অনেক আশা নিরাশা, দ্বিধা দ্বন্দ্বের দোলক দোলায় দোদুল্যমান সৃষ্টি সুখের উল্লাস উপহার দেয়া প্রথম বারের মত ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তি সচিন রমেশ টেন্ডুলকার এবং জেমস মাইকেল এন্ডারসনের নামে চালু হওয়া টেস্ট সিরিজ ৩-১ জিতে নেয়ার দ্বার প্রান্তে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। কাল লন্ডনের সারে কাউন্টির ওভাল ক্রিকেট মাঠে ৫ম টেস্ট ইংল্যান্ড বৃষ্টি এবং আলোক সল্পতার কারণে খেলা স্থগিত হওয়ার সময় ৩৭৪ রানে জয়ের লক্ষ্যে ৩৩৯/৬ সুবিধা জনক অবস্থানে ছিল। কাল খেলা শুরু হলে ৪ উইকেট হাতে রাখা ইংল্যান্ডের টেস্ট জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৫ রান। টেস্ট ক্রিকেটে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা বিচক্ষণতা নয়। তবু পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে আঁচ করা সহজ টেস্ট জয় এবং সিরিজ ৩-১ জয় করে একই সিরিজে দুই বার ৩০০র অধিক টার্গেট তাড়া করে টেস্ট জয়ের বিশ্ব রেকর্ডের দাঁড় প্রান্তে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ২৪৭ রান করে ২৩ রান এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৯৬ রান করে ভারত ৩৭৪ রান করে ম্যাচ জয়ের কঠিন টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিলো। ইংল্যান্ড অনেকটা নিজেদের বাজবল কৌশলে ব্যাটিং করে হ্যারি ব্রুক ১১১ এবং জো রুটের অনবদ্ধ ১০৫। রানের সুবাদে বৃষ্টি বিঘ্নিত চতুর্থ দিন শেষে পৌঁছেছে ৩৩৯/৬। জয়ের জন্য প্রয়োজন আরো ৩৫ রান। হাতে আছে ৪ উইকেট। ইংল্যান্ড হয়ত জিতে যাবে টেস্ট, জিতবে সিরিজ ৩-১ ব্যাবধানে। কিন্তু আজ থেকে ২০-৩০ বছর পরে কোনো ক্রিকেট অনুরাগী বিশদ বর্ণনা না পড়লে হয়ত ভাববে সিরিজটা হয়তো একপেশে হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সিরিজ জুড়ে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হয়েছে। ব্যাটিং বোলিং গভীরতা বেশি থাকায় এবং কৌশলী ক্রিকেট খেলেই সিরিজ জয়ের পথে রয়েছে ইংল্যান্ড। ভারত কিন্তু ৫ম টেস্টের শেষ ইনিংসে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে চলেছে ভারত। ২-১ পিছিয়ে থাকা ভারত দারুন ব্যাটিং করে চতুর্থ টেস্ট পরাজয় এড়িয়েছে।
ইংল্যান্ড চতুর্থ দিন সকাল শুরু করেছিল ৫০/১। উইকেটে ছিল বেন ডাকেট আর ওলি পপ। ভারতের প্রয়োজন ৯ উইকেট ইংল্যান্ডকে নতুন ইতিহাস গড়তে হলে করতে হবে ৩২৪ রান। প্রসীদ কৃষ্ণা আর মোহাম্মদ সিরাজ বেন ডাকেট (৫৪) আর ওলি পপ (২৭) উইকেট তুলে ইংল্যান্ড স্কোর ৩/১০৬ হওয়ায় আশা জেগেছিলো ভারত শিবিরে। ২১ বলে ১৯ রানে থাকা প্রসীদ কৃষ্ণার বলে মোহাম্মদ সিরাজ হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ বাউন্ডারি লাইনে ধরেও শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেনি, এর পর দ্রুপদী ছন্দে ব্যাটিং করে ব্রুক ১৪ চার আর ২ ছয়ে সাজিয়ে ৯৮ বলে ১১১ রান করে ভারতের স্বপ্ন চূর্ণ করে। ইংল্যান্ড রান মেশিন জো রুটের যোগাযোগে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৯৫ রান সংগ্রহীত হলে টেস্ট থেকে ছিটকে পরে ভারত। বূট তার ৩৯ম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেয়। সামনে শুধু রিকি পন্টিং (৪১), জ্যাক কালিস (৪৫) আর সচিন টেন্ডুলকার ( ৫০)। ৪/৩০১ রান তুলে নিশ্চিত জয়ের পথে ছিল ইংল্যান্ড। শেষ দিকে প্রসীদ কৃষ্ণা জ্যাকব বেথেল এবং জো রুটের উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে প্রাণের সঞ্চার করেছিল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গাছে। ইংল্যান্ড যখন জয়ের লক্ষ্য থেকে ৩৫ রান দূরে আকাশ ভেঙে নামলো বৃষ্টি। বৃষ্টি থামলেও আলোক স্বল্পতার জন্য খেলা গড়ালো শেষ দিনে। নাটকীয় কিছু না ঘটলে কাল হয়তো টেস্ট এবং সিরিজ জিতে নিবে ইংল্যান্ড। দুইজন নতুন ব্যাটসম্যান উইকেটে। নতুন বল ৩.৪ ওভার পরেই নেয়া যাবে। ভারত সহজে ছেড়ে দিবে না। পরিশ্রান্ত বোলাররা বিশ্রাম পাবে।
সিরিজ জিতলে ২০২৫-২০২৭ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পর্বে শুভ সূচনা হবে ইংল্যান্ডের। আগেই লিখেছি সিরিজের ফলাফল কিন্তু মাঠের হাড্ডা হাড্ডি লড়াই সঠিকভাবে প্রতিফলন করে না। ব্যাট বলের শেয়ানে শেয়ানে লড়াই সিরিজ জুড়ে ছিল অনাবিল আকর্ষণের।
ফিরে তাকালে দেখা যাবে সিরিজে অনেক নতুন মাইল ফলক স্থাপিত হয়েছে। রোহিত শর্মা আর বিরাট কোলির মত দুই কিংবদন্তির অবসরে ভারত দলে কিন্তু ব্যাটিং শক্তি খুব একটা খর্ব হয়নি। সিরিজ জুড়ে নতুন অধিনায়ক শুভমান গিল চার চারটি সেঞ্চুরী সহ ৭৫৪ রান করেছে। একমাত্র সুনীল গাভাস্কার ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক সিরিজে ৭৭৪ রান করে গিল থেকে এগিয়ে থাকলো।
সিরিজ জুড়েই কে এল রাহুল ছিল ধারাবাহিক। যশোভি জয়সোয়াল শেষ ইনিংসে শত রান করেছে। লেট্ মিডল অর্ডারে রাভিন্দ্রা জাদেজা আর ওয়াশিংটন সুন্দর ছিল আস্থার প্রতীক। তবে তুখোড় ব্যাটসম্যান ঋষভ প্যান্ট আহত হয়ে ছিটকে পড়লে ভারতের ব্যাটিং শক্তি কিছুটা খর্ব হয়। ভারতের বোলিংয়ের মূল শক্তি জাসপ্রিত বুমরাকে বিশ্রাম দেয়া প্রয়োজন পড়ায় বোলিং শক্তি খর্ব হয়। তবে সিরাজ,আকাশ দীপ, প্রসীদ কৃষ্ণা মন্দ করেনি। ভারত কেন অন্যতম সেরা বোলার লেগ স্পিনার কুলদীপ যাদবকে একটি টেস্টেও একাদশে সুযোগ দিলো না প্রশ্ন উঠছে, উঠবে।
ইংল্যান্ড ব্যাটিং স্তম্ভ ছিল জো বূট। সিরিজ শেষে ৩১ সেঞ্চুরি করা বূট এখন টেন্ডুলকার (৫১) , ক্যালিস (৪৫), পন্টিংয়ের (৪১) এলিট ক্লাবে। ১৫৮ টেস্টে ১৩৫ ১৪ রান করে বূট এখন ২০০ টেস্ট খেলে ১৫,৯২১ রান করা টেস্টে রান সংগ্রহের তালিকায় টেন্ডুলকারের পরে দ্বিতীয় স্থানে। এই সিরিজে ইংল্যান্ড অধিনায়ক তুখোড় চৌকষ ক্রিকেটার বেন স্টোকস ব্যাটিং বোলিংয়ে ছিলো দারুন ছন্দে, বেন ডাকেট, হারি ব্ৰুক নিয়মিত অবদান রেখেছে। কিন্তু আসন্ন এশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডকে সাফল্য পেতে হলে বোলিং অপসন নিয়ে ভাবতে হবে।
ভারত প্রথম ইনিংস ২২৪ অল আউট (করুন নায়ার ৫৭, সাই সুদর্শন ৩৮, ওয়াশিংটন সুন্দর ২৬, গাস আটকিন্সন ৫/৩৩, জস টঙ্গা ৩/৫৭)
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ৩৯৬ অল আউট (যশোভি জয়সোয়াল ১১৮, আকাশ দীপ ৬৬, রাভিন্দ্রা জাদেজা ৫৩, ওয়াশিংটন সুন্দর ৫৩, ধ্রুব জুয়েল ৩৪, গাস আটকিন্সন ৩/ ১২৭, জস টঙ্গা ৫/১২৫, জেমি ওভারতন ২/ ৯৮)
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৪৭ অল আউট (জ্যাক ক্রলি ৬৪, হ্যারি ব্ৰুক ৫৩, বেন ডাকেট ৪৩, জো বূট ২৯, প্রসিদ কৃষ্ণা ৪/৬২, মোহাম্মদ সিরাজ ৪/৮৬)
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ৩৩৯/৬ ( জো বূট ১০৫, হ্যারি ব্রুক ১১১, বেন ডাকেট ৫৪, প্রসিড কৃষ্ণা ৩/১০৯ মোহাম্মদ সিরাজ ২/৯৫, আকাশ দীপ। ১/৮৫)
ইংল্যান্ড ৩৫ রানে পিছিয়ে আছে।