টেস্ট পরাজয় এবং সিরিজ ধবল ধোলাই এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র

সালেক সুফী

বাঁচা মরার টেস্ট পরাজয় তথা সিরিজ ধবল ধোলাই অনেকটাই অবধারিত হয়ে পড়েছিল শ্রীলংকার ৫৩১ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ১৭৮ রানে গুটিয়ে যাবার পর। ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকেও শ্রীলংকা বাংলাদেশকে বদান্যতা দেখিয়ে ফলোঅন আরোপ করেনি। বাংলাদেশ অবশ্য তৃতীয় দিন শেষ সেশনে দারুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এই টেস্টে অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ (৪/৬৫) এবং খালেদের (২/৩৪) দারুন বোলিং দিয়ে।

প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ এগিয়ে থাকার সুবাদে তৃতীয় দিন শেষে ১০২ রানে ৬ উইকেট হারানো সত্ত্বেও ৪৫৫ রানে এগিয়ে ছিল সফরকারী দল। আজ সকালেই ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ইনিংস ডিক্লেয়ার করলে খেলা হয়ত আজ শেষ হয়ে যেত। আজ ঘণ্টাখানেক ব্যাটিং করে ১৫৭/৭ ডিক্লেয়ার করে ইনিংস। ৫১১ রানের বিশাল টার্গেট। টেস্ট ইতিহাসে কেউ কখনো এতো বিশাল টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জয় করেনি।

বাংলাদেশ দিন শেষে ২৬৮/৭ করে টেস্ট পঞ্চম দিনে নিয়ে গেছে। মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৪ রানে এবং এই সিরিজ জুড়ে সাহসী ব্যাটিং করা তাইজুল ১০ রানে অপরাজিত আছে। শুধুমাত্র কাল সারাদিন কাল বৈশাখী ঝড় ম্যাচ ধুয়ে না নিলে বাংলাদেশের টেস্ট পরাজয় আর সিরিজ ধবল ধোলাই অবধারিত হয়ে আছে।

সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আতংকিত এবং আড়ষ্ট মনে হলেও আজ কিন্তু ৯ ব্যাটসম্যানের কেউ পত্রপাঠ বিদায় নেয়নি। এযাবৎ ব্যাটিং করা ৯ জন ব্যাটসম্যান সবাই দুই অংকে পৌঁছেছে। ৬ জন ১৫ থেকে ৫০ করলেও একমাত্র মোমিনুল ৫৬ বল খেলে ৮ চার এবং একটি ছয়ের সমন্বয়ে ৫০ রান করে। জয়, জাকির, শান্ত, সাকিব, লিটন সবাই উইকেটে স্থিতু হলেও ইনিংস দীর্ঘ করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে সিরিজে প্রথম দলীয় স্কোর ২০০ পেরিয়ে ২৬৮ পৌঁছালেও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে ২৪৩ রানে।

পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে শ্রীলংকান প্রথম ইনিংসে অন্তত ৫টি ক্যাচ ফস্কে না গেলে হয়তো ১০০ রান কম হত ওদের। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে আতংকিত হয়ে নাদানের মত উইকেট বিলিয়ে না দিলে টেস্টটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারতো। স্পোর্টিং উইকেটে টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করার মানসিকতা গড়ে উঠেইনি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের।

এই সিরিজে মোমিনুল হক ছাড়া টপ অর্ডারের কেউ ধারাবাহিকভাবে ভালো ব্যাটিং করেনি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে তাইজুল নৈশ প্রহরী হয়ে প্রতিরোধ গড়েছে। এখন দেখতে হবে মিরাজ -তাইজুল জুটি কাল পরাজয়ের ব্যাবধান কতটা কমাতে পারে।

আমি শ্রীলংকা দলের বোলিং দক্ষতাকেও বাহবা দেব। পেস বোলারস এবং স্পিনার্স উইকেট, পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযোগী বোলিং করেছে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা অনুধাবন করে সঠিক লাইন লেংথ বজায় রেখে সব সময় চাপে রেখেছে।

চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেটকেও আমি আদর্শ টেস্ট উইকেট মনে করি। এই ধরনের উইকেটে নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট আয়োজন করতে হবে। এই সিরিজে বাংলাদেশ বোলাররা অনেক উন্নত মানের বোলিং করেছে।

ফিল্ডিং ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। বাংলাদেশের প্রয়োজন উন্নতমানের স্লিপ ফিল্ডার্স প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরী করা। তাহলে মেধাবী বিকাশমান পেস বোলাররা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে দিবে।

পরিশেষে টেস্ট ম্যাচটি ৫ম দিনে নিতে পারা বাংলাদেশের জন্য অর্জন  বলবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × five =