সালেক সুফী
আজ সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-নিউ জিলান্ড টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনশেষে ৮৫ ওভার খেলে সংগ্রহ করেছে ৩১০ রান। দুই দলের শক্তি সামর্থ এবং অভিজ্ঞতার ব্যাপক বাবধানের নিরিখে সংগ্রহ মামুলী না হলেও বাংলাদেশ স্লো লো, ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে প্রথম ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৩/১৮০ অবস্থান থেকে মুড়মুড়িয়ে ঝরে পড়ায় আবারো প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানীয় টেস্ট দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার যোগ্যতা অর্জন করেনি।
একমাত্র ১৬৬ বল খেলে টেস্ট মেজাজে ৮৬ রান করেছে মাহমুদ হাসান জয়, অধিনায়ক নাজমুল শান্ত এবং প্রাক্তন অধিনায়ক মোমিনুল হক দুজনই উইকেটে স্থিতু হয়ে ৩৭ রান করে নিজেদের বিসর্জন দিয়েছে। বাকিদের কথা নাই বা বললাম। অস্থির চঞ্চল টি২০ মেজাজে খেলা দেখে মনেই হয়নি ফর্মাটটি টেস্ট ক্রিকেট। উইকেটে টার্ন এবং অসম বাউন্স আছে। জানিনা এই উইকেটে বাংলাদেশ বোলাররা তুখোড় ব্ল্যাক ক্যাপস ব্যাটসম্যানদের ইনিংস সাধ্যের সীমানায় বেঁধে রাখতে পারবে কি না।
নিউ জিল্যান্ডের নিশ্চিত লক্ষ্য থাকবে প্রথম ইনিংসে বড়সড় লিড নেওয়া। ম্যাচে বাংলাদেশের টিকে থাকা আর না থাকা এখন একান্তই তাইজুল ইসলাম, মেহেদী মিরাজ এবং নাঈম হাসানের উপর নির্ভর করছে। উইকেটের টার্ন এবং অসম বাউন্সের সাহায্য নিয়ে ওরা যদি ব্ল্যাক ক্যাপসদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাহলেই বাংলাদেশ ম্যাচে টিকে থাকবে।
শুনেছিলাম সবুজ ঘাস রেখে স্পোর্টিং উইকেট বানানো হবে। কিন্তু প্রথম দিন উইকেটে টার্ন ছিল বাড়ন্ত, কিছু বল পিচে পড়ে নিচু হয়ে আসছিল। তবে উইকেটে পেস ছিল না, বল সুইং করেনি, সিম মুভমেন্ট হয়নি। মাহমুদ হাসান জয় এবং জাকির হাসানের যোগাযোগে প্রথম উইকেট জুটিতে ৩৯ রান যোগ হবার পর আজাজ প্যাটেলের বলে সরাসরি বোল্ড হয় জাকির। অধিনায়ক নাজমুল শান্ত দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে জয়ের সঙ্গে ৫৩ রান যোগ করে অনিয়মিত স্পিনার গেলেন ফিলিপ্সের বলে নিজেকে বিসর্জন দেয়।
মোমিনুল এবং জয়ের জুটিতে যোগ হয় ৮৮ রান। একসময় মনে হচ্ছিলো টেস্ট মেজাজে এই জুটি দলের বড় স্কোরের ভিত্তি গড়ে দিবে। কিন্তু যেই না মোমিনুল (৩৭) এবং জয় কিছু পরেই ৮৬ রানে আউট হলো লেট্ মিডল অর্ডার ভুলে গেলো খেলাটা ৫ দিনের টেস্ট ক্রিকেট। মুশফিকুর রাহিম, মেহেদী মিরাজ ম্যাচ ফুটেজে নিজেদের আউট দেখে লজ্জা পাবে। সোহানকে মনে হয়েছে ম্যাচ জয়ের তাড়া আছে।
আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেট খেলার মেজাজ না গড়ে ওঠায় ভালো সূচনা করেও বড় ইনিংস গড়তে পারলো না বাংলাদেশ। অন্তত ৪০০ রান করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কাল দেখার অপেক্ষা শেষ উইকেট জুটি কতটা এগিয়ে নিতে পারে প্রথম ইনিংস। বলা যায় প্রথম দিন ম্যাচে এগিয়ে গাছে নিউ জিল্যান্ড। অনিয়মিত বোলার গেলেন ফিলিপ্স ৫৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়েছে। বাংলাদেশ একই উইকেটে দীর্ঘদেহী ডান হাতি পেস বোলার কাইল জেমাইসনকে স্বস্তিতে খেলতে পারেনি।
আগাম বলা বোকামি। তবুও বলছি ম্যাচটি চতুর্থ দিনে গড়ালে আমি বাংলাদেশকে বাহবা দিবো। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আনফিট এবং নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। লিটন দাস বেবি সিটিং করছে। মূল পেসার তাসকিন আনফিট হয়ে বিশ্রামে। নবীন স্বল্প অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কথা বিবেচনায় বলবো মন্দের ভালো খেলেছে বাংলাদেশ।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক