমি উড-ওকস -স্টোকস-কুরানদের তুলনায় সমতা খুঁজে পাই। এডিলেড ওভালে মঈন আলী-আদিল রাশিদ ভারতের রবি  অশ্বিন-আকসার প্যাটেল থেকে কম সফল হবে হবে না। মোট কথা খেলোয়াড় তুলনায় ভারত ইংল্যান্ড সেয়ানে সাইন বলবো। বরং ইংল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে।

এডিলেড ওভাল সোজা বাউন্ডারি সীমানা প্রসস্থ কিন্তু আড়াআড়ি অপেক্ষাকৃত ছোট। টস জয়ী দল ব্যাটিং করে বড় টার্গেট স্থাপন করতে চাইবে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে টস জয়ী দল কিন্তু নিয়মিত হেরেছে।

অনেকেই চাইছে ভারত-পাকিস্তান নিজেদের খেলায় জিতে এমসিজিতে আবারো মুখোমুখি হোক। তাহলে একলক্ষ বর্ণাঢ্য দর্শক এমসিজি মাতাবে।  কয়েক বিলিয়ন ক্রিকেট পূজারী বিশ্বজুড়ে নানাভাবে ক্রিকেট উপভোগ করবে। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে খেলা হবে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান। ১৯৯২ ইমরানের কর্নার্ড টাইগার্সদের মতো নতুন ইতিহাস গর্বে বাবর আযমের পাকিস্তান যাদের এতদূর আসার কোথায় ছিল না একপর্যায়ে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × three =