টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই: ব্যবচ্ছেদ

সালেক সুফী

যখন সবাই পড়বেন তখন সবার জানা হয়ে যাবে টেস্টের ফলাফল। দেশের মাটিতে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অবধারিত ধবল ধোলাইয়ের মুখে বাংলাদেশ।  কাল চট্টগ্রামের সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অতিথি দল ৫১১ রানের একশ ছোয়া টার্গেট ছুড়ে দিয়েছিল। দিনশেষে ৬৮ ওভার ব্যাটিং করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬৮ রান করেছে বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৪ এবং তাইজুল ইসলাম ১০ রান করে উইকেটে আছে।  ব্যাবধান এখনো ২৪৩ রানের।

এই অবস্থা থেকে লড়াই করে ম্যাচ জয় বা পরাজয় এড়ানোর কথা স্বপ্ন কল্পনার বাইরে। হয়ত প্রথম সেশনেই ধবল ধোলাইয়ের কলঙ্ক তিলক বরণ করবে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে চেনা পরিবেশে বাংলাদেশ দলের এমন ভরাডুবি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, হবে।  বিশেষত বাংলাদেশ সাম্প্রতিক অতীতে দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জিতেছে, শক্তিশালী ভারত দলকেও ঢাকায় প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। কেন এমন বিড়ম্বনা? কেন এমন ছন্নছাড়া লাগলো বাংলাদেশ দলকে টেস্ট সিরিজে যখন সাদা বলের ওডিআই এবং টি২০ সিরিজে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে দুটি দল।

যদি দেখেন দুটি দলের দলীয় ভারসাম্য, টেস্ট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা।  ব্যাবধান যোজন যোজন।  ২০২৪ সালে অন্তত ১০টি টেস্ট খেলার সূচি থাকলেও দীর্ঘ পরিসরের  উন্নতমানের ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুতি নেয়নি বাংলাদেশ। পক্ষান্তরে দেশের মাটিতে কিছু দিন আগেই জিম্বাবুয়ে এবং আফগানিস্থানের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ খেলে এসেছে শ্রীলংকা।

এবারে সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে এবং চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে যে ধরনের উইকেটে টেস্ট দুটি অনুষ্ঠিত হল সেই ধরনের উইকেটে বাংলাদেশে কখনো ঘরোয়া ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়নি। নানা কারণে অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রাহিম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন দলে না থাকায় অপেক্ষাকৃত নবীন দল নিয়ে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অভিজ্ঞ সাকিব খেলেছে দ্বিতীয় টেস্টে। মূলত সাদা বলে খেলা তরুণ ক্রিকেটারদের হঠাৎ করে দীর্ঘ পরিসরের টেস্ট ক্রিকেটে অপরিচিত উইকেটে মানিয়ে নেওয়া এতো সহজ নয়। পরিণতি যা হবার তাই হয়েছে। আমি খেলোয়াড়দের ব্যাক্তিগত নৈপুণ্যের ঘাটতির চেয়েও আতংকিত হওয়া, অভিজ্ঞতার কারণে চাপের মুখে মুষড়ে পড়াকে দায়ী করবো।

যাহোক যা লিখলাম সেগুলো অজুহাত হিসাবে দাঁড় করবো না। সিরিজ ধবল ধোলাই আবারো প্রমাণ করলো আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট মানের আকাশ পাতাল ব্যাবধান।  যে কথা অবলীলায় স্বীকার করেছে খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা মোমিনুল হক, জাকির হাসান।

আমি দুই ভেন্যুর উইকেটকে সাধুবাদ জানাবো।  ঢাকার নিচু, ধীর গতির, ঘূর্ণি উইকেটের পরিবর্তে স্পোর্টিং উইকেটে খেলে বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেললেও এই ধরনের উইকেটে নিয়মিত বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা হলে দীর্ঘ পরিসরে সুফল মিলবে। দেখুন দুই টেস্টের প্রথম তিন ইনিংসে বাংলাদেশ ২০০ রান করার আগেই গুটিয়ে গেছে।  নাদানের মত ব্যাটিং করে একের পর এক উইকেট বিসর্জন দিয়েছে।  কিছু আউট ছিল দৃষ্টিকটূ।

কাল কিন্তু বিশাল টার্গেট সামনে রেখে ১-৯ সব ব্যাটসম্যান উইকেটে স্থিতু হয়েছে। অথচ মোমিনুল, লিটন, সাকিব, জাকির জয় কেউ ইনিংস বড় করতে পারেনি। একমাত্র মোমিনুল ৫০ করেছে, ৪৪ রানে অপরাজিত আছে মিরাজ। অথচ একই উইকেটে শ্রীলংকা প্রথম ইনিংসে ৬ জন ব্যাটসম্যান ৫০ উর্ধ্ব ইনিংস খেলে ৫১১ রানের নতুন মাইলফলক স্থাপন করে টেস্ট ম্যাচটি বাংলাদেশের ধরা ছোয়ার বাইরে নিয়ে গেছে।  দুই দলের বাটিংয়ের বিশাল ব্যাবধান সিরিজ ভরাডুবির অন্যতম প্রধান কারণ।

আমি দুই দলের বোলিং শক্তির পার্থক্য দেখি না। তবে বাংলাদেশ এই সিরিজে দুইজন মেধাবী নবীন পেসারকে অভিষেক করিয়েছে।  নাহিদ রানা এবং হাসান মাহমুদ দুইজনই অভিষেকে বিপুল সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে। পেস বোলারদের সহায়তায় বাংলাদেশের স্লিপ ক্যাচিং আন্তর্জাতিক মানের হলে সিরিজে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে থাকতো।

বাংলাদেশের এই ভূমিধস পর্যায়ে হতাশা আছে।  তবে দলটি তারুণ্য নির্ভর। প্রথমবারের মত খেলেছে পেসবান্ধব স্পোর্টিং উইকেটে। সিরিজে যা কিছু অর্জন সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।  তামিম যদি একান্তই দেশের হয়ে খেলতে না চায় সরাসরি ঘোষণা দিয়ে অবসর গ্রহণ করতে পারে।

সাকিব ,মুশফিক অন্তত আরো দুই বছর টেস্ট ক্রিকেট খেলা উচিত। বাংলাদেশের পেস ব্যাটারি এখন সমৃদ্ধ। তরুণ ব্যাটসম্যানদের স্কিল আছে, ঘাটতি টেস্ট টেম্পারমেন্ট, পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া। তরুণ দলটির উপর ভরসা রাখা যায়।  দুই বছর পর এরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হিসেবে জয় উপহার দিবে। ঘরোয়া দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের অনেক মান উন্নয়ন জরুরি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × two =