তাপমাত্রা বাড়লে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে: ঢাবি ভিসি

বায়ুন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজনে এবং অন্যান্য ৯টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সহযোগিতায় গত শুক্রবার ২ দিন ব্যাপী প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন নিউজ সাংবাদিকদের দক্ষতা  বৃদ্ধি এবং আসন্ন কপ২৮ সংবাদগ্রহণের প্রস্তুতির জন্য “Journalism in the Age of Climate Action: COP28 Coverage Strategies and Mentoring” শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার অনুষ্ঠিত হয়। জলবায়ু সম্মেলন কাভার করতে ইচ্ছুক এবং অংশগ্রহণ করবেন এমন অর্ধশতাধিকের বেশি সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীর দক্ষতা উন্নয়ন ও মেনটরিং কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ৪২ জন প্রিন্ট মিডিয়া, ১৯জন টিভি রিপোর্টার, অনলাইনে আরো ২৫জন অংশগ্রহণ করেন।

পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ.এস.এম মাকসুদ কামাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি। কর্মশালার প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান এবং স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে এখন ছয় ঋতু খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা এখন বছরের ৯ মাস উত্তাপের মধ্যে কাটাই। শীতের প্রকোপও পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমরা অনুভব করি

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশে তাপমাত্রা আরো ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট বাড়লে বরেন্দ্র অঞ্চলে যে খরা হয় তা ক্রমান্নয়ে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এতে খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে বিগত জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে (কপ) আলোচনা হলেও ফান্ড নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে ও কোথাও কমছে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের কর্ম ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তার জন্য যে অর্থায়ন প্রয়োজন তা কে দিবে? বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের সপ্তম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দাবিদার দেশটি আমাদের নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই আমরা বসবাস করি না কেন ধনী দেশগুলো যদি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে ক্ষতিপূরণ না দেয় তা হলে কোন লাভ হবে না। এ জন্য প্রয়োজন তথ্যপ্রবাহের বিপ্লব যেখানে বাংলাদেশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং জলবায়ু বিপর্যয় এর যুগে বসবাস করছি। চীনের পর ২য় সর্বোচ্চ সংখ্যক জলবায়ু উদ্বাস্তু বাংলাদেশে রয়েছে। এতটুকু আয়তনের ব-দ্বীপের ২৫% বিলীন হয়ে গেলে, সেই অসহায় মানুষদের কী হবে! জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব বাংলাদেশের উপর সবচেয়ে বেশি তাই আমাদের এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, সাংবাদিকদের প্রস্তুত করতে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ক্যাপস এবং পিআইবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, একটি উন্নয়নশীল এবং ডেলটা ব-দ্বীপ দেশ হিসেবে জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই যৌক্তিক। কপ-এ সকল দেশের প্রতিনিধিরা এক মঞ্চে উপস্থিত হন, তাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিক গোষ্ঠী পারেন এ দেশের মানুষের যৌক্তিক দাবিকে যথাস্থানে তুলে ধরে প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন জলবায়ু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদেরকে এই পরিবর্তনশীল জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রোজেক্ট অব এনালাইসিস এর সাথে থিওরি অব চেঞ্জ কে প্রয়োগ করতে হবে। যে দেশগুলো ক্ষতিপূরণ নিয়ে বসে আছে, যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যম আমাদেরকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে আনতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যেতে হবে।

ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সংকট দেখছি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা সমাধানে তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন হলো তরুণদের একটি এজেন্ডা যার সমাধান তরুণদের দ্বারা এবং তরুণদের জন্যই হবে। তরুণরা জলবায়ু সমস্যা সমাধানের ফ্রন্টলাইনার হলেও প্রায়শই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাদের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয় না। কপ২৮ সম্মেলনে তরুণদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম দিনে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত, সিপিআরডি এর প্রধান নির্বাহী জনাব মো. শামসুদ্দোহা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম) এর নির্বাহী সমন্বয়ক ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এর প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার চট্টগ্রামের ব্যুরো চীফ সামছুদ্দিন ইলিয়াস, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার ও যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি মো. মাহফুজুর রহমান মিশু।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সহযোগী আয়োজক হিসেবে ছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি), চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, লিগ্যাল বি, লিগ্যাল ফোরাম বাংলাদেশ, নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম), পরিবেশ উদ্যোগ, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম (এসএসিসিজেএফ) এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

ten + five =