ডাচ -বাংলা টেস্ট সিরিজ: চট্টগ্রাম টেস্টে কি করতে পারে বাংলাদেশ?

সালেক সুফী

নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারলে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জমজমাট ক্রিকেট লড়াই উপভোগ করতো বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিকরা। পারে নি বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মেরুদন্ড বিহীন নাদানের মত ব্যাটিং করে ১০৬ রানে গুটিয়ে যাবার কারণেই মূলত দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করার স্বপ্ন গুড়িয়ে গেছে চতুর্থ দিন সকালে শেষ  উইকেটে ফুৎকারে উবে যাওয়ায়। ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার নবীন খেলোয়াড় সম্পৃক্ত দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জয় অধরা থেকে গাছে। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে  (০-১) পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট খেলবে ২৯ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চোধুরী স্টেডিয়ামে। দুই দলের শক্তিমত্তার ব্যবধান বিবেচনায় অনেকের শঙ্কা আরো একটি ধবল ধোলাইয়ের সম্ভাবনায় বাংলাদেশ। মাথা থেকে কথাটি ভাবলেও মন চাইছে বাংলাদেশ যেন প্রথম টেস্টের ভুলত্রুটিগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্তত নিজেদের সেরা দল নিয়ে লড়াই করে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখে। ব্যাটসম্যানরা যেন নিজেদের প্রয়োগ করে ব্যাটিং করে নিজেদের উইকেটের মূল্য দেয়। যুদ্ধ না করে কোনোভাবে যেন পরাজয় বরণ না করে।

সবাই জানে ঘরোয়া দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট অবকাঠামো নাজুক থাকায় স্বীকৃতি লাভের ২৪ বছর পরেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পায়ের তলে শক্ত জমিন সৃষ্টি হয় নি। তবুও এই দলটি যখন ভালো খেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে ওদের ধবল ধোলাই করলো অনেকের মত আমরাও দলটি নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলিয়াম। কিন্তু ভারত সফরে বিশ্বসেরা ভারত দল যেভাবে টেস্ট এবং টি ২০ সিরিজে বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করেছে তা থেকে হয়ত দলটির আত্মবিশ্বাস দুমড়ে মুচড়ে গেছে। সেখান থেকে মুক্ত হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মত পেশাদারিত্ব বাংলাদেশ অর্জন করে নি। আর তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে সহসা বেশি কিছু আশা করা দুরাশায় পরিণত হওয়াই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের টেকনিক এবং টেম্পরামেন্টে ত্রুটি আছে। এগুলো টেস্ট পর্যায়ে নতুন করে শেখার কিছু নেই। দুই ইনিংসে যেভাবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ বা কেশব মহারাজের বাম হাতি স্পিন আক্রমণের মুখে আত্মাহুতি দিয়েছে কোনো ব্যাখ্যা কি আছে তার? সাদমান ইসলাম, মোমিনুল  হক, নাজমুল শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস লজ্জা পাবার কথা ভিডিও ফুটেজ দেখে। একই উইকেটে অতিথি দলের কাইল ভেরিন, উইলান মুলডার নিজেদের উজাড় করে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে মেহেদী মিরাজ, অভিষিক্ত জাকের আলী অনিক কি প্রমান করে নি উইকেটে দৈত্য দানব ছিল না। বাংলাদেশ এভাবে টেস্ট খেলতে থাকলে অচিরেই টেস্ট ক্রিকেটের কুলিং আসরে বাংলাদেশের টিকে থাকা দায় হবে। আরো সংকট আন্তর্জাতিক আসর থেকে পঞ্চ পাণ্ডবের বিদায়ের পর ওদের সম মানের প্রতিস্থাপক উঠে আসে নি। দেশে মানসম্মত ক্রিকেট প্রতিভার দারুন অকাল। আসবে কোথা থেকে দেশের ক্রিকেট অবকাঠামো খুব নাজুক। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট অবকাঠামো থেকে ম্যান সম্পন্ন ক্রিকেটার সৃষ্টির সুযোগ নিতান্তই সীমিত। এই বিষয়ে বিসিবির কার্যক্রম দারুন ভাবে প্রাণ বিদ্ধ।

আপাতত চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে ভাবি। বাংলাদেশকে অবশ্যই টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে ভাবতে হবে। মাহমুদুল হাসান জয় উভয় ইনিংসে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাদমানকে আতংকিত মনে হয়েছে। মোমিনুল, শান্ত, মুশফিক, লিটন ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছে। জানিনা কি বিকল্প আছে বাংলাদেশের। জাকির হাসানকে দলে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। আর মেহেদী হাসান মিরাজকে কোনো ভাবেই ৫ র নিচে ব্যাটিং করানো উচিত হবে না, দলের বিপন্ন মুহূর্তে বারবার ত্রাতার ভূমিকায় উত্তীর্ণ হয়ে মিরাজ নিজের ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনের দাবি জোরদার করেছে। আমার মনে হয় না একই ভুল মোমিনুল, মুশফিক বা লিটন করবে। তবে নাজমুল শান্তর ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোনো ফরম্যাটেই শান্ত রান পাচ্ছে না। বাংলাদেশের মত দলে ক্যাপ্টেন কোথায় একজন খেলার অধিকার রাখে না। চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাট হাতে ব্যাতিক্রমী কিছু না করলে শান্তর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হবে বলা যায়।

আমি চট্টগ্রাম টেস্টে একজন বাড়তি পেসার খেলানোর পক্ষপাতী। সেটি হতে পারে নাহিদ রানা অথবা তাসকিন আহমেদ। আর যদি উইকেট স্পিন বান্ধব হয় সেই ক্ষেত্রে নাঈম হাসানের পরিবর্তে একজন বাম হাতি স্পিনার খেলানো যেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের বাম হাতি স্পিনের বিরুদ্ধে কিছুটা দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। যেহেতু ঐতিহ্যতভাবে চট্টগ্রাম উইকেট ব্যাটিং বান্ধব তাই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের অবশ্যই দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করে ৩৫০-৪০০ রান করে বোলারদের লড়াই করার সুযোগ দিতে হবে। নাহলে আবারো টেস্ট পরাজয় আর সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের বিড়ম্বনা সইতে  হবে। জানিনা ফারুক আহমেদ, নাজমুল ফাহিম এবং গাজী আশরাফের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটে কি গুণগত পরিবর্তন এনেছে? দেখুন ঐতিহ্য আছে বলেই বাংলাদেশের কাছে ধবল ধোলাই হয়েও কিভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × one =